৬১ শতাংশ তরুণ-তরুণীর বিষন্নতার কারণ এই বর্তমান মহামারী

তরুণদের সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের এক জরিপ প্রতিবেদনের ফলাফলে মহামারিকালে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের ৬১ শতাংশই বিষণ্নতায় ভুগছেন এই বিষয়টি উঠে আসে। এদের অন্তত ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ তরুণ-তরুণী তা ভাগ করে নেওয়ার মতো পাশে কাউকে পান না।

শনিবার অনলাইনে আয়োজিত ‘করোনাকালীন সময়ে বেছে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিপর্যয়; আত্মহননের পথে তরুণ সমাজ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এই জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। এই প্যানডেমিক সিচুয়েশনে একাকীত্ব সময় পার করলে এরকম বিষন্নতায় ডুবে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক।

চলতি বছরের ১ থেকে ১৫ জুন জরিপটি চালানো হয়। অনলাইনে হওয়া এই জরিপে অংশ নেন ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ২ হাজার ২৬ জন তরুণ-তরুণী। তাদের ১ হাজার ৭২০ জনের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছর।

প্রতিবেদনের ফলাফলে এসেছে, জরিপে অংশ নেওয়া ২ হাজার ২৬ জনের মধ্যে ৭৮৭ জন (৩৮ দশমিক ৮ শতাংশ) বলছেন, করোনাকালে তাঁরা বিষণ্নতায় ভোগেননি। তবে ১ হাজার ২৩৯ জন বলছেন তারা বিষন্নতায় ভুগছেন, যার হার ৬১ দশমিক ২ শতাংশ। ৫৫ দশমিক ৭ শতাংশ তরুণ-তরুণী বিষণ্নতা ভুগলে কাছের মানুষের কাছে তা শেয়ার করতে পারেন।

আঁচল ফাউন্ডেশন বলছে, করোনাকালে তরুণ তরুণীরা ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশা, পড়াশোনা ও কাজে মনোযোগ হারানো, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, একাকী হওয়া, পরিবার থেকে বিয়ের চাপ, আর্থিক সমস্যা, সেশনজট ও মোবাইলের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তিতে ভুগছে। মানসিক চাপে পড়ে ২৯ দশমিক ২ শতাংশ তরুণ-তরুণী শারীরিক বা অন্যান্য উপায়ে নিজেদের ক্ষতি করেছেন।

জরিপে দেখা গেছে, জরিপের অংশ নেওয়াদের ৫০ দশমিক ১ শতাংশই আত্মহত্যা করার কথা ভেবেছেন। ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ আত্মহত্যার কথা চিন্তা করেছেন, তবে চেষ্টা করেনি। ৮ দশমিক ৩ শতাংশ তরুণ-তরুণী আত্মহত্যার উপকরণ প্রস্তুত করেছেন, শেষে পিছিয়ে এসেছেন এবং ৩ দশমিক ৭ শতাংশ তরুণ-তরুণী আত্মহত্যার চেষ্টা করে বিফল হয়েছেন।

‘আত্মহত্যা ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে তরুণদের ভাবনা’ শীর্ষক ওই জরিপটির উদ্দেশ্য ছিল তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সমস্যা চিহ্নিত করা, আত্মহত্যার কারণ বের করা এবং সমাধানের উপায় খুঁজে বের করা। জরিপে অংশ নেওয়াদের ১ হাজার ২৯৩ জন নারী, ৭৩১ জন পুরুষ এবং দুজন তৃতীয় লিঙ্গের।

জরিপে অংশ নেওয়া ৮৫ দশমিক ১ শতাংশ তরুণ-তরুণী দৈনিক দুই ঘণ্টার বেশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় কাটান। ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ তরুণ-তরুণী দৈনিক ছয় ঘণ্টার বেশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন। বাকি ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ তরুণ-তরুণী সর্বনিম্ন ২ ঘণ্টা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যয় করেন। জরিপে উঠে আসে ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ তরুণ–তরুণীর পরিমিত ঘুম হয় না।

আঁচল ফাউন্ডেশন বলছে, করোনাকালে বাড়ছে তরুণ-তরুণীর মানসিক বিপর্যয়। মানসিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শের মাধ্যমে এ ধরনের মানসিক অসুস্থতা সমাধান করা সম্ভব। অথচ জরিপের অংশ নেওয়াদের মাত্র ৮ দশমিক ৫ শতাংশ মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েছেন।

তরুণ-তরুণীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আঁচল ফাউন্ডেশন ১০টি প্রস্তাব করেছে জরিপ প্রতিবেদনের ফলাফলে। এর অন্যতমগুলো হলো ব্যক্তিকেন্দ্রিক সচেতনতা বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি প্রচার চালানো, শিক্ষার্থীদের গঠনমূলক কাজে উৎসাহ ও সুযোগ দেওয়া, মানসিক স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র ও জাতীয় হটলাইন নম্বর চালু করা, সরকারি হাসপাতালগুলোয় মেন্টাল ক্রাইসিস সেন্টার তৈরি করা প্রমুখ।

সুত্র: [দেশ রুপান্তর](ঈষৎ পরিমার্জিত)