খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় সারাদেশে পুষ্টিচাল বিতরণ করা হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ২০২৫ সালের মধ্যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির অধীনে সারাদেশে পুষ্টিচাল বিতরণ করা হবে। এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ‘পুষ্টিচাল উৎপাদন, বিতরণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নির্দেশিকা-২০২১’ প্রণয়ন করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাধারণ চালের সঙ্গে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি১, ভিটামিন-বি১২, ভিটামিন-বি৯ (ফলিক এসিড), আয়রন এবং জিঙ্ক—এই ছয়টি পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ দানাদার চাল বা কার্নেল উৎপাদন করা হয়। পরে সাধারণ চালের সঙ্গে ১০০:১ অনুপাতে কার্নেল মিশিয়ে পুষ্টিসমৃদ্ধ চাল (ফর্টিফাইড রাইস) প্রস্তুত করা হয়। প্রতি ১০০টি সাধারণ চালের সঙ্গে একটি পুষ্টিচাল অর্থাৎ ১০০ কেজিতে এক কেজি হারে পুষ্টিচাল মেশানো হয়। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে গড় করে দেয় মিশ্রণ মেশিন। এ চালের মাধ্যমে পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়, কিন্তু চালের স্বাদের কোনো পরিবর্তন হয় না।

নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সরকারের কর্মসূচিগুলোতে পুষ্টিচাল বিতরণ কার্যক্রম সম্প্রসারণের পাশাপাশি এ চাল উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় মিশ্রণ মিল ও কার্নেল ফ্যাক্টরির সংখ্যাও বেসরকারিখাতে ধীরে ধীরে বাড়ছে। সরকারিভাবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ও পুষ্টিচাল টেস্টিং সুবিধাদিসহ একটি কার্নেল ফ্যাক্টরি নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

এতে আরও বলা হয়, বর্তমানে সরকারি কর্মসূচিগুলোতে পুষ্টিচাল বিতরণের জন্য পৃথক পৃথক নীতিমালা ও পরিপত্র রয়েছে। কিন্তু সার্বিকভাবে পুষ্টিচাল উৎপাদন প্রক্রিয়া ও বিতরণ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সমন্বিত কোনো নির্দেশিকা নেই। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করে ‘পুষ্টিচাল উৎপাদন, বিতরণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নির্দেশিকা’ প্রণয়ন করা হলো।

নির্দেশিকার পুষ্টিচাল সম্প্রসারণ কার্যক্রম পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ২০২২ সাল থেকে প্রতি বছর ১০০টি করে উপজেলা বৃদ্ধির মাধ্যমে ২০২৫ সালে দেশের সব উপজেলায় পুষ্টিচাল বিতরণ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করার লক্ষ্যে খাদ্য অধিদপ্তর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। এছাড়া ওএমএস/ভিজিডি/স্কুল মিল বা অন্য কোনো কর্মসূচির অধীন পুষ্টিচাল কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য মন্ত্রণালয়গুলো বছরভিত্তিক পুষ্টিচালের চাহিদা নিরূপণ করে অর্থবছর শুরুর আগেই ৩০ জুনের মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে জানাবে। প্রতি বছর ১০০টি করে উপজেলা বৃদ্ধিতে চাহিদা অনুযায়ী কার্নেল সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

সেই লক্ষ্যে ২০২২ সালে পাঁচ হাজার ৫৯৮ টন, ২০২৩ সালে আট হাজার ১৫ টন, ২০২৪ সালে ১০ হাজার ৪০৯ এবং ২০২৫ সালে ১১ হজার ৮২০ টন কার্নেলের উৎপাদন ক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে ২০২১ সালে বেসরকারি খাতে সাতটি কার্নেল ফ্যাক্টরির বছরে মোট তিন হাজার ৩৬০ টন কার্নেল উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। ২০২২ সাল থেকে সরকারিখাতে একটি এবং বেসরকারিখাতে আরও পাঁচটিসহ মোট ১৩টি কার্নেল ফ্যাক্টরি উৎপাদনে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে।

‘এতে বার্ষিক মোট ছয় হাজর ৬১০ টন কার্নেল উৎপাদন সক্ষমতা বাড়বে। ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারিখাতে মোট ২৬টি কার্নেল ফ্যাক্টরি স্থাপনের মাধ্যমে ১২ হাজার ৪৮০ টন কার্নেল উৎপাদন সক্ষমতা বাড়বে।’

এতে আরও বলা হয়, দেশের জনগণের পুষ্টি ঘাটতি মেটানোর জন্য ২০২৬ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারিখাতে মোট ৪০টি কার্নেল ফ্যাক্টরি স্থাপনের মাধ্যমে বার্ষিক ১৮ হাজার ৮৩০ টন কার্নেল উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো যেতে পারে।

নির্দেশিকা অনুযায়ী পুষ্টিচালবিষয়ক যাবতীয় কার্যক্রম খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত হবে। এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি জাতীয় কমিটি থাকবে। এছাড়া পুষ্টিচাল কার্যক্রম সমন্বয় ও বাস্তবায়নের জন্য খাদ্য সচিবের নেতৃত্বে থাকবে পুষ্টিচালবিষয়ক সমন্বয় কমিটি, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে থাকবে পুষ্টিচালবিষয়ক কার্যকরী কমিটি। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হবেন পুষ্টিচালবিষয়ক কারিগরি কমিটির প্রধান। পুষ্টিচালের কার্নেল ফ্যাক্টরিবিষয়ক কারিগরি কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (সরবরাহ, বণ্টন ও বিপণন)।

নির্দেশিকায় কার্নেল ফ্যাক্টরি স্থাপন, প্রিমিক্স কার্নেল টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপন, পুষ্টিচাল মিশ্রণ মিল স্থাপন, পুষ্টিচালের মিশ্রণ কীভাবে পরীক্ষা করতে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।