করোনায় ভোক্তা চাহিদা কমলেও খাদি ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

কুমিল্লার ঐতিহ্যের স্মারক খাদি কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও করোনার কারণে তসে চাহিদা অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। করোনার হানায় বিপর্যস্ত কুমিল্লার খাদিশিল্প। ক্ষতি পোষাতে সম্প্রতি দোকানপাট খুলেছে। শুরু হয়েছে খাদিপণ্য বিক্রি। ব্যবসায়ীদের দাবি, ঈদবাজারের বর্তমান গতি অব্যাহত থাকলে তারা কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।

শতবর্ষের খাদিপণ্য তার গুণগতমান বজায় রেখে আধুনিকতার সংমিশ্রণে প্রতিযোগিতার বাজারে চাহিদা ধরে রেখেছে। পৃথিবীর যেখানে বাঙালি কমিউনিটি আছে সেখানে খাদি কাপড়ের প্রসার ঘটেছে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে খাদিসহ দেশি পণ্যের প্রদর্শনী করলে তা পণ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটাবে। সূত্র আরও জানান, খাদির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভারতবর্ষের স্বাধিকার আন্দোলন ও বাঙালি ঐতিহ্য। এ কাপড় খাদে (গর্তে) বসে তৈরি করা হয় বলে এর নাম দেওয়া হয় ‘খাদি’।

শতবর্ষের ঐতিহ্যের খাদি আলোচনায় আসে ১৯২১ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময়। তখন মহাত্মা গান্ধীর আহ্‌বানে সমগ্র ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলনে কুমিল্লায় খাদিশিল্প প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সে সময় বিদেশি পণ্য বর্জনের ডাক ওঠে। সর্বত্র এক আওয়াজ- ‘মোটা কাপড়-মোটা ভাত’। কুমিল্লার খাদি এখন শৈল্পিকতার ছোঁয়ায় দেশ-বিদেশে সমাদৃত। খাদির কাপড় যাচ্ছে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। এ সুনাম অর্জিত হয়েছে অনেক কারিগর ও ব্যবসায়ীর বহু বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে। খাদি কাপড়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন তাঁতি, সুতা কাটুনি, ব্লক কাটার ও রঙের কারিগর। সবাই মিলে তৈরি করেন নান্দনিক খাদি। 

বর্তমানে কুমিল্লায় দেড় হাজার পরিবার এ পেশায় জড়িত। মহানগরীতে খাদি কাপড়ের দোকান রয়েছে ৪ শতাধিক। খাদি কাপড় বিক্রির আলাদা মার্কেট রয়েছে মহানগরীর রাজবাড়ী এলাকায়।

করোনায় গত দুই বছরে খাদি ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সরকার সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে পারে।’ খাদিঘরের স্বত্বাধিকারী প্রদীপ কুমার রাহা বলেন, ‘করোনার কারণে দীর্ঘ সময় দোকান বন্ধ ছিল। অনেকে বন্ধ রেখেও স্টাফের বেতন দিয়েছেন। দোকান বন্ধ থাকলেও দিতে হয়েছে দোকানের ভাড়া। এতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমরা ঈদ বিক্রিতে ভালো লাভের আশা করছি।’