৫ হাজার নয়, আড়াই হাজার টাকা করে পাবেন কৃষকরা

৩৬ জেলার নয়, ছয় জেলার ৯৮ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। জেলাগুলো হচ্ছে গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও গাইবান্ধা। প্রতি কৃষকের নগদ সহায়তাও পাঁচ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে করা হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ টাকা। এতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ব্যয় হবে প্রায় ২৫ কোটি টাকা।

অথচ দুই সপ্তাহ আগেই এক লাখ কৃষককে ৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুরো বিষয়টি নিয়ে নতুন করে কাজ করছে। আগামীকাল রোববারের মধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের একটি তালিকা তৈরি করে অর্থ বিভাগ এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে বলে জানা গেছে। তালিকায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ থাকবে।

তবে সহায়তা ঘোষিত ৫ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে যে আড়াই হাজার টাকা করা হচ্ছে, তার জন্য প্রথমে অর্থমন্ত্রীর, পরে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন লাগবে আবার।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই বিষয়ে বলেন, প্রাথমিকভাবে বেশি জেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তথ্য এসেছিল। পরে যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে, সহায়তা পেতে পারেন ৯৭ হাজার ৫০৫ জন কৃষক।

প্রধানমন্ত্রী একবার ৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করার পরে এখন কেন তা আড়াই হাজার করা হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আরও তো অনেক খরচ আছে। তবে আড়াই হাজারের কথা বলা হলেও প্রধানমন্ত্রী যে ৫ হাজারের প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন, সেটি উল্লেখ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটিই চূড়ান্ত হবে। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই সিদ্ধান্তটি পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থ বিভাগ দুই সপ্তাহ আগে ‘করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত নিম্ন আয়ের প্রায় ৩৫ লাখ পরিবারসহ অতিসম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নগদ অর্থসহায়তা’ শীর্ষক সার-সংক্ষেপ পাঠায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। তাতে বলা হয়, ৩৫ লাখ পরিবারকে এককালীন ২ হাজার ৫০০ করে দেওয়ার জন্য ৮৮০ কোটি টাকা এবং এক লাখ কৃষককে এককালীন ৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার জন্য ৫০ কোটি টাকা লাগবে। উভয় সহায়তা দেওয়া হবে মোবাইলে আর্থিক সেবা দাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।

প্রধানমন্ত্রী ওই সার-সংক্ষেপ অনুমোদন করার পর গত ১৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। এরপর ৩৫ লাখ পরিবারকে নগদ সহায়তা দেওয়ার প্রস্তুতি শেষ করেছে সরকার।

আগামীকাল রোববার প্রধানমন্ত্রী এ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন বলে গত বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে। অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, প্রথম দফায় টাকা পৌঁছাবে ৬ লাখ পরিবারের কাছে। এ সহায়তার বড় অংশ বিতরণ করবে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদ।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপিত সার-সংক্ষেপে কৃষকদের সহায়তার বিষয়ে বলা হয়েছিল, দেশের ৩৬ জেলার মোট ফসলি জমি ৩০ লাখ ৯৪ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে ৪ থেকে ৯ এপ্রিলের ঝোড়ো হাওয়া, গরম বাতাস, শিলাবৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ে ১০ হাজার ৩০০ হেক্টর ফসলি জমি সম্পূর্ণ এবং ৫৯ হাজার হেক্টর ফসলি জমি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে এক লাখ কৃষক সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ এই ব্যাপারে জানান, ‘দেখা গেছে যে এক হেক্টর বা অর্ধেক হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। আবার এমনও জেলা রয়েছে যে অল্প কয়েকজন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব নিয়েই ৩৬ জেলার তথ্য দেওয়া হয়েছিল। তবে পরে দেখা গেছে, বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬ জেলার ফসল। তাই ৬ জেলার কৃষককে সহায়তা দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পরও কৃষকদের সহায়তা কেন কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এ নিয়ে জানতে চাইলে মো. আসাদুল্লাহ কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না বলে জানান। তবে অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, ৩৫ লাখ পরিবারের জন্য যে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা রাখা হয়েছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতেই কৃষকদের জন্য একই পরিমাণ রাখা হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ক্ষতিগ্রস্ত যে ৩৬ জেলার তথ্য কৃষি মন্ত্রণালয় এবং অর্থ বিভাগকে পাঠিয়েছে, সেগুলো হচ্ছে গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, কুমিল্লা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, নড়াইল, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নোয়াখালী, খুলনা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুর, ভোলা, ঝালকাঠি ও পটুয়াখালী।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে বোরো ধান, ভুট্টা, শাকসবজি, সূর্যমুখী, কলাবাগান ও চিনাবাদাম। এ ছাড়া ক্ষতি হয়েছে প্রায় এক লাখ টন পণ্য, যার দাম ৩৩৪ কোটি টাকার সমান।

আর বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে বোরো ধানেরই ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া ধ্বংস হয়ে গেছে নরসিংদী ও ঝিনাইদহের কলাবাগানগুলো। কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও কুমিল্লা জেলায় বেশি ক্ষতি হয়েছে ভুট্টা ও সূর্যমুখীর। আর নারায়ণগঞ্জ জেলায় বেশি নষ্ট হয়েছে শাকসবজি।

প্রথম আলো সুত্রমতে কৃষিসচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম গত মঙ্গলবার বলেন, ‘তালিকা তৈরির মূল কাজটি করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। আগামী সপ্তাহে এটি হবে এবং আশা করছি ঈদের আগেই কৃষকদের কাছে সহায়তার টাকা পৌঁছে দেওয়া যাবে।’

সুত্র: প্রথম আলো/ এমএস