যে অযুহাতে ২২৬ টাকা বাড়ল এলপিজির দাম

এক লাফে ২২৬ টাকা বাড়ানো হয়েছে এলপিজির দাম। এতে গত চার মাসে বিভিন্ন অযুহাতে ভোক্তা পর্যায়ে ৪১৭ টাকা বেড়েছে গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত ১২ কেজি সিলিন্ডারের তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম। এলপিজি বাংলাদেশে পুরোটাই আমদানিনির্ভর। আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমাগত দাম বাড়তে থাকায় দেশে এলপিজির দাম বাড়ানোর এই ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এ ছাড়াও এলপিজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৮ খাতে অতিরিক্ত ৪২ দশমিক ৮৮ টাকা সুবিধা দিয়েছে কমিশন।

আগে যেখানে বোতলজাত, মজুদসহ সব খাতে মোট চার্জ ১৪৩ টাকা ছিল, এখন সেটা বাড়িয়ে ১৮৫ টাকা ৮৮ পয়সা করা হয়েছে। ফলে একধাপে ২২৬ টাকা বেড়ে গেছে দাম। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়ায় বছরে ৬০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে ক্রেতার।

বিইআরসির চেয়ারম্যান আবদুল জলিল বলেছেন, আগস্ট মাসের হিসাব ধরে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কারণ গত ১৩ সেপ্টেম্বর অপারেটরদের আবেদনের ওপর গণশুনানি করে কমিশন। সেই শুনানিতে যেসব চার্জ উপস্থাপন করা হয় সেগুলোর ওপর ভিত্তি করেই নতুন এই চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে।

সৌদি সিপি অনুযায়ী এলপিজির ১২ কেজির দাম পড়েছে ৮১৮ টাকা। গত মাসে পড়েছিল ৬৭০ টাকা। সে হিসাবে সেপ্টেম্বরে সৌদি সিপির এলপিজির দাম বেড়েছে ১৪৮ টাকা।

এলপিজির মূল দামের সঙ্গে জাহাজ ভাড়া এবং টেন্ডারের প্রিমিয়াম চার্জ ধরা হয়েছে ৯৮ টাকা, অন্যান্য চার্জ ৩ টাকা, মজুদ ও বোতলজাতকরণ চার্জ ৮৫ টাকা, মূসক ৩৬ টাকা ডিস্ট্রিবিউটরের চার্জ (ডিস্ট্রিবিউটর থেকে রিটেইলার পর্যন্ত পরিবহন ব্যয়সহ) ৩৪ টাকা, রিটেইলার চার্জ ৩৮ টাকা। সৌদি সিপির দাম অনুযায়ী মূল দাম ৮১৮ টাকার বাইরে খরচ ধরা হয়েছে ৪১৪ টাকা। সে হিসাবে বর্তমান দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২৫৯ টাকা, যা গত মাসে ছিল ১ হাজার ৩৩ টাকা।

এদিকে ১২ কেজির একটি সিলিন্ডারে জাহাজ ভাড়া এবং ট্রেডারের প্রিমিয়াম চার্জ ৯৭ থেকে ১ টাকা বাড়িয়ে ৯৮ টাকা, বিক্রয়, বিপণন, বিতরণ, প্রশাসনিক ও সাধারণ ব্যয় শূন্য দশমিক ৫৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৩২ পয়সা, ইমপোর্ট প্যারিটি প্রাইস ৭৭৩ টাকা থেকে ১৪৯ টাকা বাড়িয়ে ৯২২ টাকা, মজুদ ও বোতলজাতকরণ পর্যায়ের দাম (কর-পূর্ব) ৯১৬ টাকা থেকে ১৯২ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ১০৮ টাকা, এলপিজির মজুদ ও বোতলজাতকরণ পরবর্তী মূল্য (কর-উত্তর) ৯৮২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ১৮৬ টাকা, ডিস্ট্রিবিউশন চার্জ (পরিবহন ব্যয়সহ) ২৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৪ টাকা, রিটেইলার চার্জ ২৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৮ টাকা নির্ধারণ করেছে বিইআরসি।

এ ছাড়াও বেড়েছে অটোগ্যাস, রেটিকুলেটেড এলপিজির দাম। বেড়েছে অন্যান্য এলপিজি সিলিন্ডারের দামও।

এপ্রিল মাস থেকে প্রতি মাসে ভোক্তাপর্যায়ে খুচরা বিক্রির জন্য বিইআরসি দাম নির্ধারণ করে দিলেও দেশের কোথাও সেই দামে এলপিজি কিনতে না পাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অপারেটরদের দাবি, কমিশন ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ না করায় তাদের নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। তারা মূল্য সংযোজনের দাবিও করে আসছিলেন। মূল্য সংযোজন নিয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর গণশুনানির পরিপ্রেক্ষিতে অতিরিক্ত সুবিধা দেয় কমিশন।

মূল্য সংযোজন নিয়ে অপারেটরদের দাবি অনেকটাই মানা হয়েছে, এখন গ্রাহকরা নির্ধারিত মূল্যে এলপিজি সিলিন্ডার পাবে কিনা জানাতে চাইলে কমিশনের সদস্য মকবুল-ই-ইলাহী সময়ের আলোকে বলেন, গ্রাহকরা অবশ্যই পাবে। পেতে হলে গ্রাহককেও সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। এজন্য গণমাধ্যমকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। ডিস্ট্রিক্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকেও দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

তিনি বলেন, দাম ঘোষণা শুরু করার পর দুবার দাম কমিয়েছে কমিশন। আগামীতে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে কমানো হবে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো বেসরকারিভাবে ভোক্তা পর্যায়ে তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে বিইআরসি। তখন মূসকসহ প্রতিকেজি ৮১ টাকা ৩০ পয়সা হিসেবে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৯৭৫ টাকা ধরা হয়। তখন বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতি মাসেই এই দাম পরিবর্তিত হতে পারে। এরপর মে মাসের জন্য ৬৯ টাকা দাম কমায় কমিশন। বেসরকারি খাতে মূসকসহ মূল্য ৭৫ টাকা ৪৯ পয়সা হিসাবে ১২ কেজি সিলিন্ডারের এলপিজি মূসকসহ ৯৭৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৯০৬ টাকা করা হয়। জুন মাসে আরও কমিয়ে প্রতিকেজি এলপিজির খুচরা মূল্য ধরা হয়েছিল ৭০ টাকা ১৭ পয়সা, ১২ কেজির মূল্য ৮৪২ টাকা। জুলাই মাসে আবার দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসে, প্রতিকেজি এলপিজির খুচরা মূল্য ৭০ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছিল ৭৪ টাকা ২৪ পয়সা। জুলাইয়ে ১২ কেজির সিলিন্ডারের সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৮৯১ টাকা। আগস্ট মাসেও প্রতিকেজি এলপিজির দাম ৮ টাকা করে বাড়ানো হয়েছিল। সে হিসাবে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ধরা হয়েছিল ৯৯৩ টাকা। সেপ্টেম্বরে বেসরকারি খাতে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম মূসকসহ ৯৯৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৩৩ টাকা করা হয়।