মওকুফের ঘোষণা দিয়েও বিভিন্ন ফি আদায় করছে ঢাবি

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ বন্ধ ঘোষণা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকাকালীন শিক্ষার্থীরা পরিবহন সেবা ও আবাসন সুবিধা নেননি। তবুও পরের বছর ভর্তির সময় এসবের ফি দিতে বাধ্য করা হয় তাদের।

হলে না থাকার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ব্যবহার না করার পরও বিশ্ববিদ্যালয় ফি নেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন থেকেও এর প্রতিবাদ জানানো হয়। প্রতিবাদের মুখে ফি মওকুফের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ফি মওকুফের ঘোষণা দিয়ে ঢাবি কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকারের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শিক্ষার্থীদের সীমাবদ্ধতা ও চাহিদা বিবেচনা করে ২০২০ সালের মার্চ থেকে শুরু করে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম আরম্ভ না হওয়া পর্যন্ত সময়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ফি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আবাসিক ফি মওকুফ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে যে শিক্ষার্থীরা ফি পরিশোধ করেছেন, তা যথাসময়ে সমন্বয় করা হবে।’ ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু চালু হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব পরিচালক দপ্তর সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীপ্রতি পরিবহন ফি ১ হাজার ৮০ টাকা এবং আবাসন ফি হলভেদে ৩০০-৬০০ টাকা। এসব ফি আদায় হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় দাঁড়াত ৪ কোটি ২৪ লাখ ৪৪ হাজার ৮৮ টাকা। যার মধ্যে পরিবহন ফি ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা এবং সিট ভাড়া ৪৬ লাখ ৪৪ হাজার ৮৮ টাকা। উপাচার্যের নির্দেশে এ অর্থ মওকুফ করা হয়। যারা ফি পরিশোধ করেছেন, পরেরবার ভর্তির সময় তাদের এ টাকা সমন্বয় করা হবে বলে জানিয়েছিল হিসাব পরিচালক দপ্তর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বক্তব্য এখনো কার্যকর হয়নি। পরবর্তী ভর্তির সময় মওকুফের এ টাকা সমন্বয় করা হয়নি। এ বিষয়ে কলা, সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, বিজ্ঞান ও আইন অনুষদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এমনটিই জানিয়েছেন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা এ টাকা সমন্বয়ের দাবি জানিয়েছেন।

নানা জটিলতার কারণে এ টাকা সমন্বয় করতে বিলম্ব হচ্ছে বলে স্বীকার করেছে কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিভাগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে এ টাকা পোঁছে দেওয়া হবে। এই সংক্রান্ত একটি ফাইল উপাচার্যের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘এটি খুবই দুঃখজনক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবকহীনতার আচরণ। একইসঙ্গে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বরখেলাপ বলে আমরা মনে করি। এটি যদি সমন্বয় না করা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় যদি পুনর্বিবেচনা না করে, সেক্ষেত্রে আমরা নতুন করে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে প্রশাসনকে বিবেচনা করতে বাধ্য করব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হিসাব পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন বিভাগের সর্বমোট ১৯ হাজার শিক্ষার্থী এ টাকা পাবেন। কেউ অফলাইনে টাকা জমা দিয়েছেন, কেউবা অনলাইনে জমা দিয়েছেন। আবার কারো রেজিস্ট্রেশন নম্বর নেই। একটা একটা করে খুঁজে বের করতে হচ্ছে। সব মিলে বেশ কিছু জটিলতা থাকায় বিলম্ব হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা এ টাকা বিভাগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দিয়ে দেব। শিক্ষার্থীরা টাকা ফেরত পাবে এটা নিশ্চিত।’