অযৌক্তিক ব্যয় যৌক্তিক করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম কমানোর প্রস্তাব ক্যাবের

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) একটি চিঠিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে। চিঠিতে বিদ্যমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যহার পর্যালোচনা করে দাম কমানোর জন্য ১৩টি সুপারিশ করা হয়েছে।

চিঠিতে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম উল্লেখ করেন, করোনাভাইরাসে যখন দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত তখন দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনের জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহে অযৌক্তিক ব্যয় যৌক্তিক করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম কমানো জরুরি।

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, করোনা পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা অস্বাভাবিক হারে হ্রাস পেয়েছে। ভোক্তার ভোগ ব্যয় এখন খুবই সীমিত। ফলে সরকারের রাজস্ব আসছে না। উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মূল্যহার যদি না কমে, তাহলে ভোক্তার ভোগব্যয় বৃদ্ধি পাবে না। ফলে ট্যাক্স, ভ্যাট, ডিউটি- এসব প্রবাহ বৃদ্ধি না হওয়ায় সরকারের রাজস্ব বাড়বে না। তাই সর্বাগ্রে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম কমিয়ে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করে পণ্য ও সেবার দাম কমাতে হবে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম কমানোর জন্য বিইআরসির কাছে ক্যাবের পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। সেগুলো হলো:

১. সকল ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ বাদ দিয়ে এবং ২০ বছরের বেশি বয়সী সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে উৎপাদনের বাইরে রেখে উৎপাদন ব্যয় নির্ধারণক্রমে বিদ্যুতের মূল্যহার কমানো।

২. বিদ্যুৎ উন্নয়ন ও গ্যাস উন্নয়ন উভয় তহবিলের অর্থ সুদে বিনিয়োগের পরিবর্তে যথাক্রমে পিডিবি কর্তৃক বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বাপেক্স কর্তৃক গ্যাস অনুসন্ধানে অনুদান হিসাবে বিনিয়োগক্রমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যহার কমানো।

৩. বিদ্যুৎ/গ্যাস সরবরাহে অযৌক্তিকভাবে সম্পদ অর্জন রোধ করে ও সরবরাহ ব্যয় হ্রাস করে মূল্যহার কমানো।

৪. বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত কয়লার মূল্যহার কমিয়ে যৌক্তিক করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করা।

৫. ব্যক্তিখাতের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ ক্রয় রহিত করে এবং সরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের মূল্যহারে তেলের আমদানি ব্যয় হ্রাস সমন্বয় করা।

৬. মূল্যহার ন্যায্য ও যৌক্তিক করার লক্ষ্যে বিইআরসি আইন মতে বিইআরসি কর্তৃক এলপিজি ও জ্বালানি তেলের মূল্যহার নির্ধারণ করা।

৭. বিগত গণশুনানিতে বিদ্যুৎ/গ্যাস উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণে চিহ্নিত

অযৌক্তিক ব্যয়সমূহ যৌক্তিক করে মূল্যহার কমানো।

৮. অর্থনীতি স্বাভাবিক না হওয়া অবধি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ ব্যয় হ্রাস করে মূল্যহার কমানোর লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারি কোম্পানিসমূহ কস্ট প্লাস নয় শুধু কস্টভিত্তিতে পরিচালিত করা এবং সেই সাথে ট্যাক্স, ভ্যাট, ডিউটি ইত্যাদি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে কমিয়ে আনা।

৯. বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতে মজুদ অর্থ ও ভোক্তার জামানতের অর্থ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত উন্নয়নে বিনিয়োগ করে ব্যাংকঋণ নির্ভরতা কমিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ ব্যয় হ্রাস করে মূল্যহার কমানো।

১০. বিদ্যুৎ ও গ্যাসখাতে অর্জিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অংশীজন প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি দ্বারা গ্যাস অনুসন্ধান এবং বিদ্যুৎ/গ্যাস উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ সামর্থ বৃদ্ধির যথার্থতা নিরূপণ করে একটি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন।

১১. বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাত দুর্নীতিমুক্ত করার লক্ষ্যে অপর একটি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্ব অনুরূপ কমিটিকে দেয়া।

১২. কমিটি কর্তৃক প্রণীত কৌশলগত পরিকল্পনা বিইআরসির অনুমোদনক্রমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতভুক্ত সকল ইউটিলিটি ও সংস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ ব্যয় ন্যায্য ও যৌক্তিককরণের লক্ষ্যে বাস্তবায়ন।

১৩. বিগত অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব মতে ডিপিএম-এর পরিবর্তে ওটিএম-এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সকল ক্রয় নিশ্চিত করা।