চাকরির নামে প্রতারণা:  চার-পাঁচ লাখ করে নিতো মনিরুল

নাটোর প্রতিনিধি:

সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে মনিরুল নামের এক প্রতারক হাতিয়ে নিতো লাখ লাখ টাকা। চাকরিপ্রার্থীদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য ব্যবহার করতো রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহৃত খামের নকল কপি। আসল স্ট্যাম্পে বানাতো চাকরির ভুয়া চুক্তিনামা। ছিল বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই ও এটিএম কার্ড। একেক পদের জন্য জনপ্রতি নিতো ৪-৫ লাখ টাকা। তারপর ধরিয়ে দিতো ভুয়া নিয়োগপত্র।

নিয়োগপত্র নিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসে গেলে চাকরিপ্রার্থী বুঝতে পারতেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে চলছিল প্রতারণা। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না। দুই ভুক্তভোগীর অভিযোগের সূত্র ধরে তাকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে নগদ টাকাসহ বিভিন্ন ভুয়া কাগজপত্র।

শুক্রবার নাটোর র‍্যাব অফিসের কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফরহাদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গ্রেফতারকৃত প্রতারকের নাম মনিরুল ইসলাম (৩০)। বাগাতিপাড়া উপজেলার দয়ারামপুর নন্দিকুজা এলাকার কফিল উদ্দিনের ছেলে সে।

কোম্পানি কমান্ডার ফরহাদ হোসেন বলেন, সাতক্ষীরার শ্যামনগরের কোবাত আলীর ছেলে শাহিন আলম এবং ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর এলাকার নাজমুল হকের ছেলে নাসিমের অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মনিরুলের বাড়িতে অভিযান চালায় র‍্যাব।

এ সময় তার বাড়ি থেকে চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র, বিভিন্ন ব্যাংকের ১৬টি চেক বই, সাত ব্যাংকের এটিএম কার্ড, একটি স্ক্যানার, তিনটি এনআইডি, চাকরির চুক্তিনামা, ১২টি জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, অর্থ লেনদেনের আটটি রেজিস্টার বই, দুটি ভুয়া নিয়োগপত্র, করণিক লেখা ভুয়া আইডি কার্ডের ফটোকপি, চারটি সিমকার্ড, দুটি মোবাইল, প্রতারণার ৫৮ হাজার ১৪০ টাকা ও ৮০০ ভারতীয় রুপি উদ্ধার করা হয়।

ফরহাদ হোসেন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মনিরুল জানিয়েছে সে সেনাবাহিনীর সিএমএইচ, ঢাকায় করণিক পদে কর্মরত বলে পরিচয় দিতো। ওই পরিচয় ব্যবহার করে সৈনিক, অফিস সহায়ক, মেসওয়েটার, স্টোরম্যান পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে ৪-৫ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিতো।

মনিরুল প্রতারণার কাজে জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম পরিবর্তন করে চাঁন মন্ডল পরিচয় দিতো। বিভিন্ন জেলার প্রায় ৬০-৭০ জনকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে এ পর্যন্ত কোটি টাকা হাতিয়েছে সে। তার বিরুদ্ধে ডিএমপির ভাসানটেক থানায় এবং শেরে বাংলা নগর থানায় মামলাও রয়েছে।

ভুক্তভোগী শাহিন বলেন, ২০১৯ সালে তিনি মেসওয়েটার পদে চাকরি পেতে মনিরুলকে দুই দফায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিয়েছেন। নিয়োগপত্র নিয়ে চাকরিতে যোগ দিতে গেলে জানতে পারেন প্রতারিত হয়েছেন।

ভুক্তভোগী নাসিম বলেন, সিএমএইচ-এ অফিস সহকারী পদে চাকরি পেতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মনিরুলকে ৩ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। আরও এক লাখ দেওয়ার কথা ছিল।

কমান্ডার ফরহাদ হোসেন বলেন, অভিযানের সময় মনিরুলের বাড়িতে সোনার তৈরি বাটি ও চামচ পাওয়া যায়। পরে অবশ্য তা মনিরুলের স্ত্রীকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।