শক্তিশালী হচ্ছে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা

বিশেষ প্রতিবেদন: সাম্প্রতিক সময়ে ভয়ানক মরণব্যাধি রোগের নাম করোনাভাইরাস। মার্স বা ইবোলার মতো প্রাণঘাতী ভাইরাসের খবর কারো কাছেই অজানা নয়। সেই সারিতে করোনাভাইরাস সর্বশেষ। করোনাভাইরাস হলো নিদুভাইরাস শ্রেণীর করোনাভাইরদা পরিবারভুক্ত করোনাভাইরিনা উপগোত্রের একটি সংক্রমণ ভাইরাস প্রজাতি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী করোনাভাইরাস জুনোটিক। অর্থাৎ এই ভাইরাস পশুর দেহ থেকে মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তবে সম্প্রতি চীনে এই ভাইরাসটি সী-ফুড খাওয়ার ফলেই ছড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এমনকি আক্রান্ত মানুষের হাঁচি-কাশির সংস্পর্শে বা তার সাথে হাত মেলালেও করোনাভাইরাস শরীরে বাসা বাধে।

করোনাভাইরাস ভাইরাস পরিবারে আছে এ ধরণের ছয়টি ভাইরাস আগে পরিচিত থাকলেও এখন যেটিতে মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে সেটি নতুন। বেশিরভাগ করোনাভাইরাসই বিপজ্জনক নয়, কিন্তু আগে থেকে অপরিচিত এই নতুন ভাইরাসটি ভাইরাল নিউমোনিয়াকে মহামারীর দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশংঙ্কা করা হচ্ছে।

ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান শহরে প্রথম এ ভাইরাসটি তার অস্তিত্ব জানান দিয়েছিলো এবং এ পর্যন্ত ৮০ জনেরও বেমি মানুষ মারা গেছে। এছাড়াও কর্তৃপক্ষের উদ্বেগের কারণ হলো লুনার নিউ ইয়ার বা চন্দ্র নববর্ষ উপলক্ষ্যে যখন লাখ লাখ মানুষ বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ করবে,সেই সময়ে নতুন এই ভাইরাসে বেশি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকবে। এরইমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও থাইল্যান্ডও এ নতুন ভাইরাসে আক্রান্ত হবার খবর নিশ্চিত করেছে। লন্ডনে ইমপেরিয়াল কলেজের এমআরসি সেন্টার ফর গ্লোবাল ইনফেকশাস ডিজিজ এনালাইসিস এর এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে তারা মনে করেছে ইতোমধ্যেই দুই হাজারেরও বেশি মানুষ নতুন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে এটি ছড়িয়ে পড়ার আশংকা নিয়ে হাসপাতালগুলোকে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। চীনের সাথে বাংলাদেশের ভালো যোগাযোগ থাকায় বিশেষ সতর্কতা নেয়া হয়েছে ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরেও। কারণ বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে।প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ বাংলাদেশ থেকে চীনে আসা-যাওয়া করছে। এছাড়া অন্য যেসব দেশে ভাইরাসটি সংক্রমিত হয়েছে, সেই দেশগুলোর সঙ্গেও বাংলাদেশের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। ফলে এখনও কেউ আক্রান্ত না হলেও বাংলাদেশ এ ভাইরাস থেকে ঝুঁকিমুক্ত নয়।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব অনেককে সার্স ভাইরাসের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে যা ২০০০ সালের শুরুতে প্রধানত এশিয়ার অনেক দেশে ৭৭৪ জনের মৃত্যুর কারণ হয়েছিলো । নতুন ভাইরাসটির জেনেটিক কোড বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এটি অনেকটাই সার্স ভাইরাসের মতো।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রধান লক্ষণ হলো শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, জ্বর এবং কাশি। এছাড়া নতুন এই ভাইরাসটি মূলত ফুসফুসে বড় ধরণের সংক্রমণ ঘটায়। এর পরিণাম হিসেবে অরগ্যান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া, নিউমোনিয়া এবং মৃত্যু ঘটতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় পাঁচ দিন লাগে। প্রথম লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। তার পর দেখা দেয় শুকনো কাশি। এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট এবং তখন কোন কোন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। এই ভাইরাস কত বিপজ্জনক সেটা একটা প্রশ্ন।

এখন পর্যন্ত আক্রান্তদের ছয় শতাংশ মারা গেছেন, হয়তো আরো মৃত্যু হতে পারে। তা ছাড়া এমন মৃত্যুও হয়ে থাকতে পারে যা চিহ্নিত হয় নি। তাই এ ভাইরাস ঠিক কতটা ভয়ংকর তা এখনো স্পষ্ট নয়।

এই ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো, যারা ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছে বা এ ভাইরাস বহন করছে – তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। এছাড়া হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. গ্যাব্রিয়েল লিউং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এক নির্দেশনায় বলছেন,

  • বার বার হাত ধোয়া,
  • হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা,
  • ঘরের বাইরে গেলে মুখোশ পরা,
  • হাত সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা,

উহান শহরে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে এসে কমপক্ষে ১৫ জন চিকিৎসাকর্মী নিজেরাই এতে আক্রান্ত হয়েছেন।