নারীদের বিদেশ যাওয়ার প্রলোভন, নগদ টাকার ফাঁদ পাচারকারীদের

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:

বিদেশে বিভিন্ন ড্যান্স ক্লাব ও বাসাবাড়ীতে ভালো বেতনে কাজের সুযোগ দেয়া, নিজেদের উদ্যোগে পাসপোর্ট থেকে শুরু করে সকল কাজ সম্পন্ন করাসহ দেয়া হতো নগদ টাকা। কোনো কারণে যতে না চাইলে দেয়া হতো নানান হুমকি। সম্প্রতি আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা এ তথ্য জানিয়েছেন।

ড্যান্স ক্লাবে চাকরির জন্য প্রতি মাসে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হবে এমন প্রতিশ্রুতি দেয় ওই দেশের জিয়া নামের এক ব্যক্তি। এ ছাড়া পাসপোর্ট ও ভিসার কাজ সবই তার বাংলাদেশে এজেন্ট শহিদুলের মাধ্যমে করিয়ে দিয়েছে। এমনকি বিদেশ যাওয়ার আগে আমাকে ৩০ হাজার টাকাও দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে একবার পাঠানোর চেষ্টা করে। ইমিগ্রেশন থেকে আমাকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে হুমকি দিতে শুরু করে জিয়া ও তার এজেন্টরা’—বলছিলেন দুবাইয়ের মানবপাচারকারীদের হাত থেকে উদ্ধার হওয়া খুলনার মনিরা (ছদ্মনাম)।

মনিরা আরও বলেন, ‘ওরাই টিকিট ও ভিসার কাজ সম্পন্ন করে আমাকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেয়। কিন্তু ভিসায় সমস্যা থাকায় ইমিগ্রেশন থেকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয় আমাকে। তারপর বাড়ি চলে যাই। বিদেশ যাবো না বলে ঠিক করি। কিন্তু শহিদুল আমার বাবা-মাকে বিভিন্নভাবে বাড়িতে গিয়ে বুঝিয়েছে। ঢাকায় যখন আসি তখন আমাদের একটি হোটেলে রাখা হয়। পরে জানতে পারি আমার মতো আরও অনেক মেয়েকেই ওরা বিদেশ যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা দিচ্ছে। আমাকে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছে। অনেককে ৫০ হাজার টাকাও দিয়েছে।’

জিয়ার সঙ্গে পরিচয়ের বিষয়ে মনিরা বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশেরই এক আপা দুবাইতে ড্যান্স ক্লাবে কাজ করে বলে আমাকে জানায়। তিনি বলেন, আমিও যাবো কিনা, পাসপোর্ট হয়েছে কিনা। আমি বলি আমার পাসপোর্ট নেই। উনি বলেন, তুমি যেতে চাইলে পাসপোর্ট করিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারি। সেই আপা জিয়ার সঙ্গে আমাকে মোবাইলে পরিচয় করিয়ে দেয়। তারপর জিয়া তার এজেন্ট শহিদুলের মাধ্যমে আমাকে পাসপোর্ট করিয়ে দেয়। পরে আর ওই আপার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। যতদূর জানি তিনি দুবাই চলে গেছেন।’

‘আমি তাদের বলি, টাকাটা শোধ করে দেবো। আমাকে সময় দেওয়া হোক। তারা মানতে নারাজ। আমাকে একের পর এক হুমকি দিতে থাকে। পরে আমি গ্রাম থেকে ঢাকায় আসি। ঢাকায় আসার পর মালিবাগে আমাকে একটি হোটেলে রাখা হয়। সেখানে করোনার টেস্ট করিয়ে ২০ নভেম্বর রাতে ফ্লাইটে উঠিয়ে দেওয়ার কথা বলে। তখনই র‌্যাব সদস্যরা আমাকে হোটেল থেকে উদ্ধার করে।’

র‌্যাব-১ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, ‘দুবাইতে বসে বাংলাদেশে মানবপাচারকারী চক্রের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে জিয়া। এরইমধ্যে তার এজেন্ট শহিদুলকে গ্রেফতার করেছি। তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। পাচারচক্রে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের নামও পেয়েছি। চক্রটি মূলত নারীদের বিদেশ যাওয়ার প্রলোভন দেখানোর পাশাপাশি নগদ টাকার ফাঁদেও ফেলতো। এটি তাদের প্রতারণার কৌশল।’