হতাশা ও ভয়ের পহেলা বৈশাখ

আজ বাংলা বর্ষ ১৪২৮ এর শুরু। বাংলা বছরের এই শুরুটা উৎসব এর মাঝেই হওয়ার কথা ছিলো যেমনটা আমরা ২বছর আগেও করে আসতাম। জি হা এটা আমাদের টানা দ্বিতীয় বছর হতে চলেছে যেখানে বাড়িতে বসে বর্ষবরণ করতে হচ্ছে মহামারী করোনার কারনে।গত বছরের মত এই বছরেও ভয়াবহ বাস্তবতার মাঝে বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম দিনকে স্বাগত জানাতে হচ্ছে। শুভ নববর্ষ।
অন্য সব বর্ষ বরণের দিনের মত এবার হবেনা রমনার বটমূলের নীচে “এশো হে বৈশাখ, এশো এশো” গানটি। গত বছরের মত এবারেও থাকবেনা রঙিন করে সাজানো রাস্তাঘাট ,হবেনা কোনো রঙিন কোনো উচ্ছাস।তবে এই বছরে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে একটি রঙিন, অনুষ্ঠানমূলক শোভাযাত্রা মঙ্গল শোভাজাত্রা থাকবে, যা উৎসবের মূল ভিত্তি। গত বছর মহামারীর কারণে মিছিলটি থামানো হয়েছিল।বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সমাবেশে সর্বাধিক ৩০ জনকে অনুমতি দেবে, যা রেকর্ড করা হবে এবং গণমাধ্যমে পাঠানো হবে।

মুঘল সম্রাট আকবর বার্ষিক কর সংগ্রহ বন্ধ উপলক্ষে বাংলা নববর্ষ – নব বরশা উদযাপনের ঐতিহ্য চালু করেছিলেন।ঐতিহ্যগতভাবে, ব্যবসায়ী এবং দোকানদাররা এই দিনে একটি নতুন “হালখাতা” (অ্যাকাউন্ট রেজিস্টার) খুলতেন এবং তাদের ক্লায়েন্টদের মিষ্টি খাবার সরবরাহ করে এটি উদযাপন করতেন।

সময়ের সাথে সাথে, এই গণ উদযাপনের একটি দিন এবং বাঙ্গালি সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে বিবর্তিত হচ্ছে। ধর্ম, সম্প্রদায়, শ্রেণী ও ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ দিনটি কে এক জাতি হিসাবে উদযাপন করায় এটি একটি অসাম্প্রদায়িক উৎসব হিসাবে বিবেচিত হয়ে রয়েছে এখনো।
আজ আমাদের দেশে ধর্মনিরপেক্ষ লোকাচারের গভীরে নিহিত এই বর্ষবরণের দিনটিতে পবত্রি মাহে রমজানের এর প্রথম দিনও বটে তাই আজকে থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা সিয়াম-সাধনা, ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আসকার এবং তাজকিয়া ও আত্মশুদ্ধির মাঝে মাসটি পালন করবে।
দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভয়াবহতা এর ফলে সরকার সমস্ত জনসাধারণের কর্মসূচি স্থগিত করা, সকলকে পহেলা বৈশাখের জন্য কোনও গণসমাবেশ বা বহিরঙ্গন উদযাপন না করতে বলাটাই স্বাভাবিক।

করোনা ভাইরাসের চলমান দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ সামাল দিতে আজ বুধবার থেকে শুরু হয়েছে দেশব্যাপী আট দিনের (১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত) কঠোর বিধিনিষেধ।সেই জন্যই বাধ্য হয়েই বলতে হচ্ছে বছরের শুরুর দিন উৎসব মুখর হওয়ার বিপরীতে হতাশা এবং ভয়ের মাঝেই দিন কাটাতে হচ্ছে। তবে আশা করা যায় অতি শীঘ্রই এই মহামারী অবস্থা আমরা কাটিয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে পারবো ,যদিও এমন কবে হবে তা হক করে বলা যাবেনা কিন্তু আশা তো করাই যায়।