প্রাণ ফিরেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

করোনা মহামারীর কারণে প্রায় দেড় বছর পর খুলেছে স্কুল-কলেজ-মাদরাসা। স্বাস্থ্যবিধ মেনে শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করানো হচ্ছে।

আর এতোদিন পর স্কুলে আসতে পেরে আনন্দের কমতি নেই শিক্ষার্থীদের। অভিভাবকদের মধ্যেও উচ্ছাস থাকলেও রয়েছে কিছুটা ভয়-ভীতি।

রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে আটটার দিকে পুরান ঢাকার সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে দেখা যায় অভিভাবকেরা তাদের মেয়েদের নিয়ে স্কুলে এসেছেন।
স্কুলের ফটকে হ্যান্ড স্যানিটাইজ এবং তাপমাত্রা মেপে প্রবেশ করানো হচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে একেক দিন একেক শ্রেণির ক্লাস করানো হবে প্রতিষ্ঠানগুলোয়। সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার গার্লস স্কুলে এদিন প্রথম, পঞ্চম এবং ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাস করোনো হচ্ছে।

স্কুলের ফটকে একজন কর্মচারী শিক্ষার্থীদের হাত স্যানিটাইজ এবং ইনফারেড থার্মোমিটার দিয়ে শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছ।

বাবার সাথে দেড় বছর পর স্কুলে এসেছে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফরিনা। এতোদিন পর স্কুলে এসে খুশি সে। অভিভাবক আখতার হোসেন বলেন, এখন যা নিয়ম কানুম দেখছি তাতে ভালো লাগছে। সরকার যেভাবে বলেছে সেভাবে মেনে চললে নিরাপদ।

নোটিশ দিয়ে স্কুলের সামনে অভিভাবকদের ভিড় না করার অনুরোধ জানানো হলেও সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের ফটকের সামনে অভিভাবকদের জটলা করতেও দেখা যায়।

বিশেষ করে প্রথম শ্রেণির ছুটির পর শিক্ষার্থীদের নিতে অভিভাবকদের জটালা স্বাস্থ্যবিধির উপেক্ষা করতে দেখা যায়।

অভিভাবকদের দাবি, ছোট বাচ্চাদের নিতে অভিভাবকদের আসতে হয়।

প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরশির মা জলি জানান, এভাবে চললে রিস্কের মধ্যে পড়ে যেতে হবে।

এদিকে স্কুল শেষে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিজেদের বন্ধুদের সাথে আনন্দরে সাথে কিছুটা সময় কাটাতেও দেখা গেছে।

পুরান ঢাকার ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজ, গভমেন্ট মুসলিম কলেজে শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় নির্দেশনা মেনে প্রতিষ্ঠানে আসতে দেখা গেছে।

এদিন সকাল থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে সশরীরে পাঠদান শুরু হয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। তবে একই সঙ্গে করোনার সংক্রমণ ফের বাড়ার শঙ্কায় তাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও রয়েছে।

রাজধানীর ধানমন্ডির কামরুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করছে। তাদের পরনে সেই চিরচেনা স্কুল ড্রেস, কাঁধে বইয়ের ব্যাগ। তবে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে মুখে মাস্ক পরিধান করে স্কুলে এসেছে তারা।

তবে দীর্ঘদিন পর স্কুল খুললেও সহপাঠীদের সঙ্গে আগের সেই হইহুল্লোড় নেই। সামনের বেঞ্চ ধরা নিয়ে নেই হুড়োহুড়িও। শিক্ষকদের নির্দেশনা মেনে ছাত্রীরা দূরত্ব বজায় রেখে তারা স্কুলে প্রবেশ করছে।

অন্যদিকে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে কি-না, তা পরিদর্শন করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই মন্ত্রী রাজধানীর দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। বছরের শুরুতে এসএসসি ও এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা আয়োজন করার কথা থাকলেও এখনো তা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) থেকে আলাদাভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনাসহ বেশ কিছু সতর্কতা ও সচেতনতামূলক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

এছাড়াও ডিপিই থেকে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য মৌলিক ক্লাস রুটিন প্রকাশ করা হলোও মাউশি থেকে একটি গাইডলাইন দিয়ে সেই মোতাবেক স্কুল-কলেজে ক্লাস রুটিন তৈরির নির্দেশনা দিয়েছে।

সকাল ১০টায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম পরিদর্শনে রাজধানী আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিদর্শন করবেন।

এছাড়া বেলা ১১টায় রাজধানী মতিঝিল আইডিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।