কোথা থেকে আসছে ফুটপাতের শরবতের পানি?

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: প্রখর রোদে ক্লান্ত শরীর জুড়াতে ঠান্ডা শরবতের বিকল্প নেই। শ্রমজীবী মানুষসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লান্তি দূর করতে নানা স্বাদের শরবত পান করেন। তৃষ্ণা মেটাতে অনেকেই রাজধানীর ফুটপাতের শরবতের উপরেই নির্ভর করেন। তবে এসব শরবতের পানি এবং বরফ কোথা থেকে আসে? কতটা স্বাস্থ্যকর এই শরবত? এসব না জেনে অনেকেই নিয়মিত পান করছেন শরবত নামের অস্বাস্থ্যকর পানীয়।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ফুটপাত থেকে শুরু করে রাজধানীর ছোট-বড় জুস বারে ঠান্ডা পানীর শরবত তৈরীতে ব্যবহার হচ্ছে মাছের বরফ। খাবার অনুপযোগী এসব বরফ তৈরী হয় দূষিত পানি আর অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে। এছাড়া ওয়াসার লাইনের পানি ব্যবহার করা হয় এসব শরবতে।

চিকিৎসকরা বলছেন, সাপ্লাই পানি পরিশোধন বা না ফুটিয়ে সরাসরি শরবতে ব্যবহার করে পান করলে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এতে বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগ হতে পারে।

নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে রাজধানীর স্কুল-কলেজের সামনে ভ্রাম্যমাণ ফুটপাতের এসব শরবতের দোকানে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এণ্ড কলেজের সামনে কয়েকটি শরবত, ফুঁচকা এবং ঝালমুড়ির দোকানে অভিযান চালানো হয়।

অভিযানের নেতৃত্ব দেন অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান ও সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল এবং ঢাকা মেট্রো কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মাগফুর রহমান।

শরবতের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, পাশের রেল কলোনী থেকে লাইনের পানি এনে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া শরবতে যে বরফ দেওয়া হচ্ছে তা স্থানীয় বরফ কল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। যদিও দোকানী দাবি করছেন, এসব বরফ ভালো পানি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিক কোন প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি।

স্থানীয়রা জানান, এসব বরফ মাছের আড়ৎ থেকে আনা হয়েছে। ফিল্টার পানি বললেও এসব পানি স্থানীয় ওয়াসার সাপ্লাই লাইন থেকে নিয়ে আসা।

অভিযানে দেখা যায়, শরবত দোকানীর হাতে ঘাঁ ধরে গেছে। ক্ষত হাত দিয়েই তৈরি করছেন শরবত। এছাড়া শরবতে যে লবণ ব্যবহার করা হচ্ছে তার কোনো মেয়াদ নেই। রাস্তার ধুলা-বালি এসে পড়ছে এসব শরবতে।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এণ্ড কলেজের সামনের ফুটপাতের এসব শরবতের বেশির ভাগ ক্রেতা শিক্ষার্থী। এছাড়া, রিকশাচালকরাও এসব শরবত পান করেন।

ফুঁচকার দোকানে গিয়ে যায়, অপরিচ্ছন্ন এবং নোংরা অবস্থায় বিক্রি করা হচ্ছে এসব ফুঁচকা। ক্রেতাদের যে টক দেওয়া হচ্ছে তাও বানানো হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর ভাবে।

শরবত, ফুঁচকা এবং ঝালমুড়ি ওয়ালাদের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে এসব অপরাধে প্রাথমিক ভাবে কোনো শাস্তি না দিয়ে সতর্ক করে ভোক্তা অধিদপ্তর। যাতে স্কুল-কলেজ সংলগ্ন এলাকা পরিহার করে এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে শরবত এবং ফুঁচকা বিক্রি করেন তারা।

মেডিসিন স্পেশালিস্ট ডা. রেজাউল করিম বলেন, যেসব বরফ মাছ বা অন্যান্য পণ্য সংরক্ষণের জন্য তৈরী হয়, তা খাবার অনুপযোগী। এসব বরফ যদি সাপ্লাইয়ের পানি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়, তা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কারণ এই বরফ শরবতের সঙ্গে মিশে গলে যায়। এর ফলে ডায়রিয়া, টাইফয়েডসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ হতে পারে। এমনকি ক্যানসারের মতো মরণব্যাধিতেও মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। তাই সরকারের খাদ্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর আরও জোড়ালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে যারা এসব খাবার খান, তাদের সচেতনতাও জরুরি।