ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: স্বল্প খরচে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে যৌথভাবে ওয়াটার এটিএম বুথ প্রকল্পের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাওয়ার্ড ফর করপোরেট এক্সিল্যান্স (এসিই) পুরস্কার পেয়েছিল ড্রিংকওয়েল। তবে পূর্ব কোনো ঘোষণা ছাড়াই ওয়াটার এটিএমের পানির দাম ৭৩ শতাংশ বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে গ্রাহকরা। তারা বলছেন, ঢাকা ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করে তা বিশুদ্ধ নয়। পানি ফুটিয়ে পান করতে হয়। ওয়াটার এটিএম বুথের বিশুদ্ধ পানি অনেক ভালো। কিন্তু হঠাৎ করে পানির দাম ৭৩ শতাংশ বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই।
মঙ্গলবার থেকে প্রতি লিটার পানির মূল্য ৭০ পয়সা ধার্য করা হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হবে ১০ পয়সা ভ্যাট। সোমবার (৩১ জুলাই) পর্যন্ত এই পানি ভ্যাটসহ ৪৬ পয়সায় বিক্রি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে’ ওয়াটার এটিএম বুথের পানির দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বৈশ্বিক অবস্থা বলতে ওয়াসা ঠিক কি বোঝাতে চেয়েছে, তা স্পষ্ট করে বলতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়াসার এক কর্মকর্তা বলেন, ওয়াটার এটিএম বুথ স্থাপন ও পরিচালনায় ব্যয় বাড়ছে। তাই পানির দাম বাড়াতে হচ্ছে। তবে প্রতি লিটার পানিতে ৩৪ পয়সা বাড়ানোর কোনো দরকার ছিল না।
মগবাজার ওয়ারলেস মোড়ের পানির পাম্পে ঢাকা ওয়াসার ওয়াটার এটিএম বুথ থেকে পানি নেন শামীমা আক্তার। তিনি বলেন, বাসার পানি খাওয়ার যোগ্য নয়। এখানকার পানির মান ভালো। কোনো গন্ধ আসেনা।
পানির দাম প্রতি লিটারে ৩৪ পয়সা বাড়ার খবর জানেন না বলে জানান তিনি।
শামীমা আক্তার বলেন, ওয়াসার পানি বিশুদ্ধ করতে সময় ব্যয় হয় ও ঝুঁকিও থাকে। আমি প্রায় দুই বছর ধরে ওয়াসার ওয়াটার এটিএম বুথ থেকে বিশুদ্ধ পানি পান করছি। এখন যদি পানির দাম বাড়িয়ে থাকে তা সাধারণ মানুষের জন্য কিছুটা কষ্টকর হবে।
পল্লবীর বুথ থেকে পানি নিচ্ছিলেন সুমন মৃধা। তিনি বলেন, ওয়াসা একটি সেবামূলক সংস্থা। প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা ভর্তুকি দেয় সরকার। এখন হঠাৎ করে দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই।
ওয়াটার এটিএম বুথ প্রকল্পের পরিচালক ও ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী রামেশ্বর দাস বলেন, শুরুতে শহরের নিম্নবিত্ত শ্রেণির লোকজনকে বিশুদ্ধ পানি দেওয়ার লক্ষ্যে এটিএম বসানো হয়েছিল। এটিএমের পানির মানের কারণে এখন সব শ্রেণির লোকজনই গ্রাহক হচ্ছেন। এই পানির গুণগত মান বোতলজাত পানির মতোই।
তিনি বলেন, কিন্তু ঠিক কী কারণে পানির দাম ৭৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে তা বলতে পারিনা। ওয়াটার এটিএম বুথের পানির দাম বাড়ানোর বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন আমার ঊর্ধ্বতনরা। এই পানির দাম বাড়ানোর সঙ্গে আমার প্রকল্পের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
এর আগে ২০১৭ সালের মে মাসে নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে কম দামে নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে রাজধানীর মুগদায় প্রথম ওয়াটার এটিএম বুথ স্থাপন করা হয়। এ কাজের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ড্রিংকওয়েলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় ওয়াসা। পরে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী শহরের বিভিন্ন জায়গায় তারা বুথ বসানো শুরু করে। ভূগর্ভ থেকে উত্তোলিত পানি পরিশোধনের মাধ্যমে বিক্রি করা হয় এসব এটিএম বুথে।
এর পরে ২০২২ সালের ১৮ নভেম্বর রাজধানীবাসীকে কম খরচে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে যৌথ ভাবে ওয়াটার এটিএম বুথ স্থাপনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাওয়ার্ড ফর করপোরেট এক্সিল্যান্স (এসিই) পুরস্কার পেয়েছে ড্রিংকওয়েল। জলবায়ু সহিষ্ণুতা বিভাগে এ পুরস্কার পায় সংস্থাটি।
জানা যায়, এখন পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ২৯৫টি ওয়াটার এটিএম বুথ স্থাপন করেছে ঢাকা ওয়াসা ও যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ড্রিংকওয়েল। ব্যাংকের এটিএম কার্ডের মতো একটি আরএফআইডি কার্ড মেশিনের নির্দিষ্ট স্থানে রাখলেই স্বয়ংক্রিয় ভাবে বেরিয়ে আসে বিশুদ্ধ খাবার পানি। কার্ডে ১০ টাকা থেকে ৯৯৯ টাকা পর্যন্ত রিচার্জ করতে পারবেন গ্রাহক। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পানি সংগ্রহ করা যায়। এই সেবা পেতে পানির এটিএম বুথের গ্রাহক সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এখন এটিএম বুথের কার্ডের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় দুই লাখ ৯০ হাজার। প্রতিদিন গড়ে ১৪ লাখ লিটার পানি বিক্রি হচ্ছে।