ররিশাল জেলা প্রতিনিধি:
বরিশাল নদীবন্দরে প্রবেশ টিকিট কাটা নিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে বিআইডব্লিউটিএর স্টাফদের হামলার শিকার হয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) তিন এবং তিতুমীর কলেজের এক শিক্ষার্থী। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে হামলাকারী স্টাফদের বিচারের দাবিতে শুক্রবার (২৬ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিআইডব্লিউটিএর বরিশাল কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
হামলার শিকার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. ইমরান হোসেন বলেন, আমার বন্ধু তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাকিবের রাতে লঞ্চে ঢাকা যাওয়ার কথা ছিল। তাকে এগিয়ে দিতে আমি ও আমার সহপাঠী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফ হোসেন, মো. ইমরান ও ইমাম রাত সোয়া ৮টার দিকে লঞ্চঘাটে যাই। নদী বন্দরের দুই নম্বর গেটের কাউন্টারে গিয়ে আমরা একটা প্রবেশ টিকিটি কিনে ঢোকার চেষ্টা করি। এসময় প্রবেশ গেটে থাকা বিআইডব্লিউটিএ স্টাফরা আমাদের বাধা দেয়। আরও চারটা টিকিট কিনতে বলেন। তখন স্টাফদের জানাই একজন ঢাকা যাবে। অন্যরা এগিয়ে দিতে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, এসময় আমাদের কাছ থেকে টিকিটটি নিয়ে ছিঁড়ে না ফেলে এক স্টাফ তার পকেটে রেখে দেন। তারা টিকিট না ছিঁড়ে একই টিকিট অন্য যাত্রীদের বিক্রির উদ্দেশ্যে পকেটে রেখেছিলেন। এর প্রতিবাদ করলে স্টাফরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের ওপর হামলা করেন। কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন। আমাদের সঙ্গে থাকা মুঠোফোন ও মানিব্যাগ তারা ছিনিয়ে নেন। মারধরের একপর্যায়ে রাব্বি, মো. ইমরান ও ইমাম দৌড়ে কিছুটা দূরে চলে গিয়ে মুঠোফোনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে হামলার ঘটনা জানায়। অন্যদিকে স্টাফরা আমাকে ও আরিফকে কার্যালয়ের দোতলার একটি কক্ষে নিয়ে মারধর করেন। কান ধরে ওঠবস করানো হয় আমাদেরকে। পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়।
ফোন পেয়ে নদীবন্দরে আসা রক্তিম হাসান অমিত নামে ববির এক শিক্ষার্থী জানান, নদীবন্দরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা জানতে পেরে রাত ৯টার মধ্যে সেখানে ববির শতাধিক শিক্ষার্থী জড়ো হন। এরপর হামলায় জড়িত স্টাফদের বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান নেন। বিআইডব্লিউটিএ বরিশাল কার্যালয়ের বন্দর কর্মকর্তা, নৌ ও মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকজন শিক্ষক বিষয়টি সমাধানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে হামলাকারী স্টাফদের বরখাস্ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নদীবন্দরে প্রবেশ ফি নেওয়া বন্ধ করা এবং হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মুঠোফোন ও মানিব্যাগ ফিরিয়ে দেওয়া বা ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়। তারা দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে চলে আসেন।
জানতে চাইলে বরিশাল সদর নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসনাত জামান বলেন, নদীবন্দরে প্রবেশ টিকিট কাটা নিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিআইডব্লিউটিএর স্টাফরা দুর্ব্যবহার করেছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তাদের মারধর করা হয়েছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী নদীবন্দরে জড়ো হন। পরে অভিযুক্তদের বিচারের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা শান্ত হন।
বিআইডব্লিউটিএ বরিশাল কার্যালয়ের বন্দর কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।