মিটারে যায় না সিএনজি অটোরিকশা, লঙ্ঘিত ভোক্তা অধিকার

।। পরিবহন ডেস্ক ।।

রাজধানীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলো বলতে গেল মিটারে চলে না। অথচ যাত্রীর ইচ্ছামতো গন্তব্যে মিটার অনুযায়ী চলাচল করবে, এটাই আইন। কিন্তু গত দেড় যুগেও আইনটি বাস্তবায়ন করা যায়নি। এর ফলে লঙ্ঘিত হচ্ছে ভোক্তার অধিকার। কিন্তু এ অধিকার বাস্তবায়নের দায়িত্বে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত থাকা সত্ত্বেও সিএনজি অটোরিকশার মালিক ও চালকরা এমন অনিয়ম অব্যাহত রাখার সুযোগ পাচ্ছেন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজধানীতে মাত্র ২ শতাংশ অটোরিকশা মিটারে চলে। আর ৮৮ শতাংশ অটোরিকশা যাত্রীদের চাহিদামতো গন্তব্যে যেতে রাজি হয় না। অথচ বিদেশি সংস্থাগুলোর অ্যাপসনির্ভর যাত্রীসেবা চালুর প্রথম দিন থেকেই তাদের সঙ্গে যুক্ত সব ধরনের বাহনই মিটার মেনে চলাচল করছে। অটোর এই নৈরাজ্য দমনে ট্রাফিক বিভাগের কোনো তৎপরতা নেই।

ঢাকা শহরে ২০০২ সালের শেষ দিক থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল শুরু হয়। ৯ বছর মেয়াদি হলেও মালিকপক্ষের দাবির মুখে এগুলোর মেয়াদ তিন দফা বাড়িয়ে ১৫ বছর করা হয়। ১৫ বছরের মেয়াদ শেষ করা অটোরিকশাগুলো নতুন করে প্রতিস্থাপন করছে বিআরটিএ। এর মধ্যে যাত্রী ভাড়া পাঁচবার এবং জমা (ভাড়া হিসেবে চালকদের কাছ থেকে মালিকপক্ষ যে টাকা নেন) বাড়ানো হয় তিন দফা। কিন্তু কিছুতেই ভোক্তার সুবিধা হয়নি।

১ থেকে ১০ মার্চ ২০১৯ রাজধানীর ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ২৫৬টি অটোরিকশার যাত্রী সেবার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। পাশাপাশি কথা বলা হয় ৩১০ জন যাত্রীর সঙ্গে। এই পর্যবেক্ষণ শেষে যাত্রী কল্যাণ সমিতি তাদের প্রতিবেদনে বলছে, এই খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো যায়নি।

সংস্থাটি জানিয়েছে, ঢাকা মহানগরীতে চলাচলরত অটোরিকশার ৯৮ শতাংশই চুক্তিতে চলে। মিটারে চলাচলকারী অটোরিকশার ৯২ শতাংশ ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত মিটারের অতিরিক্ত ভাড়া বা বকশিশ দাবি করে। তবে বৃষ্টি বা সরকারি ছুটির আগের দিন অথবা গণপরিবহন সংকটকালীন এই বকশিশের পরিমাণ ১০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। যাত্রীদের পছন্দমতো গন্তব্যে যেতে রাজি হয় না ৮৮ শতাংশ অটোরিকশা।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্যবেক্ষণের সময় (সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত) অটোরিকশাকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থার তৎপরতা চোখে পড়েনি।

অটোরিকশা খাতকে এই নৈরাজ্য থেকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে সাত দফা সুপারিশ করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৪০ হাজার নতুন অটোরিকশা নামানো, কোম্পানিভিত্তিক অথবা অ্যাপসভিত্তিক অটোরিকশা পরিচালনার ব্যবস্থা, নীতিমালা লঙ্ঘন করলে অটোরিকশা এক বছর আটকে রাখা ও নতুন অটোরিকশা নিবন্ধনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করা, প্রভৃতি।