ঢাকায় সর্বোচ্চ করোনা, সিলেটে কলেরা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ একদিকে চোখ রাঙ্গাচ্ছে করোনা অন্য দিকে বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে পানিবাহিত রোগ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৮৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং মারা গেছেন ৩ জন। একই সময়ে শনাক্তের হার বেড়ে হয়েছে ১৫.৪৭ শতাংশ হয়েছে। একই সময়ে করোনায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।

শনাক্তের তথ্য বলছে, ঢাকায় শনাক্তের হার সবচেয়ে বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হওয়া ২ হাজার ৮৭ জনের মধ্যে ঢাকা শহরের আছেন ১ হাজার ৭৯৫ জন। এছাড়া ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৮৯৩ জন, ময়মনসিংহে ১৫জন, চট্টগ্রামে ১১২ জন, রাজশাহীতে ১১ জন, রংপুরে ৮ জন, খুলনায় ২১ জন, বরিশালে ২১ জন এবং সিলেট বিভাগে ৬ জন রয়েছেন।

এদিকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫০৭ জন। আর চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৪ জন, চোখের প্রবাহ ১৭জন আর অন্যান্য মিলিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৫২ জনে।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সিলেট বিভাগে ডায়রিয়ায় ৩১৯ জন, রংপুর বিভাগে ৬৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৫ জন আর ময়মনসিংহ বিভাগে ৯৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

গত ১৭ মে থেকে আজ মঙ্গলবার ২৮ জুন পর্যন্ত সারাদেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৫ হাজার ২৪৪ জন। মারা গেছেন এক জন। এর মধ্যে সিলেটে বিভাগে সর্বোচ্চ ডায়রিয়াসহ অন্যান্য রোগ মিলিয়ে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৯৩ জন।

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শ কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. তারিকুল ইসলাম বলেন,সংক্রমণ পরিস্থিতি দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রণে থাকার পর গত এক সপ্তাহ যে হারে রোগী শনাক্ত হচ্ছে, এটি চতুর্থ ঢেউয়ের ইঙ্গিত।

তিনি বলেন,দোকান, শপিংমল, বাজার, ক্রেতা-বিক্রেতা, হোটেল রেস্টুরেন্টে সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করতে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।

জাতীয় কারিগরি কমিটির ৬ নির্দেশনা হলো—

১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে সব গণমাধ্যমে অনুরোধ জানাতে হবে।

২. সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতি প্রয়োগ করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম যথাসম্ভব বর্জন করতে হবে।

৩. ধর্মীয় প্রার্থনার স্থানসমূহে (যেমন- মসজিদ, মন্দির, গির্জা ইত্যাদি) মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

৪. জ্বর, সর্দি, কাশি বা কোভিড-১৯ এর উপসর্গ দেখা দিলে কোভিড টেস্ট করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

৫. দোকান, শপিংমল, বাজার, ক্রেতা-বিক্রেতা, হোটেল-রেস্টুরেন্টে সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।

৬. স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজে খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন।

বন্যা প্রসঙ্গে ডা. তারিকুল ইসলাম বলেন, বন্যার পানি কমে গেলে সাধারণত বন্যা কবলিত এলাকায় ডায়রিয়ায় প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।

বন্যার কারণে সৃষ্ট রোগের সিংহ ভাগই হয়ে থাকে পানি ও খাবার থেকে। এ সময় কষ্ট হলেও বন্যার পানি পান পরিহার করতে হবে।

সম্ভব হলে আধা ঘণ্টা ফুটিয়ে পান করতে হবে, ফুটানো সম্ভব না হলে ১০ লিটার পানিতে ২টি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট (হ্যালোজেন ট্যাবলেট) আধা ঘণ্টা মিশিয়ে রাখলেই ওই পানি পানের উপযোগী হবে।

পচা ও বাসি খাবার গ্রহণ পরিহার করতে হবে, খাবার সব সময় ঢেকে রাখতে হবে। তাহলেই কলেরা বা ডায়রিয়া জীবাণু বহনকারী মাছি বা মশা এসব রোগ ছড়াতে পারবে না।

বাসস্থানের আশপাশে মলমূত্র ত্যাগে বিরত থাকতে হবে; এ সময় অবশ্যই সাবান, ছাই বা মাটি দিয়ে হাত পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।