‘সবাই আমরা ভোক্তা’ – মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম লস্কর

[ভোক্তা অধিকার বিষয়ক কার্যক্রম নিয়ে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম লস্করের বিশেষ রচনা। তিনি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত। লিখেছেন ভোক্তাকণ্ঠ-এর পাঠকদের উদ্দেশ্যে।]

১৫ মার্চ ১৯৬২ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি কংগ্রেসে ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে বক্তৃতা দেন। নিরাপদ পণ্য বা সেবা পাওয়ার অধিকার, তথ্য পাওয়ার অধিকার, পছন্দের অধিকার এবং প্রতিকার পাওয়ার অধিকার-ভোক্তাদের এ চারটি মৌলিক অধিকার সম্পর্কে তিনি আলোকপাত করেন যা পরবর্তীতে ভোক্তা অধিকার আইন নামে পরিচিতি পায়। ১৯৮৫ সালের ৯ এপ্রিল জাতিসংঘ ভোক্তা অধিকার রক্ষার নীতিমালায় কেনেডি বর্ণিত চারটি মৌলিক অধিকারকে বিস্তৃত করে অতিরিক্ত চারটি যথা-মৌলিক চাহিদা পূরণের অধিকার, জানার অধিকার, শিক্ষা লাভের অধিকার এবং সুস্থ পরিবেশের অধিকারসহ মোট আটটি অধিকারকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। এর পর থেকে ভোক্তা অধিকার রক্ষায় ১২০ টি দেশের ২৪০ টির বেশী সংগঠন নিয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক ফেডারেশন কনজ্যুমার্স ইন্টারন্যাশনাল (CI) এই আটটি অধিকারকে সনদে অন্তর্ভূক্ত করে।

১৯৯০ সালের জুলাই মাসে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশসমূহের সম্মেলনে ভোক্তা অধিকার রক্ষায় জাতিসংঘের নীতিমালা অনুসরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে ২০০৯ সালের ৬ এপ্রিল মহান জাতীয় সংসদে জনগণের বহুল প্রতীক্ষিত জনবান্ধব আইন “ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯” পাশ হয়। আইনের অনুবলে ২০০৯ সালের ২০ জুন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়। ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ দেশের ভোক্তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন। বাংলাদেশের লোকসংখ্যা ১৬ কোটি ২৩ লাখ হলে ভোক্তার সংখ্যাও ১৬ কোটি ২৩ লাখ। শুধু তাই না মাতৃগর্ভে যারা আছেন তারাও কি ভোক্তা নন? অবশ্যই তারা ভোক্তা, তারাও মাতৃগর্ভে থেকে খাবার গ্রহণ করছেন। বর্তমানে গর্ভবতী মহিলার সংখ্যা ৩৫ লক্ষ তাই ভোক্তার সংখ্যা ১৬ কোটি ৫৮ লাখ। যিনি বিক্রেতা তিনিও ভোক্তা; কারণ তিনি একটি পণ্য বিক্রি করছেন পক্ষান্তরে অন্য এক বা একাধিক পণ্য ক্রয় করছেন।

ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য প্রতিরোধ এবং ভোক্তা-অধিকার লঙ্ঘনজনিত বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে একটি উপযুক্ত ও ফলপ্রসূ আইন প্রণয়নে বিভিন্ন মহলের দাবির যৌক্তিকতা বিবেচনায় আইনটি প্রণীত হয়েছে। প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় ব্যাপক মত বিনিময়, আলোচনা, সেমিনার ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অধিকতর ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণকল্পে প্রণীত আইনটি সময়োপযোগী ও কার্যকর হিসেবে ইতোমধ্যে পরিচিতি লাভ করেছে।

আইনের উদ্দেশ্য
* ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়ন
* ভোক্তা অধিকার বিরোধী কার্য প্রতিরোধ
* ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘণজনিত অভিযোগ নিষ্পত্তি
* নিরাপদ পণ্য বা সেবা নিশ্চিতকরণ
* পণ্য বা সেবা ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তাকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা
* পণ্য বা সেবা ক্রয়ে প্রতারণা রোধ
* ভোক্তা অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি, ইত্যাদি

ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য
* নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে কোন পণ্য, ঔষধ বা সেবা বিক্রয় বা বিক্রয়ের প্রস্তাব করা
* জেনেশুনে ভেজাল মিশ্রিত পণ্য বা ঔষধ বিক্রয় বা বিক্রয়ের প্রস্তাব করা
* স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক নিষিদ্ধ দ্রব্য কোন খাদ্য পণ্যের সাথে মিশ্রণ ও বিক্রয় করা
* মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করা
* প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করা
* ওজনে কারচুপি করা
* বাটখারা বা ওজন পরিমাপক যন্ত্রে কারচুপি করা
* পরিমাপে কারচুপি করা
* দৈর্ঘ্য পরিমাপের কার্যে ব্যবহৃত পরিমাপক ফিতা বা অন্য কিছুতে কারচুপি করা
* কোন নকল পণ্য বা ঔষধ প্রস্তুত বা উৎপাদন করা
* মেয়াদ উত্তীর্ণ কোন পণ্য বা ঔষধ বিক্রয় বা বিক্রয়ের প্রস্তাব করা
* নিষিদ্ধ ঘোষিত কোন কার্য করা যাতে সেবাগ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে
* অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ করা
* অবহেলা, দায়িত্বহীনতা দ্বারা সেবাগ্রহীতার অর্থ, স্বাস্থ্য বা জীবনহানি, ইত্যাদি ঘটানো
* কোন পণ্য মোড়কাবদ্ধভাবে বিক্রয় করার এবং মোড়কের গায়ে পণ্যের উপাদান, খুচরা বিক্রয় মূল্য, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ইত্যাদি লিপিবদ্ধ করার বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করা
* আইনানুগ বাধ্যবাধকতা অমান্য করে দোকান বা প্রতিষ্ঠানের সহজে দৃশ্যমান কোন স্থানে পণ্যের মূল্য তালিকা লটকায়ে প্রদর্শণ না করা
* আইনানুগ বাধ্যবাধকতা অমান্য করে দোকান বা প্রতিষ্ঠানের সেবার মূল্য তালিকা সংরক্ষণ না করা এবং সংশ্লিষ্ট স্থানে বা সহজে দৃশ্যমান কোন স্থানে উক্ত তালিকা লটকায়ে প্রদর্শণ না করা

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এ নিম্নোক্ত দণ্ডের বিধান রয়েছে
ক) ধারা ৩৭: কোন ব্যক্তি কোন আইন বা বিধি দ্বারা কোন পণ্য মোড়কাবদ্ধভাবে বিক্রয় করিবার এবং মোড়কের গায়ে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওজন, পরিমাণ, উপাদান, ব্যবহার-বিধি, সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য, উৎ‍পাদনের তারিখ, প্যাকেটজাতকরণের তারিখ এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করিবার বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করিয়া থাকিলে তিনি অনূর্ধ্ব ১ (এক) বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

খ) ধারা ৩৮: কোন ব্যক্তি কোন আইন বা বিধি দ্বারা আরোপিত বাধ্যবাধকতা অমান্য করিয়া তাহার দোকান বা প্রতিষ্ঠানের সহজে দৃশ্যমান কোন স্থানে পণ্যের মূল্যের তালিকা লটকাইয়া প্রদর্শণ না করিয়া থাকিলে তিনি অনূর্ধ্ব ১ (এক) বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

গ) ধারা ৩৯: কোন ব্যক্তি কোন আইন বা বিধি দ্বারা আরোপিত বাধ্যবাধকতা অমান্য করিয়া তাহার দোকান বা প্রতিষ্ঠানের সেবার মূল্যের তালিকা সংরক্ষণ না করিলে এবং সংশ্লিষ্ট স্থানে বা সহজে দৃশ্যমান কোন স্থানে উক্ত তালিকা লটকাইয়া প্রদর্শণ না করিয়া থাকিলে তিনি অনূর্ধ্ব ১ (এক) বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

ঘ) ধারা ৪০: কোন ব্যক্তি কোন আইন বা বিধির অধীন নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে কোন পণ্য, ঔষধ বা সেবা বিক্রয় বা বিক্রয়ের প্রস্তাব করিলে অনূর্ধ্ব ১ (এক) বৎসর কারাদন্ড, বা অনধিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

ঙ) ধারা ৪১: কোন ব্যক্তি জ্ঞাতসারে ভেজাল মিশ্রিত পণ্য বা ঔষধ বিক্রয় করিলে বা করিতে প্রস্তাব করিলে তিনি অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

চ) ধারা ৪২: মানুষের জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক কোন দ্রব্য, কোন খাদ্য পণ্যের সহিত যাহার মিশ্রণ কোন আইন বা বিধির অধীন নিষিদ্ধ করা হইয়াছে, কোন ব্যক্তি উক্তরূপ দ্রব্য কোন খাদ্য পণ্যের সহিত মিশ্রিত করিলে তিনি অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

ছ) ধারা ৪৩: কোন ব্যক্তি মানুষের জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয় এমন কোন প্রক্রিয়ায়, যাহা কোন আইন বা বিধির অধীন নিষিদ্ধ করা হইয়াছে, কোন পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ করিলে তিনি অনূর্ধ্ব ২ (দুই) বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

জ) ধারা ৪৪: কোন ব্যক্তি কোন পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অসত্য বা মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করিলে তিনি অনূর্ধ্ব ১(এক) বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডতি হইবেন।

ঝ) ধারা ৪৫: কোন ব্যক্তি প্রদত্ত মূল্যের বিনিময়ে প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করিলে তিনি অনূর্ধ্ব ১ (এক) বৎসর কারাদন্ড, বা অনধিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডতি হইবেন।

ঞ) ধারা ৪৬: কোন ব্যক্তি কোন পণ্য সরবরাহ বা বিক্রয়ের সময় ভোক্তাকে প্রতিশ্রুত ওজন অপেক্ষা কম ওজনে উক্ত পণ্য বিক্রয় বা সরবরাহ করিলে তিনি অনূর্ধ্ব ১ (এক) বৎসর কারাদন্ড, বা অনধিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডতি হইবেন।

ট) ধারা ৪৭: কোন পণ্য বিক্রয় বা সরবরাহের উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তির দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ওজন পরিমাপের কার্যে ব্যবহৃত বাটখারা বা ওজন পরিমাপক যন্ত্র প্রকৃত ওজন অপেক্ষা অতিরিক্ত ওজন প্রদর্শনকারী হইলে তিনি অনূর্ধ্ব ১ (এক) বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডতি হইবেন।

ঠ) ধারা ৪৮: কোন ব্যক্তি কোন পণ্য সরবরাহ বা বিক্রয়ের সময় ভোক্তাকে প্রতিশ্রুত পরিমাপ অপেক্ষা কম পরিমাপে উক্ত পণ্য বিক্রয় বা সরবরাহ করিলে তিনি অনূর্ধ্ব ১ (এক) বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডতি হইবেন।

ড) ধারা ৪৯: কোন পণ্য বিক্রয় বা সরবরাহের উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তির দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দৈর্ঘ্য পরিমাপের কার্যে ব্যবহৃত পরিমাপক ফিতা বা অন্য কিছুতে কারচুপি করা হইলে তিনি অনূর্ধ্ব ১ (এক) বৎসর কারাদ-, বা অনধিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডতি হইবেন।

ণ)ধারা ৫০: কোন ব্যক্তি কোন পণ্যের নকল প্রস্তুত বা উৎপাদন করিলে তিনি অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক ২,০০,০০০ ( দুই লক্ষ) টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

ত) ধারা ৫১: কোন ব্যক্তি মেয়াদ উত্তীর্ণ কোন পণ্য বা ঔষধ বিক্রয় করিলে বা করিতে প্রস্তাব করিলে তিনি অনূর্ধ্ব ১ (এক) বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
এছাড়াও ধারা ৫৫ মোতাবেক উল্লিখিত কোন অপরাধের জন্য দণ্ডিত ব্যক্তি যদি পুনরায় একই অপরাধ করেন তবে তিনি উক্ত অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ দন্ডের দ্বিগুন দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন৷

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এবং নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ এর পার্থক্য
নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ কেবল খাদ্য নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এ খাদ্য, পণ্য ঔষধ এবং সেবা অর্ন্তভূক্ত। সেবা অর্থ পরিবহন, টেলিযোগাযোগ, পানি সরবরাহ, পয়:নিষ্কাশন, জ্বালানী, গ্যাস, বিদ্যুৎ, নির্মাণ, আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরা এবং স্বাস্থ্য সেবা, যা ব্যবহারকারীদের নিকট মূল্যের বিনিময়ে লভ্য করে তোলা হয়, তবে বিনামূল্যে প্রদত্ত সেবা ইহার অর্ন্তভূক্ত হইবে না।

যেভাবে অভিযোগ দায়ের করতে হবে
* অভিযোগ অবশ্যই লিখিত হতে হবে
* ফ্যাক্স, ই-মেইল, ওয়েব সাইট, ইত্যাদি ইলেকট্রনিক মাধ্যমে; বা সশরীরে উপস্থিত হয়ে বা কারো মাধ্যমে দরখাস্ত প্রেরণ করে
* অভিযোগের সাথে পণ্য বা সেবা ক্রয়ের রশিদ সংযুক্ত করতে হবে। অভিযোগকারী তাঁর পূর্ণাঙ্গ নাম, পিতা ও মাতার নাম, ঠিকানা, ফোন, ফ্যাক্স ও ই- মেইল নম্বর (যদি থাকে) এবং পেশা উল্লেখ করবেন
* কোন কোর্ট ফি/ রাজস্ব স্ট্যাম্প লাগে না
* কোন আইনজীবির মাধ্যমে অভিযোগ দায়েরের প্রয়োজন নেই
কোথায় অভিযোগ দায়ের করতে হবে
* জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ দায়ের করা যায়। অধিদপ্তরের অভিযোগ কেন্দ্রের e-mail হচ্ছে [email protected] ফ্যাক্স নং-৮১৮৯৪২৫, ফোনঃ ০২-৮১৮৯৪০৫, ০২-৫৫০১৩১৮ মোবাইল নং-০১৫৫২-৪৭৯৯১০, ০১৭৭৭-৭৫৩৬৬৮,০১৭১৮-২৬৬৫০১
* জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করা যায়
* জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলা অফিসে অভিযোগ দায়ের করা যায়
* জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট অভিযোগ দায়ের করা যায়

ভোক্তার প্রতিকার
তিন ভাবে একজন ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তা প্রতিকার পেতে পারেন। প্রশাসনিক প্রতিকার, ফৌজদারী প্রতিকার, ও দেওয়ানী প্রতিকার।

(১) প্রশাসনিক প্রতিকার
* জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা তাঁর ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা (পরিচালক, উপপরিচালক ও সহকারী পরিচালক) সমীচীন মনে করলে কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়েরের পরিবর্তে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় শুধু জরিমানা আরোপ করতে পারবেন
* প্রশাসনিক ব্যবস্থায় আরোপিত ও আদায়কৃত জরিমানার ২৫ শতাংশ অভিযোগকারী তাৎক্ষণিকভাবে প্রাপ্য হবেন: তবে শর্ত থাকে যে, অভিযোগকারী অধিদপ্তরের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী হয়ে থাকলে তিনি আদায়কৃত অর্থের ২৫ শতাংশ প্রাপ্য হবেন না
* অভিযোগ শুনানীর জন্য অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে ১২ টি কমিটি আছে। জটিল না হলে সাধারণত অভিযোগ প্রাপ্তির দুই সপ্তাহের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়। প্রত্যেক জেলাগুলোতেও এক সদস্য বিশিষ্ট কমিটি আছে অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য। বিভাগীয় কার্যালয়েও অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়ে থাকে

(২) ফৌজদারী প্রতিকার
* ভোক্তা-অধিকার বিরোধী অপরাধসমূহ প্রথম শ্রেণীর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য
* বিচারে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড প্রদানসহ মালামাল বাজেয়াপ্ত করতে পারবে

(৩) দেওয়ানী প্রতিকার
কোন ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তা অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আর্থিক মূল্যে নিরূপণযোগ্য ও নিরুপিত ক্ষতির অনূর্দ্ধ পাঁচগুণ পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবী করে স্থানীয় অধিক্ষেত্রের যুগ্ম জেলা জজের আদালতে দেওয়ানী মামলা দায়ের করতে পারবেন। আদালত বাদীর আরজি বিবাদীর জবাব, সাক্ষ্য প্রমাণ এবং পারিপার্শ্বিক সকল বিষয় পর্যালোচনাক্রমে নিরূপিত ক্ষতির অনূর্ধ্ব পাঁচগুণ সীমার মধ্যে যে কোন অংকের ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে পারবেন। আদালত (ক) ত্রূটিপূর্ণ পণ্য যথাযথ পণ্য দ্বারা প্রতিস্থাপনের জন্য বিবাদীকে নির্দেশ প্রদান করতে পারবেন (খ) ত্রূটিপূর্ণ পণ্য ফেরৎ গ্রহণ করিয়া উক্ত পণ্যের মূল্য বাদীকে ফেরৎ প্রদান করার জন্য বিবাদীকে নির্দেশ প্রদান করতে পারবেন (গ) ক্ষতিপূরণের জন্য বাদীকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ (যাহা আর্থিক মূল্যে নিরূপিত ও প্রমাণিত ক্ষতির অনূর্ধ্ব পাঁচগুণ পর্যন্ত হতে পারবে) প্রদানের জন্য বিবাদীকে নির্দেশ প্রদান করতে পারবেন।

অধিদপ্তরের কার্যক্রম
প্রশাসনিকভবে অধিদপ্তর দুই ভাবে অপরাধের জন্য জরিমানা আরোপ করে থাকে। প্রথমটি হলো ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বাজার তদারকী দল কোন প্রতিষ্ঠানে ভোক্তা বিরোধী কোন অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকলে তৎক্ষণাৎ জরিমানা করতে পারে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে কোন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি অভিযোগ দায়ের করলে অভিযোগের প্রেক্ষিতে উভয়পক্ষকে নির্ধারিত তারিখে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করা হয় এবং শুণানীর মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়। এভাবে প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে এ পর্যন্ত ১৪,৫৩৭ টি বাজার অভিযানের মাধ্যমে ৫১,৬৪৭ টি প্রতিষ্ঠানকে দোষী সাব্যস্ত করে ৪০১,০৬৮,৩৪৮ (চল্লিশ কোটি দশ লক্ষ আটষট্টি হাজার তিনশত আটচল্লিশ) টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠা লগ্ন হতে বছর ওয়ারী অভিযানের সংখ্যা, দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা, জরিমানার অর্থ ইত্যাদি
ক্রমিক-অর্থ বছর-বাজার অভিযানের সংখ্যা-দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা-আদায়কৃত জরিমানার পরিমাণ-অভিযোগকারীকে প্রদত্ত টাকার পরিমাণ-২৫ % হিসাবে টাকা প্রাপ্ত অভিযোগকারীর সংখ্যা-সরকারী কোষাগারে জমাকৃত টাকার পরিমাণ
১.২০০৯/১০-৭-৫৪-১,৬৫,৫০০-০-০-১,৬৫,৫০০
২.২০১০/১১-১৭৪-১৫১২-১,৬৯,৬১,৩০০-০-০-১,৬৯,৬১,৩০০
৩.২০১১/১২-৩৭১-২৬৬৩-২,৭১,৬৪,৩০০-৫২,৫০০/-৮-২,৭১,১১,৮০০
৪.২০১২/১৩-৫৪০-২৯২৪-২,১৩,৬৯,৫০০-১,০৮,৭৫০-২৯-২,১২,৬০,৭৫০
৫.২০১৩/১৪-৪২১-২৮৬১-১,৭৭,৩১,১০০-৫১,৫০০-১৭-১,৭৬,৭৯,৬০০
৬.২০১৪/১৫-৮৪১-৩১৩১-২,০৩,৪০,৩৫০-১,৮৮,৫০০-১০৭-২,০১,৫১,৮৫০
৭.২০১৫/১৬-১৩৯৪-৫০৫৯-৩,২৩,৮২,০৫০-২,৯৩,৮৭৫-১৯২-৩,২০,৮৮,১৭৫
৮.২০১৬/১৭-৩,৪৩৭-১০,৭২৯-৬৮,৭০৯,৩০০-১,৫৫১,৬৭৭-১,৪১৬-৬৭,১৫৭,৬২৩
৯.২০১৭/১৮-৪০৭৭-১৩,৬৫২-১৪১,৪৭৮,২০০-৩,৯৭২,০০০-১,৯৩৪-১৩৭,৫০৬,২০০
১০.২০১৮/১৯ (২৩ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত)-২,৯৭৫-৯,০৬২-৬২,২০২,৭০০-১,২১৭,১৫০ ৭৩৭-৬০,৯৮৫,৫৫০
সর্বমোট : ১৪,৫৩৭-৫১,৬৪৭-৪০৮,৫০৪,৩০০-৭,৪৩৫,৯৫২-৪,৪৪০-৪০১,০৬৮,৩৪৮

ভোক্তারা সচেতন হচ্ছেন। আইনটি সম্পর্কে অভিহিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তারা অভিযোগ দায়ের করছেন। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে অভিযোগের সংখ্যা ছিল মাত্র ৬৬২ টি। ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬১৪০ টিতে অর্থাৎ ১ বছরে প্রায় ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৭-২০১৮ এ অর্থ বছরে অভিযোগের সংখ্যা ছিল ৯০১৯ টি এ বছরেও গত ৬ মাসে প্রায় ৪৪৭১ টি অভিযোগ পাওয়া গেছে, অর্থ বছর শেষে অভিযোগের সংখ্যা ১০,০০০ (দশ হাজার) ছাড়িয়ে যাবে মর্মে প্রতীয়মান হয়।

বছর ওয়ারী অভিযোগ প্রাপ্তির সংখ্যা নিম্নে দেখানো হলো
ক্রমিক-অর্থ বছর-অভিযোগ প্রাপ্তি-অভিযোগ নিস্পত্তি-অনিস্পন্ন অভিযোগ (সংখ্যা)
১-২০১৪-২০১৫-২৬৪-২৬৪-
২-২০১৫-২০১৬-৬৬২-৬৬২-
৩-২০১৬-২০১৭-৬১৪০-৬১৪০-
৪-২০১৭-২০১৮-৯০১৯-৯০১৯ –
৫-২০১৮-২০১৯ (২৩ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত)-৪৪৭১-১৮৯০-২৫৮১
সর্বমোট-২০,৭৩৫-১৮,১৫৪-২৫৮১

ভোক্তা ও বিক্রেতাকে সচেতন করার জন্য ২০১৫-১৬ সাল হতে ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের নিয়ে গণশুনানী ও মতবিনিময় সভা/ সেমিনার আয়োজন করা হচ্ছে।এখন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় ছাড়াও প্রত্যেক বিভাগীয় কার্যালয় ও জেলা কার্যালয়গুলোতে গণশুনানী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে প্রতি বুধবার সকাল ৯:৩০ ঘটিকা হতে গণশুনানী হয়ে থাকে। জেলা ও উপজেলা কমিটি কর্তৃক বছরের বিভিন্ন সময়ে মতবিনিময় সভা ও বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবসে সেমিনারের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এ পর্যন্ত ৩৫৩৭টি সেমিনার ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গণশুনানী ২ বছর আগে হয়েছিল মাত্র ০৮টি, গত বছর ৫২০টি। এ অর্থ বছরে ৬০০টির বেশী হবে।

বছর ওয়ারী গণশুনানীর সংখ্যা
ক্রমিক-অর্থবছর-গণশুনানী-মতবিনিয়ম সভা/সেমিনার
১-২০১৫/১৬ অর্থবছর-৮-১০৫০
২-২০১৬/১৭ অর্থবছর-৩৫৯-১২৮৩
৩-২০১৭/১৮ অর্থবছর-৫২০-১২০৪
৪-২০১৮/১৯ (৮ ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত) অর্থবছর-২৮৭–
সর্বমোট-৪ বছর-১৩৭৪-৩৫৩৭

ভোক্তা ও বিক্রেতাকে সচেতন করার জন্য ২০০৯-১০ সাল হতে ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ সকল জনগণের মধ্যে পোস্টার, প্যাম্টলেট, লিফলেট ও স্টিকার বিতরণ করা হয়।

বছর ওয়ারী পোস্টার, প্যাম্টলেট, লিফলেট বিতরণের চিত্র
ক্রমিক নং-অর্থবছর-পোস্টার-প্যাম্পলেট-লিফলেট (সংখ্যা)
১-২০০৯/১০-১০,০০০-২০,০০০-৩০,০০০
২-২০১০/১১-১২,০০০-৩০,০০০-৩৫,০০০
৩-২০১১/১২-১২,০০০-৪০,০০০-৩৫,০০০
৪-২০১২/১৩-১৫,০০০-৬০,০০০-৪০,০০০
৫-২০১৩/১৪-২৫,০০০-১,০০,০০০-৫০,০০০
৬-২০১৪/১৫-৪০,০০০-১,২০,০০০-৮০,০০০
৭-২০১৫/১৬-৫০,০০০-১,২০,০০০-১,০০,০০০
৮-২০১৬/১৭-১,০৫,৫৯৪-৩,০৪,২৮৪-৩,১৭,০১৩
৯-২০১৭/১৮-৮২,১৪৬-৩,১৫,২১৬-৪,০৩,২৩৭
১০-২০১৮/১৯-চলমান-
সর্বমোট-১০ বছর-৩,৫১,৭৪০-১১,০৯,৫০০-১০,৯০,২৫০
১৪-০৩-২০১৮ তারিখ পর্যন্ত ৩,৫১,৭৪০টি পোষ্টার, ১১,০৯,৫০০ টি প্যাম্পলেট ও ১০,৯০,২৫০ টি লিফলেট ভোক্তাদের মধ্যে বিরতণ করা হয়েছে।

জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর অধীন মহাপরিচালকের যে সকল ক্ষমতা ও কার্যাদি রয়েছে ঐ সকল ক্ষমতা ও কার্যাদি কোন জেলার স্থানীয় অধিক্ষেত্রে উক্ত জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের থাকবে। এক্ষেত্রে মহাপরিচালকের কোন পূর্বাণুমতি ব্যতিরেকেই তিনি ঐ সকল ক্ষমতা প্রয়োগ বা কার্যাদি সম্পন্ন করতে পারবেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তার পক্ষে কায© সম্পাদনের জন্য তার ক্ষমতা তার কোন নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেটকে অর্পণ করতে পারেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ও অন্যান্য কমিটি
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ নামে একটি পরিষদ আছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মাননীয় মন্ত্রী এ পরিষদের চেয়ারম্যান। ২৯ সদস্য বিশিষ্ট এ পরিষদে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থার/ সংগঠনের গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ রয়েছেন।
১১ সদস্য নিয়ে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কমিটি গঠিত। জেলা প্রশাসক পদাধিকারবলে এ কমিটির সভাপতি।
১৮ সদস্য নিয়ে উপজেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কমিটি গঠিত। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কমিটির সভাপতি।
২০ সদস্য বিশিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ কমিটিতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ভোক্তা অধিকার সংক্রান্ত কার্যক্রম এখনও ইউনিয়ন কমিটি কর্তৃক চাঙ্গা হয়নি।

উপসংহার
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ৯ বৎসর বয়সের একটি নবীন সংস্থা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় এবং মাননীয় মন্ত্রী বাণিজ্য মন্ত্রনালয়-এর নেতৃত্বে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কার্যকর ও শক্তিশালী হচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাচেছ নবদিগন্তে, অধিদপ্তর এগিয়ে যাচ্ছে নুতন উদ্যমে নতুন কর্মশক্তিতে। ভোক্তা বিরোধী কার্যক্রম প্রতিরোধকল্পে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আগামী অর্থ বছরে ভোক্তার অধিকার লিখা সম্বলিত ১০০ টি বড় বিলবোর্ড জেলা গুলোতে স্থাপনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পরবর্তী বছরে সবগুলো উপজেলাতে বড় বিলবোর্ড স্থাপনের পরিকল্পনা আছে অধিদপ্তরের। বর্তমানে কেবল জাতীয় পর্যায়ে ভোক্তা সম্পর্কিত রচনা প্রতিযোগিতা হয়। আগামী অর্থ বছর হতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের আওতায় ভোক্তা সংক্রান্ত মোবাইল অ্যাপস তৈরী করা হচ্ছে। আগামী অর্থ বছরে বাজার অভিযান ৭,০০০ (সাত হাজার)টি, গণশুনানী ৬০০ (ছয়শত)টি ও মতবিনিময় সভা ১,৩০০ (এক হাজার তিনশত)টি করার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উদ্যোগসমূহ দৃশ্যমান হচ্ছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। পূর্বে বর্ণিত বছর ওয়ারী বিভিন্ন পরিসংখ্যান হতে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে অধিদপ্তরের গতি ক্রমবর্ধমান। তবে সর্বসাধারণের নিকট এ আইনটি পৌঁছে দেয়া অধিদপ্তরের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। স্বল্প সময়ে বাংলাদেশের সব ভোক্তা জানতে পারবে এ ধারণা করা ঠিক হবে না।

ক্যাব ব্যতীত জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের আর কোন সহযোগী এনজিও নেই। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু অধিকার, স্যানিটেশন, সুশাসন, দারিদ্র বিমোচন ইত্যাদির জন্য বাংলাদেশে অনেক এনজিও আছে, কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ভোক্তা অধিকার বাস্তবায়নের জন্য আর কোন এনজিও’র কোন ভূমিকা নেই। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও প্রায় ২০০টির মত সংস্থা ভোক্তা অধিকার বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত। এ অধিদপ্তরকে আরো স্পন্দনশীল (Vibrant) করতে স্থানীয় প্রশাসন, ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সর্বশেষে বলা যায় ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা- কর্মচারীদের প্রয়াস হবে নিরন্তর।