সমন্বিত বৈশ্বিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার পাশাপাশি কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াই

চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে- এ কথা সবাই কমবেশি বলছে। এবার রয়টার্সের এক জরিপে জানা গেল, এ বছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পালে এতটাই হাওয়া লাগবে যে ১৯৭০ সালের পর যা নাকি আর দেখা যায়নি। ৫০০ জন অর্থনীতিবিদের ওপর এই জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে।

এই পুনরুদ্ধারের পেছনে প্রধান টোটকা কাজ করবে টিকাদান কর্মসূচি। তার সঙ্গে যুক্ত হবে অভূতপূর্ব রাজস্ব সহায়তা। বাইডেনের ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ যার আদর্শ স্থাপন করেছে। জানা গেছে, বাইডেন প্রশাসন আরও কিছু করার কথা ভাবছে। তবে টিকাদান সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত মানুষের চলাচল স্বাভাবিক হবে না। সেই বাস্তবতা মাথায় রেখে অর্থনৈতিক তৎপরতায় নানা ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে

তবে পুনরুদ্ধারের পথ অতটা সহজ-সরল হয়তো হবে না। ভারতের মতো দেশে দ্বিতীয় ঢেউ যেভাবে ফণা তুলে দাঁড়িয়েছে, তাতে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া লাইনচ্যুত হবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। এই প্রশ্নের জবাবে অবশ্য অর্থনীতিবিদেরা বিভক্ত মত দিয়েছেন।

তবে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় খবর হচ্ছে চীনের সংকট-পূর্ব কালে ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা। যে গতিতে তারা করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে এনেছিল, একই গতিতে তারা অর্থনীতিকে প্রাক্‌-কোভিড পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। তার সঙ্গে আছে যুক্তরাষ্ট্রের ঘুরে দাঁড়ানো। বাইডেন প্রশাসনের প্রণোদনা প্যাকেজের কল্যাণে ১৯৮৪ সালের পর ২০২১ সালে দেশটির সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হবে পূর্বাভাস দিয়েছেন অর্থনীতিবিদেরা।

এইচএসবিসির বৈশ্বিক প্রধান অর্থনীতিবিদ জেনেট হেনরি রয়টার্সকে বলেন, ‘সমন্বিত বৈশ্বিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া চলছে, পাশাপাশি কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইও জারি আছে। যেসব দেশে আমরা কাজ করছি, তারা সবাই এবার ভালো করবে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে দেশে দেশে সরকারি নীতির ওপর, তারা কি মহামারি দূর করার চেষ্টা করে, নাকি তারা সেটা চাপা দিয়ে রাখে, তার ওপর। এ ছাড়া টিকা প্রাপ্তি, পরিবারের সঞ্চয় ভাঙার প্রবণতা ও নীতিগত প্রণোদনার ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করছে।’

জীবনঘাতী এই মহামারির ধাক্কায় বৈশ্বিক অর্থনীতি গত বছর গভীরতম মন্দার কবলে পড়ে। তবে এবার সব দেশই ঘুরে দাঁড়াবে বলে ধারণা করছেন অর্থনীতিবিদেরা। রয়টার্সের এই জরিপের ফল হচ্ছে, এ বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ-১৯৭০ সালের পর সর্বোচ্চ। তবে জানুয়ারি মাসের পূর্বাভাস ছিল ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

সবকিছু নির্ভর করছে দেশে দেশে সরকারি নীতির ওপর, তারা কি মহামারি দূর করার চেষ্টা করে, নাকি তারা সেটা চাপা দিয়ে রাখে, তার ওপর। এ ছাড়া টিকা প্রাপ্তি, পরিবারের সঞ্চয় ভাঙার প্রবণতা ও নীতিগত প্রণোদনার ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করছে।’ জেনেট হেনরি, প্রধান অর্থনীতিবিদ, এইচএসবিসি।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস হচ্ছে, এবার ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৩০ শতাংশ অর্থনীতিবিদের ভাষ্য, এবার প্রবৃদ্ধি আইএমএফের পূর্বাভাস ছাড়িয়ে যাবে। এ ছাড়া ৮৫ শতাংশ অর্থনীতিবিদ আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, এবারের প্রবৃদ্ধির গতি প্রত্যাশাতীত হবে।

প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস উজ্জ্বল হলেও শ্রমবাজারের পুনরুদ্ধার শিগগিরই গতি পাবে না। পূর্বাভাস হচ্ছে, এ বছর কোনো উন্নত দেশেই বেকারত্বের হার মহামারি-পূর্ব সময়ে ফেরত যাবে না। তবে লাখ লাখ কোটি ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজের কল্যাণে শ্রম বাজারের পূর্বাভাস গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ভালো হলেও বহু মানুষ আরও কিছুদিন বেকার থাকবেন বলেই জরিপে দেখা গেছে। অনিশ্চয়তা যত দিন থাকবে বা মানুষের চলাচলে যত দিন বিধিনিষেধ থাকবে, তত দিন এই পরিস্থিতি থাকবে।

এদিকে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ একইভাবে ক্ষত সারিয়ে তুলবে, এমন সম্ভাবনা কম। দেখা যাচ্ছে, এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপের কিছু জায়গা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যে সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছেছিল, সেই অগ্রগতি কিছুটা স্থবির হয়ে পড়েছে।

প্রণোদনার কারণে দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা বেশি থাকবে বলেই অর্থনীতিবিদেরা ধারণা করছেন। ৮০ শতাংশ অর্থনীতিবিদ এমনটা মনে করছেন। উন্নত দেশগুলোতে মানুষের পুঞ্জীভূত চাহিদা এবং অর্থনীতি পুনরায় চালু হওয়ার কারণে এমনটি ঘটছে।

তবে এই পরিস্থিতি দীর্ঘ সময় থাকবে না বলেই মনে করছে রয়টার্স। তাদের ধারণা, আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে অধিকাংশ দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

সুত্র: প্রথম আলো/ এমএস