ট্রাকের চাকা ঘুরছে না, সবজি নিয়ে বিপাকে কৃষক

দেশে চলমান ধর্মঘটে খুলনার সবজি ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত খুলনা ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষকরা সবজি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। সময় মতো ঢাকাসহ অন্য জেলা থেকে পাইকার না আসায় কাঁচামাল বিক্রি হচ্ছে না।

এতে সবজির দাম পড়ে গেছে। ন্যায্যমূল্য না পেয়ে দিশেহারা উপজেলার হাজার হাজার কৃষক। সবজির দাম কমে যাওয়ায় অনেক কৃষকের ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
শনিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ডুমুরিয়ার একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সবজি চাষে মহাজনদের কাছ থেকে আনা সার, বীজ, কীটনাশক ও ক্ষেতে পানি দেওয়ার টাকা পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেক কৃষক।

তারা জানান, ট্রাক ও পিকআপভ্যানের ধর্মঘটের কারণে শাক-সবজি পরিবহনে মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের। ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় শাক-সবজিসহ বিভিন্ন কাঁচামাল এক জেলা থেকে অন্য জেলায় এমনকি জেলার অভ্যন্তরেও পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছে না। ডুমুরিয়া সদর ইউনিয়নের খলশী গ্রামের কৃষক সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শেখ মাসুদ রানা শান্ত বলেন, ট্রাক না চলায় শিম ঢাকায় পাঠাতে পারছি না। শিমের দাম তিন দিন আগে পাইকারী ১শ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। এখন সেটা ৭০ টাকা হয়েছে। তার ওপর ডিজেলের দাম বেড়েছে। সামনে আসছে বোরো মৌসুম। এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো অত্যন্ত অমানবিক সিদ্ধান্ত। এতে বিপাকে পড়বে কৃষক।

খর্ণিয়া গ্রামের আবু হানিফ মোড়ল বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে ঢাকাসহ কোন জেলায় তরকারি পাঠানো যাচ্ছে না। এর কারণে ক্ষেতে ফসল পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ঢাকায় সবজি পরিবহনে আগের চেয়ে ১০-১২ হাজার টাকা বেশি চাচ্ছে ট্রাকের মালিকরা।

তিনি আরও বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে পাইকারী ১২০ টাকার শিম ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। ফুলকপি ৭৫ টাকা থেকে কমে ৪০ টাকা, লালশাক ২৫ থেকে ১৫ টাকা, পটল ৩৬ টাকা থেকে কমে ১৫ টাকা হয়েছে।

ডুমুরিয়া সদর ইউনিয়নের গোলনা গ্রামের মো. ইমন খান বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে পেয়ারা ৪০ থেকে কমে ৩০ টাকা কেজি হয়েছে। শিম বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, মাল্টা নিয়েও বিপাকে পড়েছেন কৃষক। ধর্মঘটে সীমহীন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, খুলনা জেলার নয় উপজেলার মধ্যে আগাম শীতকালীন সবজি সবচেয়ে বেশি হয়েছে ডুমুরিয়া উপজেলায়। গুটুদিয়া, খর্ণিয়া, খলশী, গোলনা, চুকনগর, থুকরা, ভদ্রদিয়া, বরাতিয়া, নরনিয়া, কাঠাঁলতলাসহ বিভিন্ন গ্রামের চাষিরা শীতকালীন সবজি চাষ করেছেন। মূলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাক, লাউসহ শীতকালীন সবজির উৎপাদনও ভালো হয়েছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় শীতকালীন সবজি চাষ লাভবান হওয়ায় কৃষকরা প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আগাম চাষ করেছেন। প্রথম দিকে দামও ভালো পেয়েছেন। হঠাৎ করে পরিবহন ধর্মধটের কারণে গত দুইদিন ধরে সবজির দাম কমে গেছে। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন প্রান্তিক চাষীরা।

ডুমুরিয়া উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার শেখ আবু হুরায়রা বলেন, ডুমুরিয়া উপজেলার ১৭৫০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়েছে। বাজারে এখন শীতকালীন যেসব সবজি পাওয়া যাচ্ছে তা আগাম জাতের। ধর্মঘটের কারণে পণ্য পরিবহনের খরচ বেড়েছে এতে বিপাকে পড়েছে কৃষক।