ই-কমার্স : প্রতাড়িত গ্রাহকদের আস্থা ফেরানোই বড় চ্যালেঞ্জ

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
দ্রুত বাড়তে থাকা দেশের ই-কমার্স খাত মানুষের আস্থার সংকটে পড়েছে। ২০২০ সালে একদিকে যেমন ই-কমার্সে রেকর্ড পরিমাণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, অন্যদিকে বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা হারিয়ে পথে বসেছেন হাজারো গ্রাহক।

প্রতারণা ও প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে গ্রাহকের হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার ও পলাতক আছেন একাধিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সিইও। ৩০টির বেশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহক ও মার্চেন্টের কাছ থেকে লোপাট করেছে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি। এমন অবস্থায়ও এ খাতে নতুন নতুন বিনিয়োগ আসছে। তবে নতুন উদ্যোক্তারা এ খাতে কতটা আস্থা ফেরাতে পারবেন- সেটাই এখন মূল বিষয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত কয়েক মাসে ওয়ালকার্ট, ই-বাংলাদেশ, দুর্বারডট লাইভ, বাংলা মার্ট, লেটসগো মার্টসহ ডজনখানেক নতুন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম চালু করেছে। চালুর অপেক্ষায় আছে আরও নতুন কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে খুব বেশি সুবিধা করতে পারছেন না নতুন উদ্যোক্তরা। কেননা, এখাতে যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে তা সহসাই ঠিক হবে না।

পরিস্থিতি সামাল দিতে ক্যাশ অন ডেলিভারি বা পণ্য পাওয়া মাত্রই টাকা পরিশোধে ঝুঁকছেন নতুন উদ্যোক্তারা । তারা বলছেন, বাংলাদেশে ই-কমার্সের বড় সম্ভাবনা আছে। কিছু বিছিন্ন ঘটনায় প্রভাব পড়লেও শিগগির আগের ধারায় ফিরবে এই খাত।

ই-কমার্স খাতের অভিভাবক সংগঠন ই-ক্যাব ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, দেশে আড়াই হাজারের বেশি ই-কমার্স সাইট আছে। এছাড়া ফেসবুক পেজভিত্তিক ব্যবসা বা এফ-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা করছেন প্রায় দুই লাখ উদ্যোক্তা। সম্মিলিতভাবে এই দুই খাতের পরিধি প্রায় সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা।

ই-ক্যাব সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জামা-কাপড়, কসমেটিক্সসহ ফ্যাশন আইটেমের বিকাশ দ্রুত ঘটছে ই-কমার্সে। বর্তমানে এসব পণ্যের সাত হাজার কোটি টাকার বাজার আছে। এছাড়া মুদিপণ্য, ইলেকট্রনিক্স, রেডিমেড খাবারের বাজারের প্রসারও দ্রুত বাড়ছে। এ অবস্থায় কিছু প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালিপনায় তৈরি হয়েছে আস্থার সংকট। বাজার ঠিক হতে আরও ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, ই-কমার্সে আটকে থাকা টাকা ফেরত ও প্রতারণাহীন সেবা পেলে ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় নেবে না এই খাত।

নতুন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দুর্বারডট লাইভের হেড অব বিজনেস এস এম তাহসিন রহমান বলেন, কিছু প্রতিষ্ঠানের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য মানুষ এখন কিছুটা ই-কমার্সবিমুখ হয়ে পড়েছে। আমরা মানুষের আস্থা ফেরাতে কাজ করছি। গ্রাহকদের ক্যাশ অন ডেলিভারিতে পণ্য কেনার সুবিধা দিচ্ছি। আমরা চাচ্ছি গ্রাহকদের দ্রুত ই-কমার্সে ফেরাতে।

ই-ক্যাবের জেনারেল ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম শোভন মনে করেন, দ্রুতই দেশের ই-কমার্স খাত ঘুরে দাঁড়াবে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, সংকট সব খাতেই আছে। ই-কমার্স ভাইব্রান্ট একটা ইন্ডাস্ট্রি। এখানে উদ্যোক্তা হিসেবে অনেক তরুণ জড়িত থাকায় আমরা সমস্যাটা বেশি ফেস করেছি। ই-কমার্সের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি দুই ধরনের সমস্যা নিয়ে কাজ করছে ই-ক্যাব। ই-কমার্সে আটকে থাকা টাকা ফেরত পেলে গ্রাহকের আস্থা আবার ফিরবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহির মধ্যে আনতে সিস্টেম ডেভেলপ করা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধান হবে।