ধর্মীয় লেবাসে চিশতির প্রতারণার ফাঁদে হাজারো মুরিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ধর্মীয় লেবাসে আবদুল মুত্তালিব চিশতির প্রতারণার ফাঁদে হাজারো মুরিদ। নানা প্ররোচনায় হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন পীর হিসেবে।

রাজধানীর ভাটারায় আস্তানা গড়ে দেশজুড়ে তৈরি করেছেন হাজারো মুরিদ।

এই কথিত পীর সবকিছুই ব্যবহার করছিলেন প্রতারণার মাধ্যম হিসেবে। নিজের আস্তানায় ওরস-জিকিরের নামে বিপুল লোকের সমাগম ঘটাতেন। আর সেখান থেকেই শুরু হতো তার টার্গেট নির্ধারণ। পীর-মুরিদের এই ফাঁদে চলতো তার বিকৃত যৌনাচার, আর চাকরিসহ নানা প্রলোভনে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কয়েক কোটি টাকা।

প্রতারণার বেশ কয়েকটি অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের একটি বাসা থেকে আবদুল মুত্তালিব চিশতি নামে কথিত এই পীরকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবি জানায়, কথিত এই পীর ধর্মীয় লেবাসে একটি প্রতারক চক্র গড়ে তুলেছেন। আওয়ামী নির্মাণ শ্রমিক লীগ নামে একটি সংগঠনে বাগিয়ে নিয়েছেন সহ-সভাপতির পদ। আর ওই পরিচয় ব্যবহার করে যাতায়াত করতেন সচিবালয়ে। মন্ত্রী-সচিবদের সঙ্গে ছবি তুলে সেসব দেখিয়ে চাকরিসহ নানা সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেন বিপুল পরিমাণ টাকা।

ডিবির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, কথিত পীর মুত্তালিব নরসিংদীর রায়পুরার ছয় ব্যক্তিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে মাস্টাররোলে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে ২৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।

এছাড়া নেত্রকোনার একটি ইউনিয়ন পরিষদের এক চেয়ারম্যান প্রার্থীকে নৌকা প্রতীক পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা নিয়েছেন।

তিনি বলেন, বিভিন্ন জনের কাছ থেকে নানাভাবে প্রতারণা করে গত আট বছরে তিনি কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

এমন প্রতারণার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীরা।

চাকরির প্রলোভন ছাড়াও কম মূল্যে রাজউকের প্লট দেওয়া এবং সিটি করপোরেশন, পৌরসভা-ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে মেয়র, চেয়ারম্যান ও সদস্যপদে নৌকা প্রতীক পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, কথিত পীর মুত্তালিবের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাস থেকে দেশের নানা জায়গায় সফরে যেতেন। সেখানে পীর হিসেবে বয়ান দিয়ে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতেন। সাধারণ মানুষজন তার সঙ্গে যোগাযোগ করলেই শুরু হতো তার প্রতারণা।

গ্রেফতারের পর তার মোবাইল থেকে বিকৃত যৌনাচারের তথ্য পাওয়া গেছে। মুত্তালিবকে ভাটারা থানায় দায়েরকৃত একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) আদালতে পাঠানো হয়। ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তার একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন