লকডাউনে ভোগান্তির মধ্যেও ঢাকা ছাড়ার হিড়িক, উধাও স্বাস্থ্যবিধি

করোনার সংক্রমণ রোধে ১৮ দফা নির্দেশনার পর আগামীকাল সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য আবারও সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। এ খবরে মানুষের মধ্যে রাজধানী ছাড়ার হিড়িক পড়েছে। এজন্য গতকাল শনিবার বিকাল থেকেই ঢাকায় রেল,লঞ্চ ও বাস টার্মিনালে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সামাজিক দুরত্ব, মাস্ক পরিধান বা অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই।

এ সময় দেখা গেছে, হাতে ও কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ফুটপাতে হাঁটছেন নানা পেশার মানুষ। তাদের লক্ষ্য গন্তব্যের বাসে ওঠা। লকডাউনের সময় কর্মহীন সময় কাটাতেই গ্রামের দিকে ছুটছেন তারা। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষেরা ঢাকা ছাড়ছেন। তবে বাস টার্মিনালে অনেক যাত্রী ও টিকিট কাউন্টারে অনেকের মুখের পরিবর্তে থুতনিতে মাস্ক দেখা যায়।

অনেক গণপরিবহনে সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করতেও দেখা গেছে। এসব যানে দেয়া হচ্ছে না হ্যান্ডস্যনিটাইজার। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করেছে বিআরটিসির অনেক বাস, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক যাত্রী। বাস টার্মিনালে তীব্র রোদে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর বাসের দেখা মিললেও সঙ্গে সঙ্গে হুমড়ি খেয়ে উঠতে দেখা গেছে যাত্রীদের। এ সময় অনেকের মুখে ছিল না মাস্ক। আর বাসের স্টাফরা মাস্ক পরে থাকলেও তা থুতনিতে ঝুলতে দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সংক্রমণ ঠেকাতে যখন সরকার গণপরিবহনে আসন সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে যাত্রী পরিবহন চলাচলের নির্দেশনা দিয়েছেন তখন খোদ বিআরটিসি বাস অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলেছে।এমন অবস্থায় বাসে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচলের সিদ্ধান্ত নেয়ার সমালোচনাও করছেন ভুক্তভোগী মানুষ।

এছাড়াও মানুষের চলাচল সীমিত করতে কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আজ দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সকল প্রকার গণপরিবহন ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না। সকল সরকারি বেসরকারি স্বায়ত্তশাসিত অফিস ও আদালত জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য সীমিত পরিসরে প্রয়োজনীয় জনবলকে প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় অফিসে আনা নেয়া করতে পারবে। শিল্প কারখানা ও নির্মাণ কার্যাদি চালু থাকবে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত জরুরি অতিপ্রয়োজন ব্যতীত বাইরে বের হওয়া যাবে না।

জানা গেছে, লকডাউনের ঘোষণা শোনার পরপরই কাউন্টারগুলোতে টিকিটপ্রত্যাশীরা যোগাযোগ শুরু করেন। অনেকে আবার সপরিবারে ভোরে টার্মিনালে এসে টিকিটের জন্য অপেক্ষা করছেন। তবে কাউন্টারগুলো থেকে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হচ্ছে না। শুধু সরকারিভাবে যে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছিল তাই কাউন্টার থেকে নেয়া হচ্ছে।

আফরোজা রহমান নামের একজন যাত্রী ময়মনসিংহের টিকিট কিনেছেন। তিনি বলেন, লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্য লকডাউনের একদিন আগেই গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছি। টিকিট পেতে অনেক সমস্যা হয়েছে। দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে বাসের টিকিট মিলছে, তবে ভাড়া ৬০ শতাংশ ছাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে না।

এদিকে গাবতলী বাস টার্মিনাল ও আব্দুল্লাহপুর বাস টার্মিনালে সকাল থেকে ঘরমুখী মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। গতকাল শনিবার রাত থেকে বেড়েছে টিকিট বিক্রি। তবে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাসগুলো অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

ভোক্তাকন্ঠ- এইচএম