ভোক্তা-স্বার্থ রক্ষায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পৃথক ডিভিশন অথবা স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় চাইঃ গোলাম রহমান

ঢাকা, ২৭ নভেম্বর বুধবারঃ আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর আহমদ চৌধুরী হলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত ‘ভোক্তা-স্বার্থ রক্ষায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পৃথক ডিভিশন অথবা স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় চাই’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমানের বক্তব্যের পূর্ণ বিবরণ তুলে ধরা হল।

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। শুরু পেঁয়াজ দিয়ে সেপ্টেম্বর মাসে। তারপর একে একে চাল, ডাল, ময়দা, আটা, সয়াবিন তেল, ডিমসহ নানা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। শীতকালীন সবজির দাম এখনও সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। কয়েকদিন আগে লবণের দাম হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে, তবে স্বস্তির কথা এখন তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। এ বছরের প্রথম দিকে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে পেঁয়াজের দাম ছিল প্রতি কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে খুচরা বাজারে ২২০ টাকা বা তার চেয়েও বেশি। সরকারের নানা উদ্যোগের পরও মূল্য নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এমনটি আরও একবার হয়েছিল ২০১৭ সালে। সে সময়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

পেঁয়াজ রান্নার একটি অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে মানুয়ের ভোগের পরিমাণ বাড়ছে। পেঁয়াজের ব্যবহারও বাড়ছে। বর্তমানে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৩০ লক্ষ টন বা কাছাকাছি। বিগত এক দশকে উৎপাদন দ্বিগুণ হওয়া সত্বেও দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। মোট চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ পেঁয়াজ বর্তমানে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য। দূরবর্তী চীন, মিশর, তুরষ্ক বা পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল। আমদানিকৃত পেঁয়াজের প্রায় সবটাই আসে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে। ভারতে পেঁয়াজ উৎপাদন ব্যাহত হলে অথবা মূল্য বৃদ্ধি পেলে তার প্রভাব প্রায় সাথে সাথে বাংলাদেশের বাজারে পড়ে। ২০১৭ সালে ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করে, ফলে বাংলাদেশের বাজারে সরবরাহ সঙ্কট হয় ও মূল্য বৃদ্ধি পায়। এ বছর ভারত থেকে প্রতি টন পেঁয়াজ ২৫০ থেকে ৩৫০ ডলার বা কাছাকাছি মূল্যে আমদানি হচ্ছিল। ভারত সরকার বিগত ১৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানিতে টন প্রতি ন্যূনতম মূল্য ৮৫০ মার্কিন ডলার বেঁধে দেয়। তখনই বাংলাদেশের বাজার অস্থির হয়ে উঠে। ২৯ সেপ্টেম্বর দেশটি পেঁয়াজ রপ্তানি পুরো বন্ধ করে দেয়। ভারত থেকে প্রতিদিন গড়ে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টন পেঁয়াজ আমদানি হত। ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় বাংলাদেশে সরবরাহ ঘাটতি দেখা দেয় ও দাম বৃদ্ধি পেতে থাকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই সরবরাহ সঙ্কট মোকাবেলার উদ্দেশ্যে মায়ানমারসহ অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ব্যাংকের সুদের হার এবং এলসি মার্জিন হ্রাসসহ আমদানিকারকদের নানা প্রণোদনা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

মায়ানমার থেকে প্রতি দিন হাজার টনের অধিক পরিমাণ পেঁয়াজ আসা শুরু হয়। মায়ানমারের পেঁয়াজ অধিক পচনশীল হওয়ায় এবং মায়ানমারের রপ্তানি মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রমান্বয়ে তা হ্রাস পেতে থাকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ভোগ্যপণ্যের কয়েকটি বড় ব্যবসায়ী গ্রূপকে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুরোধ করে। এসব ব্যবসায়ী গ্রূপ পেঁয়াজ ব্যবসার সাথে ইতোপূর্বে সম্পৃক্ত ছিল না। সম্ভবত সে কারণে আমদানি বিলম্বিত হচ্ছে। অন্যদিকে বাজারে বড় ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আমদানিতে নিরুৎসাহিত করে। সরকার মূল্য নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে পেঁয়াজ ক্রয় করে টিসিবির ডিলারদের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করে। তাছাড়া প্রশাসনিক ব্যবস্থা হিসেবে বাজার অভিযানের মাধ্যমে মূল্য নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগও নেয়া হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের অধিক মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রির অপরাধে মোটা অংকের জরিমানা করা হয়। এসব ব্যবস্থা সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নয়নে সহায়ক হয়নি। আর এ সংকটকে পুঁজি করে অতি মুনাফা লোভী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী আমদানিকারক, আড়তদার, মজুতদার এবং খুচরা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি করে ভোক্তাদের পকেট থেকে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।

‘ব্যবসা সরকারের কাজ নয়’ নীতিতে অটল থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রণোদনা ও নীতি সহায়তা প্রদান এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের থেকে প্রত্যাশিত উদ্যোগ ও সহযোগিতা না থাকায় বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে এবং কিছু ব্যবসায়ী মূল্য বৃদ্ধি করে লাভবান হোন। বাজার ব্যবস্থার ব্যর্থতার ফলে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্থ হোন।

অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সরকার মালবাহী বিমানে সরাসরি পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রূপও এই উদ্যোগে যোগ দেয়। কিন্তু এতেও সরবরাহ পরিস্থিতির তেমন কোন উন্নতি হয়নি এবং মূল্য এখনও ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। অক্টোবরে সরকার সরাসরি আমদানির মাধ্যমে বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহ বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হলে সম্ভবত মূল্য পরিস্থিতির অতটা অবনতি হতো না। বাজার ব্যবস্থা যখন অকার্যকর হয়ে পড়ে সে সময়ে জনস্বার্থে কেবল ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভর না করে সরকারের সরাসরি ব্যবসায় অবতীর্ণ হয়ে পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনে ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে মূল্য নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখার কোন বিকল্প আছে বলে মনে হয় না। আর সে কারণেই বঙ্গবন্ধু টিসিবি সৃষ্টি করেছিলেন।


ইতোমধ্যে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু করেছে, আশা করা যায় ডিসেম্বরে পেঁয়াজের মূল্য ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নেমে আসবে। আর যদি ভারত রপ্তানী নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় তবে দ্রুত বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এ বিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা গ্রহণের বিষয়ে সরকার বিবেচনা করতে পারেন। প্রসঙ্গত, ভারত মালদ্বীপে পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেনি এবং ভারতের কোন কোন রাজ্যে ইতোমধ্যে পেঁয়াজের মৌসুম শুরু হয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদে পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে দেশে উৎপাদন বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। উন্নত জাতের বীজ সরবরাহ, সুলভে ঋণ ও সারের ব্যবস্থা, পেঁয়াজ সংরক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং কৃষককে মৌসুমে যুক্তিসঙ্গত মূল্য নিশ্চিত করা গেলে পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্জন সম্ভব বলে মনে করি। এ লক্ষ্যে পেঁয়াজের মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানির ওপর ১০ থেকে ২০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে, তবে তা মৌসুমের শেষে ভোক্তা-স্বার্থে প্রত্যাহার যুক্তিযুক্ত হবে। স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পূর্বে পেঁয়াজ আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ কোনভাবেই সমীচীন হবে না, এতে সঙ্কট ঘনীভূত হবে, ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।

চালের মূল্য ও খাদ্য নিরাপত্তা
বিগত একমাস ধরে চালের মূল্য ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ইতোমধ্যে প্রকার ভেদে প্রতি কেজি চাল ঢাকার বাজারে ২/৩ টাকা থেকে ৭/৮ টাকা অধিক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। বোরো মৌসুমে কৃষক ধানের উপযুক্ত মূল্য পায়নি। ৭০০/৮০০ টাকা উৎপাদন ব্যয়ের বিপরীতে প্রতি মন ধান বিক্রি হয় ৬০০/৬৫০ টাকায়। আমনের মৌসুম এসে গেছে। কৃষক যাতে উপযুক্ত মূল্য পায় সে উদ্দেশ্যে সরকার ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ও সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করেছে। প্রতি কেজি চালের সংগ্রহ মূল্য স্থির করা হয়েছে ৩৬ টাকা। এর পরই সক্রিয় হয়ে উঠেছে চাল-কল সিন্ডিকেট। সম্ভবত পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা চালকল মালিকদের সাহসী করে তুলেছে। ২০১৭ সালে বন্যা ও রোগ-বালাই এর কারণে উৎপাদন কম হওয়ায় খুচরা বাজারে সব ধরণের চালের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি পায়। সে সময়ে সরকারের গুদামেও চালের মজুদ ছিল সামান্য। এবারের অবস্থা ভিন্ন। দেশে উৎপাদিত পর্যাপ্ত চাল আছে। সরকারের গুদামে ১৫ লক্ষ টনের অধিক খাদ্যশস্য মজুদ আছে। স্বল্প আয়ের মানুষ তাঁদের মোট ব্যয়ের সিংহভাগ ব্যয় করে চাল ক্রয়ে। চালের দাম বৃদ্ধি পেলে তাঁরা বিপাকে পড়েন। সরকারকে চালের বাজার অস্থিতিশীল করার যে কোন অপচেষ্টাকে শক্ত হাতে দমন করতে হবে। চক্রান্তকারী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রæত কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সাথে সাথে খোলা বাজারে চাল বিক্রি এবং ংধভবঃু হবঃ ঢ়ৎড়মৎধস সমূহে চাল বিতরণ বৃদ্ধি করে সরবরাহ বাড়ালে চালের মূল্য স্থিতিশীল ও সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষককে সুলভ মূল্যে উন্নত বীজ, সার, পানি ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ সরবরবহের সাথে সাথে ঋণ সুবিধা এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা বৃদ্ধি করতে হবে। একই সাথে কৃষকের উৎপাদিত ফসলের লাভজনক মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণত ধান কাটা শুরুর আগেই সরকার ধান-চালের সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ও সংগ্রহ মূল্য স্থির করে। তবে নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ধান-চাল সংগ্রহ প্রতিবছরই বিলম্বে শুরু হয়। এ প্রেক্ষাপটে কৃষক সরকারের ন্যায্য মূল্যে ধান-চাল সংগ্রহের সুফল থেকে বঞ্চিত হয়, লাভবান হন মিল-মালিক ও মধ্যস্বত্ত¡ভোগী ব্যবসায়িক শ্রেণি। অনেক সময় রাজনৈতিক সুবিধাভোগী শ্রেণি মৌসুম-ভিত্তিক কৃষক ও ব্যবসায়ী সেজে সরকার নির্ধারিত মূল্যের সুবিধা ভোগ করে। চালকল মালিকদের ধান উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হলে সরকারের গুদামে পর্যাপ্ত মজুদ গড়ে তোলাও সম্ভব হবে। আর সরকারের গুদামে চাল পর্যাপ্ত মজুদ থাকলে মিলার এবং পাইকারি ব্যবসায়ীদের পক্ষে সরবরাহ অস্থিতিশীল করে মূল্য বৃদ্ধির সুযোগও থাকবে না।

সার্বিক বাজার পরিস্থিতি

পেঁয়াজ ও চাল ছাড়াও পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী আগাম শীতকালীন সবজির সরবরাহ প্রচুর থাকলেও দাম বাড়ছে। মাসের শুরুতে প্রতি কেজি খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। আর ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি ডজন ডিমের দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। তাছাড়া ডাল, আটা, ময়দা ইত্যাদি পণ্যের দামও বাড়ছে। হঠাৎ করে গুজবে লবণের দাম কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। তবে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে তা নিয়ন্ত্রণে আসে। দেখে শুনে মনে হয় বিভিন্ন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও স্বার্থান্বেষী মহল পণ্য মূল্য অস্থিতিশীল করে লাভবান হওয়ার ও সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। দেশে ভোজ্য তেল, চিনি, আটা, ময়দাসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ও প্রক্রিয়াজাত করে হাতে গোণা কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল। দেশের বাজারে মূল্য স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। প্রতিযোগিতা কমিশনের কার্যক্রম দৃশ্যমান হওয়া প্রয়োজন। শীতকালীন সবজির মূল্য সহনীয় পর্যায়ে না আসলে সবজি রপ্তানিতে লাগাম টানা যুক্তিযুক্ত হবে। তাছাড়া প্যাকেটজাত ও বস্তাজাত পণ্যের সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে প্যাকেটে ও বস্তার গায়ে তা লেখা বাধ্যতামূলক করা হলে ভোক্তারা উপকৃত হবেন।

উন্নয়ন ও ভোক্তাস্বার্থ
বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার আট শতাংশের উর্ধ্বে। বিশ্ব ব্যংক বাংলাদেশকে নি¤œ আয়ের দেশ থেকে নি¤œ মধ্যবিত্ত দেশ হিসাবে শ্রেণিভুক্ত করেছে। জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্প উন্নত দেশ থেকে উন্নয়শীল দেশে শ্রেণিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। মানুষের মাথাপিছু বার্ষিক আয় এরই মধ্যে ১,৯০০ মার্কিন ডলারের সীমা অতিক্রম করেছে। দারিদ্র সীমার নিচে জীবন যাপনকারী জনসংখ্যা শতকের হিসাবে উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। তবে এখনও প্রায় দুই কোটি মানুষ অতি দরিদ্র। দেশের সিংহভাগ জনসংখ্যা হত দরিদ্র, নি¤œ আয় এবং নি¤œ-মধ্যবিত্ত আয়ের শ্রেণিভুক্ত। পণ্যমূল্য বৃদ্ধি তাঁদের জীবনমানে বিরূপ প্রভাব ফেলে। ধনী দরিদ্রের বৈষম্য বাড়ে। হতাশা আর অসন্তোষ বৃদ্ধি পায়। উন্নয়নের সুফল সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছানোর লক্ষ্যে জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে রাখার বিকল্প নেই। এ প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষের ব্যবহার্য ১৫ থেকে ২০টি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য চিহ্নিত করে সেসব পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি স্থিতিশীল ও মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার উদ্যোগ গ্রহণ সমীচীন হবে বলে মনে করি।
‘ভোক্তা শ্রেণি’ দেশের সর্ব বৃহৎ অর্থনৈতিক গোষ্ঠি। সরকার প্রতিনিয়ত নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অনেক ক্ষেত্রেই সরকারের সিদ্ধান্ত ভোক্তাদের ওপর কি প্রভাব ফেলবে সে বিবেচনা উপেক্ষিত হয়। এমতাবস্থায় ভোক্তা স্বার্থ বিবেচনা, সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ভোক্তাদের স্বার্থের বিষয়টি তুলে ধরা, ভোক্তা-স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যক্রমে সমন্বয় সাধন, চাহিদা, উৎপাদন, আমদানির সঠিক পরিসংখান সংরক্ষণ এবং সর্বোপরি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল থেকে দরিদ্র, স্বল্প আয় এবং নি¤œ মধ্য বিত্তের ভোক্তারা যাতে বঞ্চিত না হোন সে লক্ষ্যে জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে রাখার উদ্দেশ্যে ১৫ থেকে ২০টি খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চিহ্নিত করে সে সব পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখার দায়িত্ব অর্পণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি পৃথক ডিভিশন অথবা একটি স্বতন্ত্র ‘ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ (ঈড়হংঁসবৎং অভভধরৎং গরহরংঃৎু) সৃষ্টি সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। প্রসঙ্গত, ভারতসহ অনেক দেশেই ভোক্তাস্বার্থ দেখ ভালের জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় আছে।