২০২১-২০২২ অর্থবছরে সহায়ক বাজেট চান ব্যবসায়ীরা

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। তাই আসন্ন ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট বেশ গুরুত্বপূর্ণ। করোনাভাইরাসের কারণে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নাজুক অবস্থা দেখা গেছে। তাই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ‘ফাটল’ সারাতে এবারের বাজেটে এ খাতের গুরুত্ব বাড়বে। ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়াতে সহায়ক হবে— সরকার এমন বাজেট ঘোষণা করবে বলে আশা করছেন তারা।

সরকার ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘাটতির বাজেট আসছে। মোট জিডিপির তুলনায় ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৬ শতাংশ। তবে আগের অর্থবছরগুলোতে বাজেট ঘাটতি রাখা হচ্ছিল ৫ শতাংশের নিচে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আসছে বাজেটে স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি, ব্যবসা খাতেও গুরুত্ব দিতে হবে। সরকার ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সময়ে যে প্রণোদনা দিচ্ছে, তার যথাযথ বাস্তবায়ন হওয়া উচিত।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে কর খাত ছোট, এটা বাড়াতে হবে। আবার কেউ একবার করের জালে ঢুকে গেলে পরে ঝামেলায় পড়তে পারে— এই ভয়ে অনেকেই কর দেন না। এ ধরনের ভীতি যে কারণেই আসুক তা দূর করতে হবে। দেশে করপোরেট (কোম্পানি পর্যায়ে) করহার অনেক বেশি, এটা কমাতে হবে। বিভিন্ন দেশে করহার কমিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের সুযোগ করে দেয়া হয়। এতে ব্যবসা যত প্রসার হবে রাজস্ব আয় তত বাড়বে। আমাদের দেশে করের চাপে ব্যবসা করা কষ্টকর।

আসন্ন বাজেটে স্বাস্থ্যখাতকে বেশি গুরুত্ব দেয়া নিয়ে ব্যবসায়ীদের কোনো দ্বিমত নেই। তবে মহামারির কারণে ‘চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ ব্যবসা-বাণিজ্যকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দেয়ার কথা বলছেন তারা। ব্যবসায়ীরা আসন্ন বাজেটে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ চান, যাতে করভীতি দূর হয়ে করজালের পরিধি বাড়ে।

‘মহামারির কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ক্ষতির মুখে ট্যাক্সে যেন চাপ না আসে, আসছে বাজেটে এই সে প্রত্যাশা। আমরা ৪০ শতাংশ গ্রোথ ধরে বাজেট করি। কিন্তু অর্জন ১৪ থেকে ১৮ শতাংশের বেশি হয় না। এখানে ২০ শতাংশ গ্রোথ ধরে বাজেট করলে বাড়তি যে ২০ শতাংশের চাপ, সেটা আর পড়ে না। আশা করবো, এবারের বাজেটে ২০ শতাংশের ওপরে গ্রোথ রেট দেয়া হবে না’ বলে জানান, এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন।

তিনি আর বলেন, ‘দেশে করের চাপে ব্যবসা করা কষ্টকর। নতুন বাজেটে এটা কমানো দরকার। করপোরেট ট্যাক্স কমানো হলেও রেভিনিউ (রাজস্ব) যেন না কমে, সেটার জন্য করনেট স্প্রেড (করজালের বিস্তৃতি) বাড়ানো দরকার। দেশে কর নেটওয়ার্ক ছোট এটা বাড়াতে হবে। এখন এনবিআরের (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) লোকবলের ঘাটতি নেই, নিয়োগ হয়েছে অনেক।’

‘আগামী অর্থবছরের বাজেট অবশ্যই সম্প্রসারণমূলক হতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই ঘাটতি বাজেট হবে। ঘাটতির মাত্রা জিডিপির ৬ শতাংশের বেশি হলেও অসুবিধা নেই। তবে ঘাটতির মাত্রা জিডিপির ৭ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত হবে না।’ তাছাড়া সরকার ব্যবসায়ীদের যে প্রণোদনা দিচ্ছে, তার যথাযথ বাস্তবায়ন হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে শ্রমঘন প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের শ্রমিকদের গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে ব্যবসায়ীদের জন্য বরাদ্দের পুরো অর্থ ব্যয় হয়নি। এটা অবশ্যই দুঃখজনক বলেন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।