ভোক্তারা ব্যয় কমিয়েছেন, বিপাকে চীনের অর্থনীতি

।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

গত নভেম্বরে চীনের ভোক্তা ব্যয় ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। পাশাপাশি সেখানকার কারখানাগুলোয় উত্পাদনও কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। গত শুক্রবার (১৪ ডিসেম্বর ২০১৮) চীনের পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক প্রকাশিত উপাত্তে তথ্যটি উঠে এসেছে। অর্থনীতির এ নাজুক অবস্থায় ভোগ বাড়াতে মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কর ছাড় দেয়ার মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বেইজিং।

ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে যখন তীব্র বাণিজ্য বিরোধ চলছে, তখনই এ উপাত্তগুলো প্রকাশ পেল। প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি চাঙ্গা রাখতে দেশীয় বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির চেষ্টায় হিমশিম খাচ্ছে দেশটি। জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর (এনবিএস) উপাত্তে বলা হয়, খুচরা বিক্রির প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা ২০০৩ সালের মে মাসের পর এ খাতের সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে দেশটির প্রবৃদ্ধি হার ছিল নয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

চলতি বছরে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ‘কিছুটা উত্কণ্ঠা রয়েছে’ বলে জানান এনবিএস মুখপাত্র মাও শংইয়ং। ২০১৭ সালে চীনের প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ।

শংইয়ং আরো বলেন, ‘দেশে ও দেশের বাইরে পরিস্থিতি এখনো বেশ জটিল। অর্থনীতি এখনো স্থিতিশীল থাকলেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে ও শ্লথগতি দেখা দিয়েছে এবং নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।’ চীনকে কর্মসংস্থান ধরে রাখতে হবে বলে জানান তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাজারে রফতানি এখনো কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও সামনের মাসগুলোয় পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এতে দেশটির অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে দেশীয় ভোক্তাদের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে হচ্ছে।

শংইয়ং বলেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ সরাসরি দেশটির আমদানি ও রফতানিতে প্রভাব ফেলছে। তবে এখন পর্যন্ত তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেনি। গত নভেম্বর থেকে প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে বলেও জানান তিনি।

ভোগ বাড়াতে মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কর ছাড় দেয়ার মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বেইজিং। এছাড়া ব্যাংকগুলো থেকে ঋণগ্রহণ সহজলভ্য করা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ বাজারের আস্থা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এতে চীনা শেয়ারবাজার ও ইউয়ানের মানে পতন হয়েছে।

আগামী সপ্তাহে চীনের শীর্ষ নেতারা গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক কার্যকরী কমিটির সম্মেলনে বসছেন। সেখানে আগামী ১২ মাসের জন্য বিস্তৃত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। চীনের অর্থনীতির জন্য আরেকটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন কারখানা ও ওয়ার্কশপে উত্পাদন হ্রাস পাওয়া। গত নভেম্বরে এ খাতে উত্পাদন বছরওয়ারি ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা অক্টোবরে ছিল ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ।

বিদেশী বিনিয়োগের উদ্যোগগুলোর প্রবৃদ্ধি ছিল শ্লথগতির। গত গ্রীষ্মের পর থেকেই চীনের গাড়ি বিক্রির হারে বেশ বড় পতন লক্ষ করা গেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গত তিন দশকের মধ্যে এই প্রথম বার্ষিক গাড়ি বিক্রিতে পতন দেখবে দেশটি।

ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের জুলিয়ান ইভানস-প্রিচার্ড বলেন, ‘সর্বশেষ উপাত্তে স্পষ্ট উঠে এসেছে বিদেশ ও দেশীয় ফ্রন্টে তীব্র চাপের মধ্যে রয়েছে দেশটির অর্থনীতি এবং তা মোকাবেলায় নীতি গ্রহণে হিমশিম খাচ্ছে।’

চীনের অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন দেশটির নেতারা। রফতানি ও রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অভ্যন্তরীণ ভোগ বাড়ানোর দিকে জোর দিচ্ছেন তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তীব্র অর্থনৈতিক বিরোধের জের ধরে চীনের অর্থনীতিতে এ শ্লথগতি দেখা দিয়েছে। উভয় পক্ষ একে অন্যের হাজার হাজার কোটি ডলারের পণ্যে পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ করেছে।

আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত জি২০ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাণিজ্যযুদ্ধে ‘৯০ দিনের বিরতি’র ব্যাপারে একমত হলে উভয় পক্ষই তাদের মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারবেন বলে কিছুটা আশাবাদ দেখা দিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার চীনের পলিটব্যুরোর শীর্ষ কর্মকর্তারা এক বিবৃতিতে আশ্বাস দেন, আগামী বছর প্রধান অর্থনৈতিক সূচকগুলো যৌক্তিক সীমার মধ্যে রাখা হবে।