কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে, আমরা হব স্বনির্ভর (২য় পর্ব)

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে আরেকটি সমস্যা অন্তরায় হতে পারে কৃষি জমিতে বাড়ি ঘর তৈরিতে প্রতিযোগিতা। যেমন অনুৎপাদন খাত বাসস্থান বাড়ির সীমানা ঘেরাও করে কৃষি জমি পতিত রাখা সেখানে কোন প্রকার খাদ্য উৎপাদন হয় না। অথচ উক্ত কৃষিজমি বাড়ি হিসেবেও রেকর্ডভুক্ত নয়।

এখন যদি দেশে ৪ কোটি পরিবার থাকে আর ২ কোটি পরিবার তাদের বাড়ির ভেতর অনেকগুলো কৃষিজমি আটক করে রাখেন তাহলে ইহা অত্যন্ত দুঃখজনক। এই ক্ষেত্রে বলা যায় যে ১০% কৃষিজমিতে বর্তমানে কোন উৎপাদন হচ্ছে না। যাহা সরকারিভাবে এর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

সিলেট বিভাগের প্রাক্তন একজন বিভাগীয় কমিশনার জনাব জামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, তিনি সকল কৃষি জমি চাষের আওতায় আনার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন এবং এর ফলে আমরা পেয়েছি। তাছাড়াও জনাব জাফর আহমেদ খান সিলেটের প্রাক্তন বিভাগীয় কমিশনার ছিলেন। তিনি শিক্ষার উন্নয়নে এই বিভাগে অনেক চেষ্টা করেছেন, যার ফল আমরা অনেকাংশেই পাচ্ছি।

এই দুইজন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে যে কাজগুলো করেছেন, আমরা সিলেটবাসী তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। সরকারি ও বেসরকারি প্রচেষ্টা না থাকলে দেশের প্রতি বিশেষ করে কৃষিখাত উন্নয়ন না থাকলে এর ফল ভালো পাওয়া যাবে না। অথবা সাস্টেনিবিলিটি হয়না।

কৃষি উৎপাদনের সাথে নদীর নাব্যতা হারানো ও অসমতল হাওরের বাঁধ ও বাধা হিসেবে প্রতীয়মান। তবে সরকার বর্তমান পরিকল্পনাই সিলেট বিভাগে ৭১ টি পয়েন্টে নদী খনন, ১২০ টি হাওরের টেকসই ও মানসম্পন্ন বাঁধের আগাম পরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের নিয়ে আমরা সার্ভে করেছি এবং তাদের আন্তরিকতার অভাব নেই। যদি আল্লাহ মেহেরবান হন তাহলে খুব শীঘ্রই এর সমাধান হবে বলে আমাদের ধারণা।

কৃষি উন্নয়নের অন্তরায় হিসেবে চাষের পানি সময় মত ও সঠিকভাবে চাষের কাজ আরম্ভ করা ও হারভেস্টিং করা অপরিহার্য।

তাছাড়া প্রকৃত কৃষক ও জমির মালিক যাহারা অনেকেই কৃষি কাজ না করে অন্য ব্যবসা স্বল্প বেতনে অকৃষি খাতে বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছেন। এখনো কৃষিখাত অবহেলিত। এমনও দেখা যায় ৩০ থেকে ৮০ বিঘা জমির মালিকের ছেলে মেয়ে তাহারা নিজের জমিতে চাষাবাদ সহযোগিতা না করে ৩০০০-৮০০০ টাকা মাসিক বেতনে শহর এলাকায় চাকরি করেন। যা যুক্তিসঙ্গত নয় এবং কোনক্রমেই মেনে নেওয়া যায় না।

কারণ উচ্চ শিক্ষিত ছেলে মেয়ে কৃষকের সন্তান যদি তার নিজের জমিতে সরকারি নতুন কৃষি সম্প্রসারণ নীতিমালায় নিজের জমি চাষের সহযোগিতা করেন তাহলে ওই ছেলে মেয়েরাই কমপক্ষে মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করে পরিবার চালাতে সাহায্য করতে পারেন। তাহলে একদিকে সম্মান বাড়বে অন্যদিকে প্রচুর পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন সহ দেশের সুনাম অর্জন এ অংশগ্রহণ করতে পারেন।

কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে, আমরা হব স্বনির্ভর (২য় পর্ব)

আমার জানামতে, সুনামের সহিত বিশ্ববিদ্যালয় পাস করে কৃষক ভাইদের অনেক ছেলে মেয়ে তার নিজের জমি ও প্রয়োজনে প্রতিবেশীর জমিতে কৃষি উৎপাদন করে নিজের ও পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে অন্য ভাই-বোনকে দেশে বিদেশে লেখাপড়া সহ সকল খরচ বহন করে ঘরবাড়ি করে সহযোগিতা করেছে। এমনকি সরকারি চাকরি ছেড়ে ও অনেকেই কৃষি উৎপাদনে অংশগ্রহণ করেছেন এবং দেশে জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত হচ্ছেন।

[চারটি পর্বের আজ দ্বিতীয় পর্ব]

১ম পর্ব দেখতে এখানে ক্লিক করুনঃ কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে, আমরা হব স্বনির্ভর (১ম পর্ব)

তৃতীয় পর্বের জন্য চোখ রাখুন: বিশেষ রচনা Archives – Voktakantho

লেখকঃ

জামিল চৌধুরী

সভাপতি,

ক্যাব, সিলেট জেলা শাখা