ভোজ্য তেলে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান

নাসিব ইমতিয়াজ চৌধুরীঃ তেল এমন একটা রান্নার উপাদান যা না থাকলেই নয়। সাধারণত খাবারের স্বাদ বাড়াতেই তেলের ব্যবহার। উপ মহাদেশে তেলে ভাজা খাদ্যের জনপ্রিয়তা এবং চাহিদা একটু বেশি। কিন্তু তা স্বাস্থ্যের জন্যে অনেকটা ক্ষতির কারণ হতে পারে। আর সেই ভাজা সামগ্রী যদি পুরনো তেলে ভাজা হয়, তবে  ক্ষতির প্রভাব টা যেন একটু বেশিই ভয়াবহ রূপ ধারন করে। 

দেখা যায়, দোকানীরা একবার ভাজার পর ব্যবহৃত বাকি তেলটুকু রেখে দেয় পরবর্তী ভাজার কাজে ব্যবহারের জন্য। পরবর্তী সময়ে পুরনো সেই তেলের সঙ্গে পরিমান মতো মেশানো হয় নতুন তেল। এভাবেই চলতে থাকে নতুন  আর পুরনো তেলের মিলন-মেলা। দিনের পর দিন চলতে থাকে একই তেলের এই বহুমুখী ব্যবহার। এই ভাবেই তেলের গুণাগুন ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে। এ দৃশ্যের দেখা মিলবে শহরের অধিকাংশ হোটেল ও ভাজা-পোড়ার দোকানগুলোতে। 

অবাক করা ব্যাপার হলো, এই পুরনো তেলে ভাজা খাবার অনেকেই তাদের খাদ্য তালিকায় সবার উপরে স্থান দেয়। কিন্তু অনেকেরই হয়তো জানা নেই, একই তেলে বারংবার ভাজা খাবার শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর। একই তেল বারবার গরম করলে তেলের স্বাভাবিক রাসায়নিক গুণাগুণের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে। আপন বৈশিষ্ট্য হারিয়ে, তেল ক্ষতিকর রূপ ধারণ করে। এতে তেলের মধ্যে এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয় যা শরীরের জন্য মারাত্নক ক্ষতিকর।

গবেষণায় দেখা গেছে, অনেকবার ব্যবহার করা তেলে কয়েকটি পলি নিউক্লিয়ার হাইড্রোকার্বন তৈরি হয় যার মধ্যে বেনজোপাইরিনের মাত্রা খুব বেশি থাকে। এই বেনজোপাইরিন একটি ক্ষতিকর রাসায়নিক যৌগ। এটি ক্যানসারের উদ্রেককারী উপাদান হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ পুরনো তেলে ভাজা খাবার খেলে ক্যানসার হতে পারে। শুধু ক্যানসারের ঝুঁকিই নয়,শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।এছাড়াও পুরনো তেলে তৈরি খাবার খেলে বদহজম, পেটে অস্বস্তি, পেটব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার মতো ঘটনা হরহামেশাই ঘটতে পারে। তা ছাড়া যাদের সামান্যতম গ্যাসের সমস্যা কিংবা পেপটিক আলসার ডিজিজের সমস্যা আছে পুরনো তেলে তৈরি খাবার খাওয়ার পর তাদের সমস্যাটি প্রকট হতে পারে। এমনকি বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন রোগের উদ্ভব ঘটতে পারে। এ কারণে একই তেলে বারবার খাবার তৈরি না করাই ভালো।

সুতরাং প্রতিদিন নতুন তেলে ঘরে তৈরি খাবার গ্রহণ করাই নিরাপদ। ডুবো তেলে রান্না না করে অল্প তেলে ভেজে রান্না করলে তেল উদ্বৃত্ত থাকবে না এবং পুরনো তেলে ভাজারও দরকার পড়বে না। তবে সবচেয়ে ভালো হয়, যদি ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলা যায়।