কমছে চালের দাম

চালের দাম পাইকারিতে ও মিলগেটে কেজিতে দুই থেকে আট টাকা পর্যন্ত কমেছে ঠিকই, কিন্তু এর সুফল ভোক্তারা পাচ্ছেন না। খুচরায় আগের চড়া দামেই চাল কিনতে হচ্ছে তাঁদের।

খুচরায় সব ধরনের চালের দাম গত এক সপ্তাহে কমেনি বলে জানান সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এবং ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, এবার বোরোতে ২ কোটি ৫ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। বোরো পেকে ওঠার আগে এপ্রিলের শুরুতে কালবৈশাখী ঝড় ও দাবদাহে এক লাখ টন চালের সমপরিমাণ ধান নষ্ট হয়েছে। তবে গত বছরের চেয়ে এবার বেশি জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। ফলে মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে যাবে বলে মন্ত্রণালয় থেকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।

এখন যে ধানগুলো উঠছে, সেগুলো কিছুটা ভেজা। এগুলো শুকালে দাম আরও বাড়বে। সরকার এবার ধান কাটা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বোরো সংগ্রহ শুরু করেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ধান বেশি করে কেনায় এবার কৃষকেরা লাভবান হবেন। আর বিদেশ থেকেও চাল আমদানির দরকার হবে না বলে জানান কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।

কুষ্টিয়া, নওগাঁ ও রংপুরে ধান-চালের ব্যবসা বেশি হয়। সেখানকার হাটগুলোতে প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণ ধান উঠছে। সরকার প্রতি কেজি মোটা ধান ২৭ টাকায় কেনার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু রংপুরে প্রতি কেজি ধান ২০ টাকা, নওগাঁয় ১৭ থেকে ১৮ টাকা এবং কুষ্টিয়ায় ১৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে এগুলো মূলত ভেজা ধান। শুকালে দাম কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা পর্যন্ত বাড়বে। তাতেও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ধানের দাম কমই থাকছে। তবে, কুষ্টিয়ার চালের মোকামে গত এক সপ্তাহ আগেও মাঝারি মানের চালের ৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। বৃহস্পতিবার তা কমে ২ হাজার ৬০০ টাকায় নেমে এসেছে। এতে প্রতি কেজির দাম ৫৯ থেকে কমে ৫২ টাকা হয়েছে। মোটা চালের কেজি ৪০-৪২ থেকে কমে ৩৮ টাকায় এসেছে।

টিসিবির হিসাব বলছে, খুচরা বাজারে মোটা চাল প্রতি কেজি ৪৪ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি সরু চাল ৫৫-৬৪ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি চাল ৫০ থেকে ৫৬ এবং সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৪ টাকায়। সব ধরনের চালের দাম গত এক সপ্তাহে ১ থেকে ২ টাকা কমেছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. এম আসাদুজ্জামান বলেন, বোরো ধান ওঠার সময় যাতে চালকলমালিকেরা দ্রুত ধান কেনা শুরু করেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। তাঁরা কৌশল খাটিয়ে দেরিতে ধান কেনা শুরু করেন, দাম কমিয়ে দেন। সেটা যাতে না হয়, তা খেয়াল রাখার পাশাপাশি পাইকারি চালের দাম এতটা কমার পরও কেন খুচরাতে কমছে না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।

বাংলাদেশ অটো, মেজর, হাসকিং ও রাইস মিল সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ বলেন, ‘ধান কেনার জন্য বেশির ভাগ চালকলমালিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকেন। কিন্তু ব্যাংকগুলো আমাদের ঋণ দেওয়ার কাজকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না। তাই ঋণ পেতে দেরি হচ্ছে। এতে অনেকে ধান কেনা শুরু করতে পারেনি।’ ধানের দাম কম থাকার পরও চালের দাম কেন কমছে না, জানতে চাইলে দেশের অন্যতম বড় ওই চালকলের মালিক বলেন, ‘বোরোর চাল বাজারে আসতে জুন-জুলাই লেগে যাবে। এখন বাজারে যে চাল বিক্রি হচ্ছে, তা আমনের, আর এগুলোর ধান আমাদের বেশি দামে কিনতে হয়েছে।’