মসলার বাজার নিয়ন্ত্রণে এবার কঠোর অভিযানে নামবে ভোক্তা অধিদপ্তর

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: আদা-রসুন, গরম মসলার বাজার নিয়ন্ত্রণে সোমবার থেকে সারাদেশে কঠোরতর অভিযানে নামবে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

রোববার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে এ কথা বলেন ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

গরম মসলার মূল্য ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে পাইকারি এবং খুচরা ব‍্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

সভায় পাইকারী ও খুচরা পর্যায়ে পাকা রশিদ না থাকলে দোকান বন্ধসহ সরাসরি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

শুরুতেই রাজধানীর শ্যামবাজার এবং মৌলভীবাজারের পাইকারী মসলার বাজার দর নিয়ে বিভিন্ন তথ্য দেন অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান ও সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল।

তিনি বলেন, ‘পাইকারী বাজারের ১২৯ টাকা কেজির আদা খুচরা বাজারে ১০০ টাকারও বেশি লাভ করে বিক্রি করা হচ্ছে। ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা এজেন্ট হিসেবে ব্যবসা করেন। তাদের কাছে কোনো ক্যাশ ম্যামো পাওয়া যায় না। মৌখিক ভাবে তারা দাম নির্ধারণ করেন।’

আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ‘মৌলভীবাজারের অনেক মসলার দোকানে মূল্য তালিকা থাকে না। ব্যবসায়ীরা যেখান থেকে মসলা কিনেছেন তাদের কোনো ক্রয় ভাউচার থাকে না। কোন জায়গা থেকে মসলা কিনেছেন নামগুলো ব্যবসায়ীরা বলতে চান না। অর্থাৎ নিজেরাই মূল্য নির্ধারণ করেন।’

অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ ভার্চুয়ালি সংযুক্ত থেকে খাতুনগঞ্জের মসলার বাজার সম্পর্কে সভাকে অবহিত করেন। 

তিনি বলেন, ‘সেখানে চায়না আদা মার্কেটে তেমন নেই আর বার্মিজ ও ভারতীয় আদা ১৮০-১৯০ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। যা খুচরা বাজারে ২২০-২৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-আযহার জন্য পর্যাপ্ত মসলার মজুদ রয়েছে।’

বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের যুগ্ম প্রধান মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আদা-জিরাসহ আমদানিকৃত মসলার আমদানি মূল্যের সঙ্গে বিক্রয় মূল্যে বেশ অসঙ্গতি রয়েছে। যা অধিকতর পর্যালোচনার প্রয়োজন।’

নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি, শ্যামবাজার, কাওরান বাজার, মিরপুর শাহ আলী মার্কেটসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, পাড়া-মহল্লার দোকানে মসলার বাজারে পর্যাপ্ত শৃঙ্খলা নেই, যা সামগ্রীক ভাবে মসলার বাজারে প্রভাব ফেলছে। 

তাদের মতে, পোর্টে মসলা খালাসের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় লাগে যা মসলার মূল্য বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে। এছাড়াও পাইকারি ব্যবসায়ীরা খুচরা ব্যবসায়ীদের ক্রয় রশিদ প্রদান করছেন না। 

এক্ষেত্রে খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারী বাজার কঠোর ভাবে তদারকির অনুরোধ জানান।

কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর বাজার বিশ্লেষক কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, ‘মসলার খুচরা ও পাইকারী বাজারে মূল্যের অসঙ্গতি রয়েছে। এছাড়াও সুপার শপগুলোতে দেখা যায়, তারা পাইকারী বাজার থেকে মসলা সংগ্রহ না করে বিভিন্ন ভেন্ডরের মাধ্যমে সংগ্রহ করছেন। এতে একাধিক হাত বদলের মাধ্যমে মসলার মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও পার্বত্য অঞ্চলের আদা, চায়না আদা নামে বিক্রির মাধ্যমে ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে অধিদপ্তরকে তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।’

এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলের বা বার্মিজ বা ভারতীয় আদা, চায়না আদা নামে বিক্রি হচ্ছে কি না তা অভিযানে খতিয়ে দেখা হবে। আসন্ন ঈদে মসলার বাজার নিয়ে কেউ কারসাজি করলে কঠোর ভাবে তা দমন করা হবে। কেউ মসলার অবৈধ মজুদের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

তিনি বলেন, ‘মসলার আমদানিকারক এলসিতে যদি মসলার প্রকৃত মূল্য কমিয়ে প্রদর্শন করে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে খতিয়ে দেখা হবে। সুন্দর মোড়কের নামে মসলার মূল্য বৃদ্ধি করা হলে সেটাও তদারকি করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পোর্টে মসলা খালাসের ক্ষেত্রে সমস্যার বিষয়ে আমাদের অবহিত করলে তা সমাধানের জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব।’

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-আযহায় মসলার বাজার স্থিতিশীল রাখতে সোমবার থেকে অধিদপ্তর কর্তৃক সারাদেশব্যাপী মসলার বাজার নিবিড় ভাবে মনিটরিং করা হবে এবং আমরা এক সপ্তাহ সেটা নজরদারিতে রাখব। গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তথ্য নিয়ে এবং আমাদের মনিটরিং এর প্রাপ্ত তথ্য সমন্বয় করে একটি প্রতিবেদন সরকারের নিকট তুলে ধরা হবে।’

অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ‘পাইকারী ও খুচরা পর্যায়ে কোনো দোকানে যদি পাকা রশিদ না পাওয়া যায় তাহলে একদিন থেকে তিন দিনের জন্য দোকান বন্ধ করে দেওয়া হবে। সোমবার থেকেই কঠোর থেকে কঠোরতর অভিযান চালানো হবে।’

সভায় বিভিন্ন ধরনের মসলার মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, ক্রয় রশিদ সংরক্ষণ না করা, বিক্রয় রশিদ না দেওয়া কিংবা দিলেও কার্বন কপি সংরক্ষণ না করা, আমদানি সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র না থাকা, পাইকারি মূল্য ও খুচরা মূল্যের সামঞ্জস্য না থাকা, খাদ্যপণ্য আকর্ষণীয় করতে মসলার সঙ্গে ফুডগ্রেড রঙের পরিবর্তে শিল্পে ব্যবহৃত রং (টেক্সটাইল কালার) ব্যবহার করার বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।