প্রায় ১৭ কোটি ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় মাত্র ২০৮ জন নিয়োজিত

ঢাকা, ১৫ মার্চ রোববারঃ বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম জনবহুল দেশ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৯ সালের উপাত্ত অনুযায়ী জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫৭ লাখ।

কিন্তু বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে ভোক্তা অধিকার রক্ষায় সরকারের দিক থেকে কাজ করছেন মাত্র ২০৮ জন কর্মকর্তা। তবে এদের সবাই সরাসরি ভোক্তা অধিকার রক্ষায় কাজ করেন না। যদিও বাংলাদেশে ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘনের চিত্র বেশ ভয়াবহ। পণ্য বিক্রিতে কারসাজি ও মানহীন পণ্যের অভিযোগ, দাম বাড়িয়ে দেয়াসহ নানা ধরনের অভিযোগ নিত্যনৈমিত্তিক। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে অনলাইনে পণ্য বিক্রিতে নানা ধরনের প্রতারণা। এগুলো মকাবিলায় ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় সরকারের দিক থেকে আরও জোরদার অবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন অনুভব করছেন ভোক্তা অধিকার সংশ্লিষ্টরা।

দেশে ভোক্তার অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ১৬ কোটি ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণে প্রতিষ্ঠানটির জনবল মাত্র ২০৮ জন। এর মধ্যে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে মাত্র ১০৮ জন। শুধু রাজধানীর ২ কোটি ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে মাত্র ৫ জন কর্মকর্তা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনবল না থাকায় প্রতিনিয়ত বাজার তদারকি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। কোনো অভিযান পরিচালনার পর ফলোআপ করা সম্ভব হয় না।এতে প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে ভোক্তা অধিকার। যার সুবিধা নিচ্ছে মুনাফাভোগী একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিদ্যমান কাঠামোতে দেখা যায়, ২৪০ জন জনবলের মধ্যে বাজার তদারকির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন মহাপরিচালক ও দুজন পরিচালক আছেন। এছাড়া মাঠপর্যায়ে কাজের জন্য প্রধান কার্যালয়সহ বিভাগীয় কার্যালয়ে মোট ১১ জন উপপরিচালক আছেন। সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন ৮৬ জন। পরীক্ষক আছেন ৩ জন। অভিযোগ গ্রহণকারী রয়েছেন ৩ জন। নমুনা সংগ্রাহক ২ জন। সব মিলে দেশের ১৬ কোটি ভোক্তার অধিকার রক্ষায় মাঠপর্যায়ে সরাসরি কাজ করছেন মাত্র ১০৮ জন।

এ বিষয়ে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ভোক্তা অধিকার রক্ষার জন্য একটি আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু আইন প্রয়োগ করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক যে সক্ষমতা, তা বৃদ্ধি করা হয়নি। ফলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের জন্য শুধু মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও জরিমানা করা হচ্ছে, যা পর্যাপ্ত না। আইন বাস্তবায়নের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক জনবল বাড়িয়ে শক্তিশালী করতে হবে। তা না হলে সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের প্রতারিত করেই যাবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার এ প্রসঙ্গে বলেন, কিছু পদ এখনও খালি আছে। প্রায় ২ কোটি মানুষের ঢাকা মহানগরীতে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একজন উপপরিচালকসহ মোট ৫ জন কর্মকর্তা আছেন। এছাড়া ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে অল্পসংখ্যক কর্মকর্তা তদারকির কাজ করছেন, যা একেবারেই অপ্রতুল। তাই ২ হাজার ৩০৫ জন জনবলের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ২০৬ জনবল অনুমোদন করেছে জনপ্রশাসন। এরপর কয়েক ধাপ পার হয়ে কতজন জনবল দেয়া হয়, তার অপেক্ষা করতে হবে।

ভোক্তা অধিকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নকল ও মজুদদারদের বিরুদ্ধে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে তদারকি করতে হবে। শহরে নিবিড় মনিটরিংয়ের কারণে ভেজালের আগ্রাসন অসাধু ব্যবসায়ীরা গ্রামগঞ্জে নিয়ে গেছে। এজন্য উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন। তবে সরকার নিজস্ব উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগগুলোকে সহায়তা প্রদানের মাধ্যমেও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের কাজটি এগিয়ে নিতে পারে।

(প্রতিবেদনঃ ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র, কলসেন্টার)