নেপাল, ভুটান ও চীনের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপন করতে চায় বাংলাদেশ

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত হয়ে নেপাল, ভুটান ও চীনের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।  ফলে প্রতিবেশী অন্য দেশের সঙ্গেও এই সুবিধা পেতে কাজ করছে বাংলাদেশ।

প্রকল্পের আওতায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা রুটে ৫৭ কিলোমিটার নতুন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মিত হবে। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে তিন হাজার ৭৫৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন এক হাজার ৩১৩ কোটি ২৪ লাখ এবং বৈদেশিক ঋণ দুই হাজার ৪৪০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। বৈদেশিক ঋণের সম্ভাব্য উৎস হিসেবে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ছাড়াও যে কোনো উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদনের জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে। পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত নতুন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণের পিডিপিপি (প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) নিয়ে এডিবির সঙ্গে অর্থায়নের বিষয়ে আলোচনা চলমান। শুধু এডিবি নয়, সহজ শর্তে প্রকল্প বাস্তবায়নে অন্য যে কোনো উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে দুই হাজার ৪৪০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বৈদেশিক অর্থায়ন নেওয়া হবে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে রেলপথে স্বল্প সময়ে যাওয়া যাবে চীনসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে। বাংলাবান্ধা থেকে ঢাকা আসতে যে সময়ের প্রয়োজন হচ্ছে তার অর্ধেক সময়ে চীনে পৌঁছে দেবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ভারতে যেতে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট আর নেপাল ও ভুটানে যেতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগবে। এসব কারণে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত, চীন, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে ভারত, নেপাল ও ভুটানের দূরত্ব খুবই কম। বাংলাবান্ধা থেকে কয়েকশ গজের মধ্যেই ভারত সীমান্ত। এই স্থলবন্দর থেকে নেপালের দূরত্ব মাত্র ৬১ কিলোমিটার। ভুটানের দূরত্ব মাত্র ৬৮ কিলোমিটার এবং চীন সীমান্ত মাত্র ২০০ কিলোমিটার। সম্ভাবনাময় এই বন্দরটি পাঁচটি বন্ধুপ্রতিম দেশকে একই সূত্রে আবদ্ধ করতে পারে। সেজন্যই বাংলাবান্ধা হয়ে চারটি দেশের মধ্যে রেল সংযোগ স্থাপন করতে চায় বাংলাদেশ সরকার।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, রেলপথ সবচেয়ে নিরাপদ ও সাশ্রয়ী। রেলপথে বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরিতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম উদ্যোগ পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত নতুন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ। এই রেলপথ নির্মাণ করা হলে বাংলাবান্ধা দিয়ে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগে নতুন রুট তৈরি হবে। ভারতের সঙ্গে নেপাল ও ভুটানের রেলপথ রয়েছে। আমরা বাংলাবান্ধা দিয়ে ভারতকে সংযুক্ত করতে পারলে তখন অন্যান্য দেশের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ সৃষ্টি হবে। ভারতের রেলপথের বিভিন্ন পয়েন্ট যুক্ত হবে। আন্তর্জাতিক মালবাহী গাড়ি ও যাত্রীবাহী ক্যারেজ চলাচল করবে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে বর্তমানে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে মালামাল আমদানির পাশাপাশি ইমিগ্রেশন দিয়ে যাত্রীরা যাতায়াত করছেন। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হয়ে সোনামসজিদ সীমান্ত পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হবে। ফলে এটি বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে (বিবিআইএন) রেল সংযোগের অন্যতম রুট হবে। স্থলবন্দরটিতে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা গেলে যাত্রী পরিবহন ছাড়াও আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে মালামাল পরিবহন হবে সহজ ও সাশ্রয়ী হবে।

সমীক্ষা প্রকল্প সমাপ্ত হওয়ার পরই মূল প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। তার আগে বৈদেশিক অর্থায়ন প্রাপ্তির জন্য প্রকল্পের পিডিপিপি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে পাঠানো হয়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।