ভ্যাকসিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হতে পারে

ভ্যাকসিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি আরো জটিল করে তুলেছে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান গণটিকাদান কর্মসূচি।টিকাদান কাজে ব্যবহূত সিরিঞ্জ-সুচ, স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহূত মাস্ক, গ্লাভস, পিপিই এবং বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বর্জ্য উত্পন্ন হচ্ছে প্রতিদিন। সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় এসব বর্জ্য বিভিন্ন ল্যান্ডফিলস, ইনসিনারেটর ও ইটিপির পাশাপাশি খোলা জায়গায়ও ফেলে দেয়া হচ্ছে। এসব বর্জ্য মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া ও ঝুঁকির কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে দেশে ‘কভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ নামের একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন এ প্রকল্পের পরিচালক আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বণিক বার্তাকে বলেন, প্রকল্পের আওতায় চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কাজ করা হবে। তবে এ অর্থবছরের আর দেড় মাসের মতো বাকি আছে। সেজন্য এখন করোনা রোগীদের চিকিৎসায় জরুরি যেসব সেবা প্রয়োজন, প্রকল্পের আওতায় সেসবের ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। এছাড়া ভ্যাকসিন কেনার জন্যও অর্থ বরাদ্দ আছে। ভ্যাকসিনের ব্যবস্থাপনা নিয়ে আগামী অর্থবছরের জন্য পরিকল্পনা করা আছে। ১০টি সদর হাসপাতাল ও ১০টি মেডিকেল কলেজে গণপূর্তের সহায়তায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলা হবে।

দেশের শতকরা ৮০ ভাগ জনসাধারণকে টিকার আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব জনগণকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। দেশে এমনিতেই চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা রয়েছে। এর মধ্যে কভিডের ভ্যাকসিন দেয়ার ফলে আরো বর্জ্য উৎপাদন হবে। তবে এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় একটি প্রকল্প চলমান আছে তাতে বলা হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য প্রকল্পের অধীনে নতুন কোনো ব্যবস্থা বা স্থাপনা তৈরি করা হবে না। বরং বর্তমানে বিদ্যমান সুবিধাগুলো অর্থাৎ ল্যান্ডফিলস, ইনসিনারেটর ও ইটিপিগুলো ব্যবহার করা হবে।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি বড় বাধা। তিনটি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সুষ্ঠু মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা এবং মেডিকেল বর্জ্যের আদর্শ কর্মপদ্ধতি (এসওপি) রয়েছে। বার্নিং পি, ইনসিনারেটরসহ প্রচলিত পদ্ধতিগুলোই কভিড-১৯ টিকাদানের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কাজে লাগানো হবে। প্রতিবেদনটিতে টিকাদান কর্মসূচির কারণে সৃষ্ট ব্যবস্থাপনায় পরিবেশগত ঝুঁকির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা এক প্রতিবেদনে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে মেডিকেল বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করে প্রাইমারি ওয়েস্ট কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডার (পিডব্লিউসিএসপি)। সংগঠনটির আওতায় প্রায় ১৯ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন। সংগঠনটির সভাপতি নাহিদ আক্তার লাকী বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা চিকিৎসা বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করি। তবে আমাদের সংগৃহীত বেশির ভাগ বর্জ্যই অক্ষতিকর। কিন্তু এর পরও বর্জ্য সংগ্রহের বিধিবিধান ঠিকভাবে পরিপালন করার অভাবে আমাদের অনেক কর্মীই জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। করোনার সময় এ হার আরো বেড়েছে। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াকরণ) বিধিমালা ২০০৮ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে। অথচ হাসপাতালের অনুমোদন দিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা। কিন্তু সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সক্ষমতা তৈরি করা হয়নি। এ সংস্থাগুলোর মধ্যে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজটি সঠিকভাবে সমন্বয় না হওয়ার কারণে সেগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠছে।