‘শিক্ষা ও প্রযুক্তি’ খাত থেকে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র এখন ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি’ খাতে

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে টানাহেঁচড়া হচ্ছে। কাজ শুরু হওয়ার পাঁচ বছর পর প্রকল্পটি এবার ‘বেড়াতে’ যাবে। এত দিন ধরে শিক্ষা পরিবারে ছিল। আগামী অর্থবছর থেকে বিদ্যুৎ পরিবারে যাবে। প্রকল্পটি যেখানে বেড়াতে যায়, সেই পরিবার ‘ফুলেফেঁপে’ ওঠে। ১০ বছর মেয়াদের রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্পটি আগামী পাঁচ বছর বিদ্যুৎ পরিবারে থাকবে। রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের এখন ‘পাড়া বেড়ানো’র স্বভাব হয়েছে।

এবার একটু খোলাসা করা যাক, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্পটি দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। কয়েক বছর ধরে বাজেটে খাতওয়ারি বরাদ্দ বাড়িয়ে দেখানোর জন্য এই প্রকল্প কাজে লাগানো হয়। কারণ, ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পেই প্রতিবছর সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়।

এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পারমাণবিক শক্তি কমিশন। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) পাঁচ বছর ধরে এই প্রকল্পে বরাদ্দ করা হাজার হাজার কোটি টাকা বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতের সঙ্গে যুক্ত হয়। ফলে, শিক্ষা খাতের বরাদ্দ বেশি করে দেখানো সম্ভব হয়েছে। আগামী বছর থেকে শিক্ষা খাত আর এই সুযোগ পাবে না। আগামী অর্থবছরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বরাদ্দ বিদ্যুৎ খাতের সঙ্গে দেখানো হবে। ফলে ফুলেফেঁপে উঠবে বিদ্যুৎ খাতের বরাদ্দ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বড় অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ এম ফাওজুল কবির খান বলেন, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বেশি দেখানোর জন্য রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের টাকা ওই খাতে নেওয়া হয়েছে। এখন এই প্রকল্পের খরচ বিদ্যুৎ খাতে দেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর কারণ, নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদনের চাহিদা নেই। নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্পও নেওয়া হচ্ছে না। দেশের প্রায় শতভাগ এলাকা বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালনের আওতায় এসেছে। এ কারণে এখানে বরাদ্দ বাড়ানো যাচ্ছে না। রাজনৈতিক অভিলাষে এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে দেখানোর জন্য রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের খরচ অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

এম ফাওজুল কবির মনে করেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বিদ্যুৎ খাতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। কারণ, পারমাণবিক ইস্যুর মতো এত সংবেদনশীল বিষয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতেই আলাদাভাবে থাকা উচিত।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরে (২০২১-২২) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। ফলে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বরাদ্দ দাঁড়াচ্ছে ৪৫ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেই আসছে এ খাতের প্রায় ৪০ শতাংশ বরাদ্দ। সেই সুবাদে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত এডিপি থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে। উন্নয়ন বাজেট থেকে এটাই প্রাপ্তি। ৬১ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যোগাযোগ খাত প্রথম স্থানে আছে।

তাহলে শিক্ষার কী হবে? সোজা উত্তর—বরাদ্দে পিছিয়ে যাবে শিক্ষা, ধর্ম ও প্রযুক্তি খাত। এবার দ্বিতীয় স্থানে থাকা এ খাত চতুর্থ স্থানে নেমে যাবে। আগামীবার শিক্ষা খাত বরাদ্দ পাচ্ছে ২৩ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা। যদি রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের বরাদ্দ পাওয়া যেত, তাহলে দ্বিতীয় অক্ষুণ্ন থাক।

কোন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ উন্নয়ন ও পরিচালন খরচে কত বরাদ্দ পেল, তা দিয়ে এক অর্থবছরের পুরো বাজেট থেকে খাতওয়ারি বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়। মোটাদাগে বাজেট থেকে খাতওয়ারি প্রাপ্তি এটাই। ১৫টি খাত দিয়ে এটা নির্ধারণ করা হয়। ওই ১৫ খাতে একটি হলো শিক্ষা ও প্রযুক্তি। এখানেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বরাদ্দ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।

পাঁচ বছর ধরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। এ বছর বাজেটের প্রায় ১৫ শতাংশ বরাদ্দ পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত। এ খাত প্রায় ৮৫ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। ওই বরাদ্দের প্রায় ১৮ শতাংশ এসেছে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে থেকে। কয়েক বছর ধরেই এভাবেই রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষার বাজেট বাড়ানো হতো।

আগামীবারের বাজেট থেকে পোয়াবারো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। খাতওয়ারি বরাদ্দ পাওয়ার দিক থেকে দশম স্থানে থাকা এ খাতের অবস্থানের উন্নতি হবে। এবার উন্নয়ন ও পরিচালনা খরচসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২৬ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। আগামীবার এ খাতের উন্নয়ন খরচের জন্য পাচ্ছে প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিঃসন্দেহে এ খাতকে ফুলেফেঁপে উঠতে সহায়তা করবে।

করোনার মধ্যেও চলছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ - banglanews24.com

সুত্র: প্রথম আলো/এমএস