যেভাবে পাবেন বিনামূল্যে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের ওষুধ

।। স্বাস্থ্য ডেস্ক ।।

রাজধানীতে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ দেয়া হচ্ছে। মহতী এই উদ্যোগ নিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মিল্টন হলে বিএসএমএমইউ-এর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বিনামূল্যে ওষুধ প্রদানের এই কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন।

বিএসএমএমইউ সূত্রে জানা যায়, শুরুতে তারা হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত ১০ জন রোগীর প্রত্যেককে প্রায় লাখ টাকার ওষুধ প্রদানের মাধ্যমে বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ শুরু করেছেন। পর্যায়ক্রমে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত আরও ৫ শতাধিক রোগীকে এই ওষুধ বিনামূল্যে প্রদান করা হবে, দেশের বাজারে যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। তবে বিশ্ববাজারে এর আর্থিক মূল্য প্রায় শতগুণ।

বিএসএমএমইউ এর উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার জানান, মুখে খাওয়ার অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত ৯০ শতাংশেরও বেশি রোগী আরোগ্য লাভ করছেন। এটা চিকিৎসা বিজ্ঞানের জগতে এক কল্যাণধর্মী বিস্ময়কর আবিষ্কার। এই ওষুধই আমরা হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত রোগীদের বিনামূল্যে দিতে শুরু করেছি।

কিভাবে সেবা পাবেন
বিএসএমএমইউ সারা দেশের মানুষের কাছে পিজি হাসপাতাল নামে পরিচিত। ছুটির দিন ছাড়া অন্য যে কোনো দিন সকাল ৮টা থেকে ২তার মধেয় চলে আসুন হাসপাতালে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি (লিভার) বিভাগ এই কার্যক্রম দেখভাল করছে। যোগাযোগ করুন বিভাগের অভ্যর্থনা কক্ষে। তারাই রোগীকে সঠিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করবেন। এই বিভাগেই রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হবে।

সাধারণত হেপাটাইটিসের চিকিৎসা ৬ থেকে ২৪ সপ্তাহ সময় লাগে। যাদের হেপাটাইটিস আছে, তাদের চিকিৎসা ১২ সপ্তাহের। আর যাদের লিভার সিরোসিস আছে, তাদের চিকিৎসা ২৪ সপ্তাহের। ১২ সপ্তাহের জন্য খরচ ৮৪ হাজার টাকা। আর ২৪ সপ্তাহের চিকিৎসার জন্য খরচ হয় ১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। কিন্তু রোগীকে এক্ষেত্রে এক পয়সাও খরচ করতে হবে না।

হেপাটাইটিস সি এক ধরনের ইনফেকশন বা সংক্রমণ যা প্রধানত লিভার বা যকৃৎকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। হেপাটাইটিস সি ভয়ঙ্কর, কারণ এতে কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হলে যকৃতে ক্ষত এবং বেশ কয়েক বছর পর সিরোসিস দেখা দেয়। এই লিভার সিরোসিস একটি মারাত্মক ও অনিরাময়যোগ্য রোগ। এতে যকৃৎ বা লিভারের কোষকলা এমনভাবে ধ্বংস হয়ে যায় যে তা সম্পূর্ণ বিকৃত ও অকার্যকর হয়ে পড়ে। ফলে যকৃতের যেসব স্বাভাবিক কাজ আছে, যেমন বিপাক ক্রিয়া, পুষ্টি উপাদান সঞ্চয়, ওষুধ ও নানা রাসায়নিকের শোষণ, রক্ত জমাট বাঁধার উপকরণ তৈরি ইত্যাদি কাজ ব্যাহত হয়।

সিরোসিস আক্রান্ত ব্যক্তির যকৃৎ অকার্যকর, যকৃতের ক্যান্সার, বা খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর শিরা স্ফীত হতে পারে, যার ফলে রক্তক্ষরণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সিরোসিস থেকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে লিভারের ক্যান্সার। প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে বছরে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ মারা যান।

এটা অবহেলা করার মতো নয়, বরং প্রাণঘাতী রোগ। আক্রান্তদের দ্রুত বিএসএমএমইউতে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়ে হেপাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব জানান, দেশে যত হেপাটাইটিস আক্রান্ত রোগী আছে, বিএসএমএমইউতে যোগাযোগ করলেই তাদের সবাইকে বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হবে।

hepatitis-c