এক টাকায় শিক্ষা!

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক

২০১৭ সাল। অন্য সব শিক্ষার্থীর মতো সে দিন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতেছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী মো. রিজুয়ান। হঠাৎ এক শিশু এসে অনুরোধ করল একটি পত্রিকা কিনতে।

রিজুয়ান জানতে পারলেন, ছেলেটি পত্রিকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। আরও জানতে পারলেন ছেলেটির পড়ালেখা করার প্রচণ্ড ইচ্ছার কথা। কিন্তু টাকার অভাবে পড়াশোনা এগোয়নি।

ছেলেটির কষ্ট নাড়া দিল রিজুয়ানের মনে। ভাবনায় এলো, তাদের জন্য স্থায়ীভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করার, যাতে তারা অন্তত শিক্ষার আলোটুকু পায়। বিষয়টি নিয়ে রিজুয়ান কথা বলেন বন্ধুদের সঙ্গে। উৎসাহ পেলেন সবার কাছ থেকে। আর এভাবেই এক ঝাঁক স্বপ্নবাজ তরুণ-তরুণীকে নিয়ে যাত্রা শুরু করে ১ টাকায় শিক্ষা ফাউন্ডেশন।

চলতি বছরের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠার পঞ্চম বর্ষে পদার্পণ করে সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের এবং আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে অপারগ শিক্ষার্থীদের শিক্ষা অর্জনের পথকে মসৃণ করার কাজ করছে সংগঠনটি।

শিক্ষা গ্রহণের অধিকার আদায়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে ১ টাকায় শিক্ষা ফাউন্ডেশন। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত, শিক্ষার অভাবে যারা তাদের দক্ষতা ও সৃজনশীলতা বিকাশের সুযোগ পায় না তাদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে নানামুখী কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে ‘১ টাকায় শিক্ষা ফাউন্ডেশন’।

ফাউন্ডেশনের প্রত্যেক সদস্যের দেয়া দৈনিক ১ টাকা অনুদানে নিশ্চিত হচ্ছে পিছিয়ে থাকা দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম। আর এভাবেই সুবিধাবঞ্চিত শিশু এবং পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষা লাভে অগ্রাধিকার দিয়ে বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদান করার মাধ্যমে আলোকিত সমাজ গঠনের কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি।

সংশ্লিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে জানগেছে, শুরুতে সংগঠনে সদস্য সংখ্যা ছিল ২০ জনের মতো। এখন সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে পাঁচ শতাধিক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কার্যক্রমের পরিধি বেড়েছে দেশের অন্যান্য বিভাগীয় অঞ্চলেও।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও ফেনী, যশোরসহ আরও কিছু জায়গায় সংগঠনের কার্যক্রম চলমান।

স্বপ্নের কথা জানালেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশের ১০ লাখ মানুষ প্রতিদিন ১ টাকা করে আলাদাভাবে সঞ্চয় করছে বাংলাদেশের জন্য। এই বাংলাদেশ হলো আগামী প্রজন্মের সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা।

কথা হয় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রিজুয়ানের সঙ্গে।

তিনি বলেন, প্রথম আমরা ষোলশহরে কাজ শুরু করি। আস্তে আস্তে ষোলশহর ছাড়াও আরও অনেক জায়গায় কাজ শুরু করি। টিম মেম্বার বাড়লে চট্টগ্রামের বাইরের কয়েকটি জেলায় আমাদের কার্যক্রম চলে। যেসব স্কুলে আমরা ক্যাম্পেইন করেছি তাদের সবাইকে বলে এসেছি- আজ থেকে তোমাদের কারও টাকার অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হবে না।