তবে কি হুমকির মুখে মানবসভ্যতা?

পৃথিবীতে নিসৃত সবচেয়ে বেশি কার্বন শোষণ করে থাকে সমুদ্র। জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াল থাবা থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করছে এই সমুদ্র। বিজ্ঞানীরা বলছেন, গেল ৫০ বছরে বিশ্ব উষ্ণায়নের অন্তত ৯০ শতাংশ শুষে নিয়েছে সমুদ্র। মানুষের সৃষ্টি করা কার্বনের এক তৃতীয়াংশই শুষেও নিয়েছে।

কিন্তু ক্রমবর্ধন তাপমাত্রায় হিমশৈল যেভাবে গলে যাচ্ছে, তাতে সমুদ্রের কোরালগুলো হচ্ছে বিবর্ণ। ইন্টার গভার্নমেন্টাল প্যানেল অব ক্লাইমেট চেঞ্জ বলছে, ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্র পৃষ্ঠে পানির উচ্চতা এখনকার সময়ের চেয়ে দশমিক ২৬ থেকে দশমিক ৭৭ মিটার বাড়বে। এর ফলে ২১০০ সাল নাগাদ উপকূলীয় ২০ কোটি মানুষ পড়বে ঝুঁকির মুখে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বিশ্বে বালুময় সমুদ্র সৈকতগুলোর অর্ধেকই বিলীন হয়ে যাবে। আর মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ অন্তত ৫৭০ টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত।

গভার্নমেন্টাল প্যানেল অব ক্লাইমেট চেঞ্জ বলছে, ১৯৯০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৩ ট্রিলিয়ন টন বরফ হারিয়েছে অ্যান্টার্কটিকা। এ অবস্থা যদি চলতে থাকে আর কোনোভাবেই বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ার হার নিয়ন্ত্রণে না আসে, তাহলে ২১০০ সাল নাগাদ বিশ্বের তাপমাত্রা ৪ শতাংশ বেড়ে যাবে। অনেক দেশে বছরের ৪০ শতাংশ সময় থাকবে গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা।

তাপদাহের সময় তাপমাত্রা পৌঁছাবে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। অতিরিক্ত তাপমাত্রা বাড়ায় অস্ট্রেলিয়ার গ্রেড ব্যারিয়ার রিফতো প্রায় মরেই গেছে। বেড়ে যাবে মরুভূমির পরিমাণ। লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে।৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে সাড়ে ৩ বিলিয়ন মানুষই পর্যাপ্ত পানি পাবে না।

গ্রীষ্মকালে আর্কটিক অঞ্চলে কোনো বরফ থাকবে না। গলতে শুরু করবে গ্রিনল্যান্ড আর পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার বরফও। বরফ আচ্ছাদিত বেশিরভাগ পর্বতগুলো বরফশূন্য হয়ে যাবে। স্কিইং করার মতো কোনো জায়গা থাকবে না। হংকং আর রিও ডি জেনিরো থাকবে পানির নিচে। মালদ্বীপকে তো পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হবে। থাইল্যান্ডে নিয়মিত বন্যা হবে।সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশের তো অন্তত ২০ শতাংশ স্থায়ীভাবে পানির নিচে চলে যাবে। শীতকালে হবে শক্তিশালী ঝড়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিবছরই ক্ষতির মুখে পড়বে লাখ লাখ মানুষ। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অনেক অঞ্চলে বৃষ্টি হবে না বললেই চলে। ক্ষতি হবে ৩০০ কোটি মানুষের।

ঝুঁকির মুখে পড়বে খাদ্যশস্য উৎপাদন। মাছের উৎপাদনও ব্যাহত হবে। টিবি, ম্যালেরিয়া, কলেরা, ডায়রিয়া আর শ্বাসকষ্টে অনেক মানুষ মারা যাবে, যা ইতিহাসে আগে কখনো হয়নি।