দাম কম তবুও নেই বিক্রি, ট্রাকেই পচে যাচ্ছে আম

মৌসুমের শুরুতে ঢাকাসহ বাইরের পাইকাররা বাজারে না আসায় আম পেড়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বসে থাকার পরও ক্রেতার অভাবে তারা আম বিক্রি করতে পারেননি।

গাছে থাকা প্রতিটি আমই ৫০ থেকে ৭৫ ভাগ পেকে গেছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড়-বৃষ্টির হাত থেকে পরিপক্ক আম রক্ষা করতে জেলার আমচাষিরা ক্রেতা ও বাজারের অবস্থা না জেনেই যে যার মতো আম পাড়তে শুরু করেন। এ কারণে আকস্মিকভাবে একসঙ্গে বাজারে আমের আমদানি বেশি হয়েছে। ক্রেতাশূন্য বাজারে চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় পাইকাররা। তবে আম পাড়ার সরকারি নিষেধাজ্ঞা এখন আর নেই।

‘আম পেকে পড়ে যাচ্ছে, গাছে আম রাখা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়েই আম পেড়ে বাজারে নিয়ে আসতে হচ্ছে। আম নিয়ে এখন বিপদে আছি। আম বিক্রি না হলে পচে যাবে’বলে জানান, সদর উপজেলার মিয়া সাহেবেরডাঙ্গী গ্রামের সিরাজুল ইসলাম।

‘আম নিয়ে সকাল থেকে বসে আছি। বাইরের ক্রেতা নেই। কেউ দাম বলছে না। দুই হাজার টাকার আম ৯০০ টাকায় বিক্রি করছেন ক্ষুদ্রচাষিদের অনেকেই। গাছ থেকে আম পেড়ে বিপদে আছি’জানান, আমচাষি আকতারুল ইসলাম।

সাতক্ষীরা বড় বাজারের আড়তদার হাসান এন্টারপ্রাইজের মালিক আবুল হাসান জানান, অপরিপক্ক আম পাড়ার ব্যাপারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমচাষিরা আম পাড়তে পারেননি। সম্প্রতি সরকারি বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় চাষিরা একযোগে আম পাড়া শুরু করেন। বর্তমানে লকডাউন চলছে। ফেরি ও দূরপাল্লার গাড়ি বন্ধ থাকায় ঢাকা ও ঢাকার বাইরের পাইকাররা বাজারে আসেনি। আম পচনশীল পণ্য হওয়ায় লাখ লাখ টাকার আম কিনে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও। এসব কারণে গাছ থেকে আম পেড়ে মহাবিপদেই আছেন জেলার আমচাষিরা।

ঢাকার পাইকার আম ব্যবসায়ী আনারুল ইসলাম বললেন, ‘লকডাউনে ঢাকার বাজারে আম পাঠানো যাচ্ছে না। দুই ট্রাক মাল (আম) পাঠিয়ে লোকসান হয়েছে। এখন ঝুঁকি নিয়ে আমের ব্যবসা করার আগ্রহ নেই। বোঝেন তো পচে গেলে আঁটিও কাজে লাগে না।’

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা থাকায় এবার ১৭ মে থেকে হিমসাগর আম পাড়া শুরু হয়েছে। তীব্র গরমে গাছের আম দ্রুত পেকে যাওয়ায় চাষিরা একযোগে গাছ থেকে আম পেড়ে বিক্রি শুরু করেছেন। চলমান লকডাউনে বাজারে এবার ক্রেতা কম থাকায় চাষিরা আমের সঠিক দাম পাচ্ছেন না। তবে বাজার পরিস্থিত ভালো হলে চাষিরা আমের ন্যায্যমূল্য পাবেন।’

‘আম গাছ থেকে পাড়ার পর তা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় না। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে তা বিক্রি করতে না পারলে কৃষকের ক্ষতি হয়। ঈদ ও করোনা মহামারির কারণে এবার বাজারে ক্রেতা কম বলে ব্যবসায়ীরা আমাদের জানিয়েছেন। কৃষি বিভাগ থেকে আমরা এ বিষয়ে তদারকি করছি। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এবার ৫শ মেট্রিক টন আম বিদেশে রফতানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু আম বিদেশে গেছে। কিছু দিনের মধ্যে আরও আম রফতানি হবে’, জানান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম।