‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯’ – ভোক্তাদের করনীয়

বিশেষ রচনাঃ আপামর মানুষের ভোক্তা অধিকার সমুন্নত রাখতে ২০০৯ সালে জাতীয় সংসদে ২৬ তম আইন হিসেবে ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯’ সর্বসম্মতি ক্রমে পাশ হয়। দীর্ঘ এক দশকে এই আইনের প্রয়োগ প্রতিদিনই ব্যপ্তিলাভ করছে। জনবান্ধব এই আইন বাস্তবায়নে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আপামর মানুষের কাছে এই অধিদপ্তরের গ্রহণযোগ্যতাই এর প্রমাণ।

কোন পণ্য বা সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রতারিত সংক্ষুদ্ধ ভোক্তা এ আইনের ধারা ৭৬(১) অধীন  এ অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। অভিযোগের ভিত্তিতে অপরাধ প্রমাণিত হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় আদায়কৃত জরিমানার ২৫ শতাংশ অভিযোগকারীকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রদান করা হয়ে থাকে।

আইনটি এক দশক পেরুলেও সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে এর বিশদ অনেকটাই অজানা। আপামর ভোক্তার সুবিধার্থে, অধিদপ্তরের কার্যাবলী, আইনের আওতা এবং ভোক্তা অধিকার ও করনীয় উল্লেখ করা হলঃ

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যাবলী

  • নিয়মিত বাজার তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করা।
  • দায়েরকৃত অভিযোগের তদন্তপূর্বক শুনানীর মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা।
  • ভোক্তা স্বার্থ বিরোধী কার্যক্রম ও অপরাধ প্রতিরোধে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা।
  • স্বচ্ছতা নিশ্চিত করণে নিয়মিত গণশুনানীর আয়োজন করা।

‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯’ এর আওতা

  • পণ্যের মোড়ক বিধি অমান্য করা।
  •  পণ্যের মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা।
  • ধার্য্যকৃত মূল্যের অধিক মূল্যে পণ্য, ঔষধ বা সেবা বিক্রয়।
  • ভেজাল পণ্য বা ঔষধ বিক্রয়।
  • খাদ্য পণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্যের মিশ্রণ।
  • জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয় এমন অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ।
  • মিথ্যা বিজ্ঞাপণ দ্বারা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করা।
  • প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করা।
  • বাটখারা, ওজন বা দৈর্ঘ্য পরিমাপক পরিমাপে কারচুপি।
  • পণ্যের নকল উৎপাদন।
  • মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বা ঔষধ বিক্রয়।
  • সেবা গ্রহীতার অর্থ, স্বাস্থ্য, জীবনহানি ঘটানো বা নিরাপত্তা বিপন্ন করা।

উল্লেখিত অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ৩ বছর কারাদন্ড বা ২ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড।

জাতিসংঘ স্বীকৃত ৮ ভোক্তা অধিকারঃ

  • মৌলিক চাহিদা পূরণের অধিকার
  • তথ্য পাওয়ার অধিকার
  • নিরাপদ পণ্য বা সেবা পাওয়ার অধিকার
  • পছন্দের অধিকার
  • জানার অধিকার
  • অভিযোগ করা ও প্রতিকার পাওয়ার অধিকার
  • ভোক্তা অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে শিক্ষা লাভের অধিকার
  • সূস্থ পরিবেশের অধিকার

ভোক্তাদের করনীয় বিষয়সমূহঃ

  • পণ্যের মোড়কে সংশ্লিষ্ট  পণ্যের ওজন, পরিমান,উপাদান, ব্যবহার বিধি, সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য, উৎপাদনের তারিখ,  
  • প্যাকেটজাতকরণের  মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ইত্যাদি দেখে পণ্য ক্রয় করুন।
  • মূল্য রশিদ গ্রহনান্তে মালামাল সংগ্রহ করুন।
  • দ্রব্য বা সেবা সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে জেনে দ্রব্য ক্রয় করুন।
  • বিজ্ঞাপন না বুঝে দ্রব্য সংগ্রহ থেকে বিরত থাকুন।
  • সরকারী / পেশাদারী ট্রেডমার্ক সম্বলিত দ্রব্য ক্রয় করুন।
  • দ্রব্য বা সেবা সম্পর্কে অন্ধ বিশ্বাস পরিহার করুন।
  • দ্রব্য বা সেবা সম্পর্কে অভিযোগ যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট লিপিবদ্ধ করুন।

আইনটির এক দশকের প্রায়োগিক পর্যায়কাল পর্যালোচনা করলে এটি স্পষ্ট, জনবান্ধব এই আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও ভোক্তাদের সচেতনতাই পারে ভোক্তাবান্ধব সমাজ তথা রাষ্ট্র গঠন করতে।