তিন কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া প্রয়োজন

গত এক বছর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ফলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বন্ধের সময় শিক্ষার্থীদের বিকল্প উপায়ে পাঠদান করতে গিয়ে অভিভাবকদের ব্যয় বেড়েছে।

শিক্ষার ঘাটতি ঠেকানো, শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে ফিরিয়ে আনা এবং অভিভাবকদের আশঙ্কা দূর করতে পুনরায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া প্রয়োজন। এ মুহূর্তে তা করতে না পারলে শিক্ষার সুদূরপ্রসারী ক্ষতি অদূর ভবিষ্যতেও পূরণ করা সম্ভব হবে না।

পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশান রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) যৌথ একটি জরিপ প্রকাশ শেষে এসব সুপারিশ করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।

দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধের কারণে তিনটি প্রধান সংকট আমাদের সামনে এসেছে। এগুলো হলো- শিখন ঘাটতি, শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি এবং শিক্ষার বিভিন্ন স্তরের বৈষম্য। তাই আমাদের পরামর্শ হচ্ছে- এ তিন কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া উচিত বলেন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।

তিনি আরও বলেন, করোনার পর শিক্ষার পুনরুদ্ধারের জন্য অতিরিক্ত কার্যক্রম ও ক্লাসের বাইরের শিখন কর্মসূচিকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। নইলে আমাদের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ শুধুমাত্র শিক্ষা থেকেই দূরে সরে যাবে না, অদক্ষ হিসেবে বেড়ে উঠবে। দেশে প্রচলিত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের উপবৃত্তি কর্মসূচিকে শিক্ষা খরচ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে বলেও মত দেন তিনি।

বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন বলেন, স্কুলগামী শিশুদের একটা বড় অংশ শিখন ঘাটতির ঝুঁকিতে রয়েছে। সুতরাং, শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে শিশুদের খাপ খাওয়াতে স্কুল পুনরায় খোলার সময় প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার একটি মিশ্র পদ্ধতি নেওয়া দরকার।

মহামারির কারণে শিক্ষার্থীদের শহরে বসবাসরত ১০ থেকে ২০ বছর বয়সীরা (১৫ দশমিক ৭ শতাংশ) গ্রামের (৮ দশমিক ৪ শতাংশ) মানসিক চাপে রয়েছে। অভিভাবকদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী এই মানসিক চাপের লক্ষণগুলো হলো- অধৈর্য্য ভাব প্রকাশ, রাগ বা উগ্রভাব এবং বাইরে যেতে ভয় পাওয়া। অধিকাংশ অভিভাবক শিক্ষার ঘাটতি নিয়ে চিন্তিত। পাশাপাশি শিক্ষার ব্যয়ভার নিয়েও শঙ্কিত তারা।

শহরের শিক্ষার্থীদের মাঝে শিখন ঘাটতির ঝুঁকি বেশি বলে পরিলক্ষিত হয়েছে। মেয়ে শিক্ষার্থীর ২৬ শতাংশ এবং ছেলেদের ৩০ শতাংশ রয়েছে এ ঝুঁকিতে। দরিদ্রের মাঝে যারা অতি দরিদ্র, সেইসব পরিবারের মাধ্যমিক স্কুলগামী ৩৩ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থীর করোনার সৃষ্ট অর্থনৈতিক ধাক্কায় স্কুল ছেড়ে দেওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

দূরবর্তী শিখনের জন্য যে সুবিধা থাকা দরকার তা আছে বা ব্যবহার করছে ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী। সরকারি ও বেসরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে এই বন্ধে লেখাপড়া শেখার হার খুব কম। অবশ্য যারা দরিদ্র নয় এবং শহরের বস্তিতে থাকে মাধ্যমিক পর্যায়ের সেসব শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই হার একটু বেশি। একইসঙ্গে কোচিং-এ বা প্রাইভেট টিউশনে যাওয়ার প্রবণতা মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝেই বেশি (৬১ শতাংশ)। বিশেষ করে যারা দরিদ্র নয়, তাদের ক্ষেত্রে এই হার ৭৪ শতাংশ।

যদিও অনেকেই পড়াশোনা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে, তবুও অধিকাংশ শিক্ষার্থী ছয়টি উপায়ে তাদের পড়াশোনা চালিয়েছে। এগুলো হলো তদারকিবিহীন নিজস্ব পড়াশোনা, পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় পড়াশোনা, অনলাইনে বা টিভির মাধ্যমে দূরবর্তী শিখন, কোচিং/প্রাইভেট এবং স্কুল থেকে মাদ্রাসায় ভর্তি। তবে এসব ক্ষেত্রেও অনেক অনিয়ম ছিল।