দেশে আয় বৈষম্য বাড়ছে, নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজনঃ ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান

ঢাকা, ২২ জুন শনিবারঃ কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ২০১৯–২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে পর্যালোচনা তুলে ধরতে আজ শনিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা, ক্রেতাদের দেওয়া ভ্যাট সরকারের কোষাগারে যাওয়া নিশ্চিতকরণ, সঞ্চয়পত্রের উৎসে কর কমানো, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার, করমুক্ত আয়ের সীমা বৃদ্ধি, ব্যাংকে গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং ভোক্তা–বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেন।

সংবাদ সম্মেলনে ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান ছাড়াও, ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম সামসুল আলম, ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।

ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান

সম্মেলনে ক্যাব সভাপতির বাজেট বিষয়ক পর্যালোচনাটি পাঠকদের স্বার্থে হুবহু তুলে ধরা হচ্ছে।

২০১৯-২০ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে ১৩ জুন তারিখে উপস্থাপিত হয়েছে। মাননীয় অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতার এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাজেট উপস্থাপন সম্পন্ন করেন। বাজেটে ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫,২৩,১৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২,০২,৭২১ কোটি টাকা। অবশিষ্ট অর্থ সরকারের নিয়মিত কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ব্যয় হবে। প্রস্তাবিত ব্যয় মেটানোর জন্য কর ও অন্যান্য খাত থেকে ৩,৭৭,৮১০ কোটি টাকা আয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ১,৪৫,৩৮০ কোটি টাকার ঘাটতি ঋণ ও অনুদান থেকে মেটানো হবে। আগামী অর্থ বছরে সরকার ব্যাংক থেকে ৪৭,৩৬৪ কোটি এবং জনসাধারণের নিকট সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে ৩০,০০০ কোটি টাকা ঋণ সংগ্রহ করবে আর বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের প্রাক্কলিত পরিমাণ ৬৩,৮৪৮ কোটি টাকা।

বাজেট কি শুধু সরকারের আয়-ব্যয়ের প্রাক্কলন? না, তা নয়। বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার দেশকে উন্নয়নের পথে পরিচালিত করে, মানুষের আয়-উন্নতির পথ সুগম করে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে, মানব সম্পদ ও অবকাঠামো উন্নয়নের পথ সুগম করে, সামাজিক সুরক্ষা বলয় সম্প্রসারণ এবং আয় বৈষম্য হ্রাসের উদ্যোগ গ্রহণ করে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও অর্থনীতিকে বেগবান করে কল্যাণমুখী সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

আলোচনা পর্যালোচনার পর প্রস্তাবিত বাজেট জুনের শেষে জাতীয় সংসদে গৃহীত হলে জুলাই এর এক তারিখ থেকে বাস্তবায়ন শুরু হবে। এ প্রেক্ষাপটে সরকার ও সংসদ সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে সংসদের বাইরে বাজেট নিয়ে এখন নানা আলোচনা হচ্ছে। ক্যাবের পক্ষ থেকে কিছু কথা বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করায় আজকে আমরা এখানে মিলিত হয়েছি।

দেশের সাড়ে ষোলো কোটি মানুষের চাহিদা অনেক। প্রস্তাবিত বাজেট সকল চাহিদা পূরণে পর্যাপ্ত নয়। অন্যদিকে রাজস্ব আহরণে সীমাবদ্ধতা আছে। বাজেটের ঘাটতি মাত্রাতিরিক্ত হলে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ দুরূহ হয়ে পড়তে পারে। এমতাবস্থায় বাজেটের আয়-ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হয়েছে মনে করি। তবে কিছুটা উচ্চাভিলাষী। অনেকে বলছেন বাস্তবায়ন দুরূহ হবে। আমরা মনে করি প্রচেষ্টা থাকলে তা সম্ভব হবে। আর উচ্চাভিলাষ না থাকলে স্থবিরতা এসে যাবে, মানুষের জীবনমান উন্নয়নের প্রচেষ্টা থেমে যাবে। জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধির গতিতে লাগাম পড়বে।

ভ্যাট
এবারের বাজেটে ২০১২ সালের ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একক ১৫ শতাংশ কর হার ছাড়াও ৫, ৭.৫ এবং ১০ শতাংশ হারে করারোপের বিধান করা হয়েছে। এতে ক্রেতা-ভোক্তা বাড়তি কর পরিশোধ করতে বাধ্য হতে পারে। তা ছাড়া ভ্যাটের পরিধি বাড়ানোর কারণে বেশ কিছু পণ্য, যেমন নিত্য ব্যবহার্য ভোজ্যতেলের ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এতে করে পণ্যমূল্য বাড়বে। আমরা প্রত্যাশা করব সংসদে আলোচনার পর পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে ভোক্তাদের যাতে বাড়তি কর/মূল্য পরিশোধ করতে না হয় তার ব্যবস্থা করা হবে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্য ভ্যাটের আওতার বাইরে রাখা হবে। ভ্যাট ক্রেতা-ভোক্তারা পরিশোধ করে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ ক্রেতার নিকট থেকে সংগৃহীত কর সরকারের কোষাগারে জমা করেন। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করে সরকার যে বাড়তি রাজস্ব আয় অর্জনের প্রত্যাশা করছে, তা নির্ভর করবে ভ্যাট আদায় প্রক্রিয়ার যান্ত্রিকীকরণের ওপর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহে ভ্যাটের তথ্যাদি সংরক্ষণে Electronic Fiscal Device (EFD) এবং Sales Data Controller (SDC) ব্যবহারের ওপর। এক্ষেত্রে কৌশলী বাস্তবায়ন ও কঠোর নজরদারির প্রয়োজন আছে।

আমদানি শুল্ক
বাংলাদেশে আমদানির ওপর আরোপিত (২০১৭) শুল্ক হার গড়ে ২৫.৬৪ শতাংশ, যা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। ২০১৬ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহের গড় আমদানি শুল্ক হার ছিল ৪.৭৩ শতাংশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের এই হার ছিল ১২.১৯ শতাংশ। দেশের শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ এখনো বহুলাংশে পাকিস্তান আমলে অনুসৃত আমদানি প্রতিস্থাপন নীতি অনুসরণ করে আসছে, যদিও চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এবং পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে শিল্পায়ন, Export Diversification ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক হার হ্রাস বিশেষভাবে কার্যকর। বিষয়টি পর্যালোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ সুবিবেচিত হবে।

বাংলাদেশ বিগত কয়েক দশক ধরে মুক্তবাজার অর্থনীতি অনুসরণ করছে। এই প্রেক্ষাপটে দেশের বাজারে পণ্যের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ার প্রত্যাশা স্বাভাবিক। কিন্তু Policy Research Institute of Bangladesh এর সভাপতি ডঃ জায়েদি ছাত্তারের সাম্প্রতিক গবেষণা প্রবন্ধ ” The Costs of Industrial Protection, who Pays?” এ উপস্থাপিত তথ্য উপাত্ত থেকে দেখা যায় শিল্পখাতে সুরক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্যে উচ্চ হারে আরোপিত আমদানি শুল্কের কারণে পণ্য ক্রয়ে বাংলাদেশের ভোক্তাদের কেবলমাত্র ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ১৪,২২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ প্রায় এক লক্ষ চৌদ্দ হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল মাননীয় অর্থমন্ত্রী তাঁর প্রথম বাজেটে শুল্ক নীতি পর্যালোচনা করে ক্রমান্বয়ে আমদানি শুল্ক হ্রাসের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। কিন্তু তা করা হয়নি। বরং গুঁড়ো দুধ ও চিনিসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। দু’ বছর মায়ের দুধ খাওয়ার পর গরুর দুধ অতি আবশ্যকীয় শিশু খাদ্য। দেশে পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদন হয় না। অন্যদিকে সম্প্রতি সরকারি এক গবেষণালয়ে পরীক্ষার পর দেশে উৎপাদিত দুধের ৯৩টি নমুনার ৯০টিতে নানা ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে। এ প্রেক্ষাপটে গুঁড়ো দুধের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব যথাযথ নয়। আশা করব সংসদে আলোচনার পর এ প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হবে।

আয়কর
ব্যক্তিখাতে বছরে ২,৫০,০০০ টাকা আয় করলে কর প্রদান বাধ্যতামূলক। এ সীমা বেশ কয়েক বছর অপরিবর্তিত আছে। মুদ্রাস্ফীতির ফলে টাকার ক্রয় ক্ষমতা কমছে। সঙ্গত কারণেই নিয়মিত করদাতাদের প্রত্যাশা ছিল একজন দক্ষ চার্টার্ড একাউনটেন্ট হিসাবে মাননীয় অর্থমন্ত্রী মুদ্রাস্ফীতির হার বিবেচনায় নিয়ে কর সীমা বৃদ্ধি করে স্বল্প আয়ের করদাতাদের কিছুটা হলেও সহায়তা করবেন। কিন্তু বাজেট প্রস্তাবে আমরা তা দেখছি না। সংসদে এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করছি।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হওয়ায় অনেকে কর সীমার অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করছেন। কর প্রদানে সামর্থ্য মানুষের সংখ্যা পঞ্চাশ লক্ষেরও অধিক। কিন্তু বর্তমানে করদাতার সংখ্যা বিশ লক্ষও নয়। কর জালের বাইরে থাকা ব্যক্তিদের কর নেটে অন্তর্ভুক্তির যে পরিকল্পনা অর্থমন্ত্রী গ্রহণ করেছেন তা অত্যন্ত সময়োপযোগী বলে মনে করি। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে কেউ যেন অহেতুক হয়রানির সম্মুখীন না হোন।

সঞ্চয়পত্রের ওপর আরোপিত কর
ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রায় সকলে এবং কোন কোন অর্থনীতিবিদ মনে করেন ব্যাংকের আর্থিক সঙ্কটের কারণ সঞ্চয়পত্রের প্রতি মানুষের আগ্রহ। তাঁদের ধারণা সঞ্চয়পত্রের সুদ হ্রাস করা হলে ব্যাংকে আমানত বাড়বে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁদের পরামর্শ গ্রহণ করেননি। কিন্তু মাননীয় অর্থমন্ত্রী সঞ্চয়পত্রের সুদ থেকে অর্জিত আয়ের ওপর আয়কর দ্বিগুণ করে তাঁদের সহায়তা করার উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রসঙ্গত, বছরখানেক আগে একবার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার হ্রাস করা হয়েছে, কিন্তু তাতে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেনি বরং বেড়েছে। ব্যাংকের আমানত বৃদ্ধিতে সে উদ্যোগ সহায়ক হয়নি।

ব্যাংকিং খাতের সংকটের কারণ অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, লুটপাট এবং খেলাপি ঋণের আধিক্য। ক্রমান্বয়ে ব্যাংকিং খাত আস্থার সঙ্কটের সম্মুখীন হচ্ছে। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী ইতোমধ্যে কোন কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের অর্থ ফেরত প্রদানে গড়িমসি করছে। সঞ্চয়পত্র থেকে অর্জিত সুদের ওপর আয়কর দ্বিগুণ করে ব্যাংকিং সঙ্কট দূর করার চিন্তা বাস্তবসম্মত বলে মনে হয় না। সঞ্চয়পত্র কেবল সরকারের ঋণ সংগ্রহের মাধ্যম হিসাবে বিবেচনা একটি ভ্রান্ত ধারণা। সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার অবসরপ্রাপ্ত, বয়স্ক, মধ্যবিত্ত, গৃহিনীসহ নানা শ্রেণি পেশার অগণিত মানুষের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। সঞ্চয়পত্র সরকারের সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা এবং সামাজিক সুরক্ষা বলয় সৃষ্টির কার্যক্রমের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ বিবেচনায় এক সময়ে সঞ্চয়পত্র থেকে অর্জিত সুদ সম্পূর্ণ আয়কর মুক্ত ছিল। প্রসঙ্গত, পারিবারিক সঞ্চয়পত্র, পেনশন সঞ্চয়পত্র এবং তিন মাস মেয়াদে সুদ প্রদানের সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট ক্রয় সীমা নির্ধারিত আছে। বিত্তবানরা এসব সঞ্চয়পত্র ক্রয় করে লাভবান হওয়ার সুযোগ নেই। এ প্রেক্ষাপটে আশা করছি মাননীয় অর্থমন্ত্রী সঞ্চয়পত্রের আয়ের ওপর করহার বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাহার করবেন। এ ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সক্রিয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

অন্যান্য কর
আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে এক শ্রেণির মানুষের সিগারেট, গুল, জর্দা ইত্যাদি তামাক জাতীয় পণ্যের ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। সাথে সাথে বাড়ছে ব্যবহারকারী ও আশেপাশের লোকজনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি। ফলে সরকারকে স্বাস্থ্যখাতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এসব পণ্যের ওপর আরোপিত প্রস্তাবিত কর আরও বৃদ্ধি সুবিবেচিত হবে বলে মনে করি। এতে একই সাথে সরকারের বাজেট ঘাটতি এবং জনগণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমবে।

ব্যয় প্রস্তাবনা
বাজেটে বিদেশ থেকে অর্থ প্রেরণ এবং পোষাক খাতসহ অন্যান্য রপ্তানির খাতে প্রণোদনা হিসাবে নগদ অর্থ প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। ক্যাব এ প্রস্তাবকে দৃঢ় সমর্থন জানাচ্ছে। বাংলাদেশ একটি আমদানি-নির্ভর অর্থনীতি। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন করা হলে আমদানি ব্যয় এবং আমদানিকৃত এবং দেশে উৎপাদিত আমদানিকৃত কাঁচামাল নির্ভর পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ধীর গতিতে টাকা অবমূল্যায়নের যে নীতি অনুসরণ করে আসছে তাতে ভোক্তা-স্বার্থ সংরক্ষিত হচ্ছে। অন্যদিকে, প্রস্তাবিত আর্থিক প্রণোদনা রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি ও বিশ্ব বাজারে তৈরি পোষাক ও অন্যান্য রপ্তানি খাত প্রতিযোগিতায় টিকে থেকে অধিক পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম করবে।প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে দশ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতের বরাদ্দ ৬৪,৪০৪ কোটি থেকে বৃদ্ধি করে ৭৪,৩৬৭ কোটি টাকা নির্র্ধারণ করা হয়েছে। এ খাতে বর্তমানের ৬৯ লাখ ১৯ হাজার সুবিধাভোগীর স্থলে আগামী বছর ৮৯ লাখ ৬০ হাজার মানুষ আর্থিক সহায়তা লাভ করবে। অসহায় মানুষের সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ প্রশংসনীয়।

খাদ্য নিরাপত্তা
চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। কিন্তু ২০১৭ সালে বন্যা ও রোগ-বালাই এর কারণে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের গুদামে পর্যাপ্ত মওজুদ না থাকায় বাজারের নিয়ন্ত্রণ চালকল মালিক, আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যায়। সব ধরণের চালের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে এবছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। সরকারের গুদামেও চালের পর্যাপ্ত মওজুদ আছে। প্রতি মন ধান উৎপাদনে কৃষকের ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা ব্যয় হয়েছে। সরকার প্রতি মনের সংগ্রহ মূল্য ১০৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে কিন্তু স্থান সংকুলান না হওয়ায় সরকার দ্রুততার সাথে ধান ক্রয় করতে পারছে না। কৃষকেরা প্রতি মন ধান ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। চালের দাম এখন সাম্প্রতিক সময়ের সর্বনিম্ন পর্যায়ে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ধান উৎপাদনে আগ্রহ হারালে আবার উৎপাদন ঘাটতি দেখা দিতে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যাহত হতে পারে। ইতোমধ্যে চাল আমদানির শুল্ক হার ৫৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, দশ লাখ টন চাল রপ্তানির সিদ্ধান্ত এবং ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা কয়েক লক্ষ টন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে খাদ্য গুদামের ধারণ ক্ষমতা দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পাশাপাশি বাজেটে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদানেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু বাজারে এতসব উদ্যোগের তেমন কোন প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

খাদ্য নিরাপত্তা বিধানের উদ্দেশ্যে সরকার ধান কাটা শুরুর আগেই কৃষকের উৎপাদন ব্যয় হিসাব করে ধান-চালের লাভজনক সংগ্রহ মূল্য ও সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে। নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ধান-চাল সংগ্রহ প্রতিবছরই বিলম্বে শুরু হয়। কৃষক সরকারের ন্যায্য মূল্যে ধান-চাল সংগ্রহের সুফল থেকে অনেক সময় বঞ্চিত হয়, লাভবান হোন মিল-মালিক ও মধ্যস্বত্ত¡ভোগী ব্যবসায়িক শ্রেণি। অনেক সময় রাজনৈতিক সুবিধাভোগী শ্রেণি মৌসুম-ভিত্তিক কৃষক ও ব্যবসায়ী সেজে সরকার নির্ধারিত মূল্যের সুবিধা ভোগ করে। এ প্রেক্ষাপটে চালকল মালিকদের সম্পৃক্ত করে Contract Growing পদ্ধতিতে কৃষকের নিকট থেকে ধান কাটার পরপরই ধান সংগ্রহের উদ্যোগ এবং Contract Grower’দের জন্য শস্য বীমার প্রবর্তন করা গেলে এক দিকে কৃষক ন্যায্য মূল্য পাবে, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও রোগ-বালাই এর কারণে কৃষকের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনাও দূর হবে। কৃষকের নিকট থেকে সরাসরি ক্রয়ের মাধ্যমে সরকারের গুদামে পর্যাপ্ত মওজুদ গড়ে তোলাও সম্ভব হবে। সরকারের গুদামে পর্যাপ্ত চাল মজুদ থাকলে মিলার এবং পাইকারি ব্যবসায়ীদের পক্ষে সরবরাহ অস্থিতিশীল করে মূল্য বৃদ্ধির সুযোগ থাকবে না। এতে কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই লাভবান হবেন। পরীক্ষামূলকভাবে মিলারদের সম্পৃক্ত করে Contract Growing পদ্ধতিতে ধান-চালের ক্রয় প্রস্তাবিত বাজেটে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করছি।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ : নিরাপদ খাদ্য ও ওষুধ, মানসম্মত সেবা ও পণ্য এবং সহনীয় মূল্য
পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনে ওজন ও মাপে কম দেয়া হলে কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে। দেশের প্রচলিত আইনে ভোক্তা-স্বার্থ সংরক্ষণের নানা বিধান আছে। তারপরও ওজন ও মাপে কারচুপি হচ্ছে, ভেজাল নকল ও মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য ও ওষুধে বাজার সয়লাব হচ্ছে, অধিক মূল্য গ্রহণ, নিম্নমানের সেবা প্রদান ও পণ্য বিক্রি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ভোক্তারা নানাভাবে প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছেন। এ অবস্থার অবসানের লক্ষ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ প্রণয়ন করা হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ এবং ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৫। অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি রোধের উদ্দেশ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২। এসব আইন বাস্তবায়নের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নানা উদ্যোগ ইতোমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে। তবে দেশের সব জেলায় এখনো ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যালয় স্থাপিত হয়নি। যে সব জেলায় কার্যালয় আছে তাতে জনবল এক জন সহকারি পরিচালক ও একজন কম্পিউটার অপারেটর। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত এই অধিদপ্তরের কার্যক্রম সম্প্রসারিত হওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া পরিধি বৃদ্ধি করে আইনটিকে আরও ভোক্তাবান্ধব করাও সুবিবেচিত হবে। নিরাপদ খাদ্য আইনে নকল ভেজালের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নির্ধারণ এখন সময়ের দাবি। প্রতিযোগিতা কমিশনের কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। সংসদে প্রণীত আইনসমূহের সুফল মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে এসব সংস্থায় পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব রয়েছে। তাছাড়া বিএসটিআই, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, বীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনসহ ভোক্তা-স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠিত সকল সংশ্লিষ্ট বিভাগ, কর্তৃপক্ষ ও কমিশনকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম করা প্রয়োজন। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহ বৃদ্ধি ও মূল্য নির্ধারণ, গণপরিবহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও ভাড়া নির্ধারণের জন্য পৃথক কমিশন গঠনের বিষয়ও সরকারের বিবেচনার দাবি রাখে। ভোক্তা-স্বার্থ সংক্রান্ত এ সব বিষয় সংসদে আলোচনার এবং বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের অনুরোধ করছি।

ব্যাংকিং খাত
অর্থনীতিকে সচল ও সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ জনসাধারণের নিকট থেকে তাঁদের সঞ্চিত অর্থ আমানত হিসাবে গ্রহণ করে সে অর্থ শিল্প স্থাপন, ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, কৃষি ও শিল্প উৎপাদন, বাড়ি-ঘর ও অবকাঠামো নির্মাণসহ নানা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য লগ্নি করে। লাভজনক বিনিয়োগের মাধ্যমে আমানতকারীদের অর্থের সুরক্ষার ওপর আর্থিক খাতের সুস্বাস্থ্য বহুলাংশে নির্ভরশীল। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, ব্যাংক সমূহে আমানতকারীদের অর্থের পরিমাণ বারো লক্ষ কোটি টাকা আর সরকারি বেসরকারি সকল ব্যাংকের মোট পরিশোধিত মূলধন চল্লিশ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি মাত্র।

দেশে বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় এক লক্ষ দশ হাজার কোটি টাকা। অধিকন্তু আরও প্রায় চল্লিশ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ ইতোমধ্যে অবলোপন করা হয়েছে। ঋণ প্রদান প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি, এক শ্রেণির ঋণ গ্রহিতার ঋণ পরিশোধে অনীহা এবং ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে আইনি প্রতিবন্ধকতার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে আমানতকারীদেরও অর্থ ঝুঁকিতে আছে এবং তাঁরা আর্থিক ভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সঞ্চয় হিসাবে আমানতের সুদের হার ২-৩ শতাংশ, যা মুদ্রাস্ফীতির হারের চেয়ে কম। এতে ব্যাংকে জমা আমানতের প্রকৃত মূল্য ক্রমান্বয়ে কমছে। তাছাড়া নিত্য নতুন সার্ভিস চার্জ আরোপ ও বৃদ্ধির ফলে আমানতকারীরা নানাভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

সরকারের মালিকানাধীন ব্যাংক সমূহে জনস্বার্থে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা থেকে পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু তাঁদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কোন ব্যবস্থা আছে বলে মনে হয় না। সাম্প্রতিক সময়ে জনতা ও বেসিক ব্যাংকের বড় অংকের ঋণ কেলেঙ্কারির সাথে ব্যাংক দুটির চেয়ারম্যানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহের পরিচালনা পর্ষদ গঠনের পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে বাংলাদেশ ব্যাংকের আদলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগদান করে পরিচালনা পর্ষদ পুনঃগঠনের বিষয়ে বিবেচনা করা যেতে পারে। এতে জবাবদিহিতা বাড়বে। তা ছাড়া সরকারের মালিকানাধীন ব্যাংক সমূহের আর্থিক কার্যক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাও সুবিবেচিত হবে।

মোট খেলাপি ঋণের দ্ইু-তৃতীয়াংশের অধিক প্রায় ৮০,০০০ কোটি টাকা আদায় রিট পিটিশন ও আইনি জটিলতার কারণে বছরের পর বছর বিলম্বিত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধ বিলম্বিত ও শ্রেণিকরণ পরিহার করার লক্ষ্যে আদালতে মৌলিক অধিকারের সুযোগ গ্রহণ করা হয়। বাঘা বাঘা আইনজীবীরা খেলাপিদের পক্ষে লড়েন। এ সুযোগ আমানতকারীদের অর্থের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলছে, তাঁদের মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে। আইন এবং আইনি প্রক্রিয়া সংস্কার করে মামলা রজুর সময় খেলাপি ঋণের পঞ্চাশ শতাংশ পরিশোধের বিধান অন্তর্ভুক্ত কবে দ্রুত খেলাপি ঋণ আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ না করা হলে আর্থিক খাতের রক্তক্ষরণ ও আমানতকারীদের অর্থের সুরক্ষা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।বাজেটে ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। আমানতকারীদের সুরক্ষার লক্ষ্যে তা বাস্তবায়নের দাবি করছি।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে Consumers Affairs Ministry প্রতিষ্ঠা
আমরা সবাই ভোক্তা। এ দৃষ্টিকোণ থেকে ভোক্তারা দেশের সর্ববৃহৎ ‘‘অর্থনৈতিক গোষ্ঠী”। সরকার নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই গৃহীত সিদ্ধান্ত ভোক্তাদের ওপর কী প্রভাব ফেলবে তার মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন। এমতাবস্থায় ভোক্তা স্বার্থ বিবেচনা, সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ভোক্তাদের স্বার্থের বিষয়টি তুলে ধরা, ভোক্তা-স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যক্রমে সমন্বয় সাধন এবং সর্বোপরি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল থেকে দরিদ্র, স্বল্প আয় এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত ভোক্তারা যাতে বঞ্চিত না হোন সে লক্ষ্যে জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে রাখার উদ্দেশ্যে ১২ থেকে ১৫টি খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা চিহ্নিত করে সে সব পণ্য ও সেবার মূল্য সহনীয় ও স্থিতিশীল রাখার জন্য ‘ভোক্তা বিষয়ক বিভাগ’ নামে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি পৃথক বিভাগ অথবা একটি স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় গঠনের বিষয়টি সংসদে আলোচনা ও সরকারের বিবেচনার অনুরোধ করছি। প্রসঙ্গত, প্রতিবেশী ভারতসহ অনেক দেশেই পৃথক Consumers Affairs Ministry আছে।

বাজেট বাস্তবায়ন
সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্ন ছিল উন্নত সমৃদ্ধ কল্যাণ রাষ্ট্র সোনার বাংলা গড়ার। তাঁর সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে তাঁর সুযোগ্য জ্যেষ্ঠা কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার। স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দেশজ আয়ের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র চার শতাংশ। এর পর ক্রমান্বয়ে অবস্থার উন্নতি হয়। দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। মানুষের মাথাপিছু বার্ষিক আয় ইতোমধ্যে ২,০০০ মার্কিন ডলার ছুঁই ছুঁই করছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট এর প্রতিবেদন থেকে দেখা যায় এশিয়া-প্যাসিফিক এলাকার ৪৫ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি। এবারের বাজেটে দেশজ আয়ের প্রবৃদ্ধি হার ৮.২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এখনও প্রায় দুই কোটি মানুষ অতি দরিদ্র। দেশের সিংহভাগ জনসংখ্যা হত দরিদ্র, নিম্ন আয় এবং নিম্ন- মধ্যবিত্ত আয়ের শ্রেণিভুক্ত। তাঁদের অবস্থার উন্নয়ন বহুলাংশে বাজেটের সুষ্ঠু বাস্তবায়নে ওপর নির্ভর করে। কথায় বলে, ‘বৃক্ষ তোর নাম কি? ফলে পরিচয়’। এ প্রেক্ষাপটে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পাশাপাশি বাজেট বাস্তবায়নে মূল্য ও মান সচেতনতা এবং সময়ানুবর্তিতা বৃদ্ধি প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। তাছাড়া পণ্য ও সেবার মূল্য বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনমানে বিরূপ প্রভাব ফেলে। উন্নয়নের সুফল থেকে তাঁদের বঞ্চিত করে। বাজেটে প্রাক্কলিত মুদ্রাস্ফীতির হার ৫.৫ শতাংশ। সাধারণ মানুয়ের আয় কমপক্ষে দ্বিগুণ না বাড়লে হতাশা আর অসন্তোষ বৃদ্ধি পাবে এবং ধনী-দরিদ্রের আয় পার্থক্য বাড়বে। এর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। আমরা স্বপ্ন দেখছি ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে আর ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে শামিল হবে এবং জাতির পিতার কল্যাণ রাষ্ট্র সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।