নিত্যপণ্যের বাজারে মূল্যবৃদ্ধির খড়গ

।। বাজার দর ডেস্ক ।।

হঠাৎ করে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ১ সপ্তাহের ব্যবধানে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। কেজিতে মুরগির দাম বেড়েছে ১০ টাকা। একাধিক মাছের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০-৪০ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দামও বাড়তি।

আর ১০ টাকা বেড়ে প্রতি ডজন (১২ পিস) ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০৫-১১০ টাকা। বেড়েছে সবজির দামও। তবে পেঁয়াজ, গরুর মাংস, চালসহ বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মালিবাগ ও নয়াবাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। খবর দৈনিক যুগান্তরের।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের চিকেন মার্কেটের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জান যায়, ১ মাস ধরে ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি সপ্তাহে ৫-১০ টাকা করে বাড়ছে। সর্বশেষ শুক্রবার কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১৫০-১৫৫ টাকা বিক্রি হয়। গত সপ্তাহে কেজি বিক্রি হয়েছে ১৪০-১৪৫ টাকা।

একই ভাবে শুক্রবার কক মুরগি বিক্রি হয়েছে ২১০-১২৫ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ২০০ টাকা। আর পাকিস্তানি মুরগির বিক্রি হয় কেজি ২৬০-২৮০ টাকায়। তবে স্থিতিশীল ছিল গরু ও খাসির মাংসের দাম। এদিন বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয় ৪৮০-৫০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৭৮০ টাকা।

বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. জলিল ও সিকান্দার যুগান্তরকে জানান, মুরগির সরবরাহ কম। এর মধ্যে মৌসুমে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মুরগির অর্ডার বেড়ে যাওয়ায় বাজারে একটু ঘাটতি দেখা দিয়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। এ সুযোগে খামার পর্যায়ে মুরগির দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। একটু বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে বলে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

এদিকে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছেই। শুক্রবার ৫ লিটারের এক বোতল সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৪৯০-৫০০ টাকা। যা ১ সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ৪৮০ টাকা। এদিন প্রতি কেজি খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৮৮-৯০ টাকা। যা গত ২ সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ৮২-৮৩ টাকা।

রাজধানীর নয়াবাজারের তুহিন স্টোরের মালিক মো. তুহিন বলেন, ভোজ্যতেল কোম্পানিগুলো তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ডিলারদের কাছ থেকে বেশি দামে তেল আনতে হচ্ছে। তাই খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।

অন্যদিকে খুচরা বাজারে ডিমের দামও বাড়তি। শুক্রবার ফার্মের মুরগির (লাল ডিম) প্রতি ডজন বিক্রি হয়েছে ১০৫-১১০ টাকা। সে হিসাবে এক হালি (৪ পিস) ডিমের দাম হয় ৩৫-৩৬ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ৩২-৩৪ টাকায়। অন্যদিকে হাঁসের ডিম প্রতি হালি বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা দরে।

এছাড়া শুক্রবার সবজির বাজারে উত্তাপ দেখা যায়। এদিন বেগুন, শালগম, মুলা, পেঁপে ও বিচিবিহীন শিম বিক্রি হয় ২০-২২ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১০-১৫ টাকা। আর বিচিসহ শিম বিক্রি হয় ৪০-৫০ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ২০-৩০ টাকা কেজি। এছাড়া প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হয় ২০-৩০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৫-২০।

বাজারে নতুন আসা কচুর লতি বিক্রি হয়েছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। চিচিঙ্গা ও করলা বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা। প্রতি পিস লাউ বিক্রি হয় আকার ভেদে ৫০-৭০ টাকা। আর ধুন্দুল বিক্রি হয় ৪০-৫০ টাকা কেজি। অন্যদিকে গত সপ্তাহের মতো পাকা টমেটো বিক্রি হয়েছে ২০-২৫ টাকা কেজি। নতুন আলু প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১৫-২০ টাকা।

রাজধানীর বাজারগুলোর সবজি বিক্রেতারা বলছেন, শীত মৌসুম শেষ। এজন্য শীতের সবজির সরবরাহ কম। তাই দাম বেশি। গ্রীষ্মের সবজি বাজারে আসতে শুরু করেছে। তবে পরিমাণে কম।

ছুটির দিনে মাছে বাজারে অস্থিরতা দেখা গেছে। এদিন পাঙাশ বিক্রি হয় ১৪০-১৫০ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১২০-১৩০ টাকা। রুই বিক্রি হয় ২৬০ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ২২০ টাকা। তবে বড় আকারের রুই গত সপ্তাহের মতো ৪৫০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

পাবদা বিক্রি হয় মানভেদে ৫০০-৭০০ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৫০-৬০০ টাকা। তেলাপিয়া বিক্রি হয় ১৫০-১৮০ টাকা কেজি। যা সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। এছাড়া গত সপ্তাহে ২২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মৃগেল শুক্রবার বিক্রি হয় ২৬০-২৮০ টাকা কেজি। টেংরা বিক্রি হয় ৫০০-৬৫০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে একই দামে বিক্রি হয়। শিং বিক্রি হয় ৪০০-৬০০ টাকা কেজি, বোয়াল বিক্রি হয় ৫০০-৮০০ টাকা কেজি, চিতল বিক্রি হয় ৫০০-৮০০ টাকা কেজি।

রাজধানীর নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. সেলিম আহমেদ বলেন, বাজারে এসে দেখি সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তি। যে বাজেট নিয়ে বাজারে এসেছিলাম তা দিয়ে সম্পূর্ণ বাজার করতে পারব না। এভাবে যদি দিন যেতে থাকে তাহলে বেঁচে থাকাটাই কষ্টের হয়ে উঠবে। আর এসব দেখার যেন কেউ নেই।