রোবট যুগে টিকে থাকতে উদ্যোক্তারা কী করবেন

।। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ।।

অটোমেশন, আপগ্রেডেশন বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি। বলা হচ্ছে, আমরা রোবট যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। ব্যাপক অটোমেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। এতে করে বিশ্বজুড়ে বদলে যাচ্ছে শ্রম খাত, কাজের প্রকৃতি।

ক্লার্ক পেশা, রুটিন কাজ, মাঝারি ও অদক্ষ শ্রমের ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্বলিত যন্ত্র (রোবট) ও স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের (অটোমেশন) ব্যবহার বড় আকারের জায়গা দখল করছে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়ছেন অসংখ্য মানুষ। ডুবছে অনেক প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোগ।

অনেক উদ্যোক্তাই অবশ্য অটোমেশনের বিপদকে অনেক দূরবর্তী কিছু মনে করেন। তারা দূর ভবিষ্যতের ওসব ব্যাপার নিয়ে এখনও মাথা ঘামাতে রাজি নন। অথচ বিশ্বে প্রতিনিয়ত অটোমেশনের প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফোন কোম্পানি ‘নোকিয়া’ এক্ষেত্রে কার্যকর এক উদাহরণ।

নোকিয়া ফোন ছিল জনপ্রিয়তার শীর্ষে। অথচ কয়েক বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটি তার সব সুনাম খুইয়েছে। বাজারে তাদের কোনো জায়গা নেই, মানুষ এই ফোন কোম্পানিটিকে বর্জন করেছে। অথচ একসময় হাতে হাতে ছিল নোকিয়া ফোন।

কেন এমন হলো, এর জবাবে বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটি অটোমেশন ও আপগ্রেডেশনের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি। পারেনি বেশ কিছু ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে। অটোমেশনের যুগের কর্মপদ্ধতি রপ্ত করতে পারেনি তারা। ফলে ভয়ঙ্কর পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে তাদের।

কর্মসংস্থানের সমস্যাকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী অটোমেশন নিয়ে উদ্বেগ-আতঙ্ক বাড়ছে। তবে প্রযুক্তির বিকাশ যে থেমে থাকার নয়, তাও সকলের জানা। বিজ্ঞানী ও সমাজ গবেষকরা তাই মানুষকে পরামর্শ দিচ্ছেন, নতুন পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার জন্য। এক্ষেত্রে কিছু করণীয় বাতলে দিচ্ছেন তারা।

টিকে থাকতে একটি প্রতিষ্ঠানকে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য জরুরীভিত্তিতে অর্জন করতে হবে। এগুলোর মূল কথা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানকে বাজারের প্রবণতা, প্রযুক্তির গতি ও জনগণের মানসিকতা বুঝতে হবে এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারতে হবে। যা করতে হবে তা হলো-

১) হার্ড ও সফট উভয় ওয়্যারের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন
আপনার প্রতিষ্ঠানের হার্ড আউটপুট তথা প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের দিকেই কেবল নজর রাখলে চলবে না। কোন প্রক্রিয়ায় আপনি উৎপাদন করছেন, তারও ক্রমাগত আধুনিকায়ন ঘটাতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তিগত বিকাশকে আত্মস্থ করতে হবে, উৎপাদনে কাজে লাগাতে পারতে হবে। প্রোডাকশন সিস্টেম ও প্রোডাক্ট, দুটোই উন্নত করার দিকে মনোযোগ থাকতে হবে।

২) উদ্ভাবন ও গবেষণায় ব্যয় বাড়ান
প্রতিষ্ঠান যত ছোটই হোক, ওই খাতে কিংবা নতুন খাতে কী করা যায়, তা জানতে পারলেই আপনার পক্ষে সম্ভব দ্রুত এগিয়ে যাওয়া। তাই প্রতিষ্ঠানের মুনাফার একটি অংশ নিয়মিত গবেষণায় ব্যয় করুন। উদ্ভাবনী শক্তিসম্পন্ন জনবলে কিছু অর্থ ব্যয় করুন। আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীরা কোন জায়গায় এগিয়ে, তার বিকল্প হিসেবে কোথায় আপনাকে এগোতে হবে, সেটা জানা থাকতে হবে। এজন্য বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান বা বুদ্ধিজীবীদের কাজে লাগান, নিদেনপক্ষে জ্ঞানী বন্ধুদের সাহায্য নিন।

৩) দৈনন্দিন জীবনের অংশে পরিণত করুন
আপনি যদি সচেতনভাবে লক্ষ্য করেন দেখবেন, গুগল ও অ্যাপল কীভাবে ফোন নির্মাতা, ডেভেলপার এবং গ্রাহকদের একটি দল গড়ে তোলে। তারা গ্রাহকদের ব্যক্তিগত জীবনের অংশ হিসেবে তাদের পণ্যগুলোকে দাঁড় করাতে চায়। এজন্য তারা ডেভেলপার ও গ্রাহকদের খুশি করার চেষ্টা করেছে সব সময়। এই পদ্ধতিটি কাজে লাগাতে হবে। আপনার উদ্যোগকে একজনের জীবনের অংশ কিভাবে বানিয়ে দেয়া যায়, সেটা ভাবুন।

৪) নেতৃত্বের গুণ অর্জন করুন
প্রতিষ্ঠান স্থাপনের চেয়ে পরিচালনা অনেক কঠিন কাজ। পরিচালকের ব্যর্থতা শ্রেষ্ঠ সব আইডিয়াকেও পণ্ড করে দিতে পারে। কিন্তু ভালো নেতা বা পরিচালক কীভাবে হবেন। কয়েকটি বিষয় মনে রাখতে হবে। ক) নেতৃত্বের কাজ অন্যের ভুল ধরা নয়, কর্মীর ভুল কোথায় কেন হচ্ছে, সেই সমস্যা দূর করাই নেতৃত্বের কাজ। খ) মেধাবীরা উদ্ধত হয়, তাই সহনশীল না হলে নেতৃত্ব নিজের বিপদই ডেকে আনবেন। গ) কোন উদ্যোগের আগাপাশতলা সম্পর্কে নেতৃত্বকে জানতে হবে। তাহলেই তিনি ভালো পরিচালক হতে পারবেন। সেজন্য মাঠ পর্যায়ের কাজগুলোতে মাঝেমধ্যেই নেতৃত্বকে হাত লাগাতে হবে। ঘ) সাহসী হোন, ছক বাঁধা পথ ত্যাগ করুন। বিশেষত যদি নতুন কোন খাত আবিষ্কার করেন, যেখানে অন্য কেউ হাত লাগায়নি তাহলে পিছিয়ে আসবেন না। ঙ) সিদ্ধান্তগ্রহণে যত বেশি পারেন অংশীদারত্ব সৃষ্টি করুন। তাহলে ভুলের বোঝা নেতৃত্বকে একা বইতে হবে না এবং ভুলের ফল মোকাবিলাও সহজ হবে।

৫) পরিবর্তনশীল বিশ্ব সম্পর্কে জানুন
রাজনৈতিক, সামাজিক নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব এগুচ্ছে। যে কারণে একেক সময় একেক স্থানে সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এক সময় যুক্তরাষ্ট্রে যেসব ব্যবসার জন্য মানুষ পাড়ি জমাতো, তার অনেক কিছুই এখন চীনে। এগুলো দিকে খেয়াল রাখতে হবে। মানুষের মধ্যে যেতে হবে, সমাজ ও বাজারের সম্পর্ক বুঝতে হবে। কোন দেশের সঙ্গে কোন দেশের কী চুক্তি হচ্ছে, কোথায় কোন নীতিগত পরিবর্তন ঘটছে, তা জানলে সেগুলোকে কাজে লাগানো যাবে। যেমন বাংলাদেশ সরকার পর্যটন খাতের প্রসার চায়, আবার জ্বালানী মন্ত্রণালয় চায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার। উদ্যোক্তা যদি নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়েন, তাহলে দুই মন্ত্রণালয় থেকেই কিছু আর্থিক প্রণোদনা পাবেন। এরকম অনেক সুযোগ সৃষ্টি হয়, সেগুলো কাজে লাগাতে পারতে হবে।