রাতে না ঘুমালে বিপদ

সুস্থ-সবল থাকতে ঘুমের দরকার। রাতে না ঘুমিয়ে বিপদ ডেকে আনছেন না তো ? পর্যাপ্ত ঘুম দেহের সকল কার্যকলাপের জন্য জরুরী।  ঘুমের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোর সারাই কাজ চলে। তাই চিকিৎসকেরা প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা  করে ঘুমানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

আমেরিকার বার্কলের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড সাইকোলজি বিভাগের প্রফেসর ম্যাথিউ ওয়াকার বলেন,এমনিতেই সবাই জানেন যে ঘুম আমাদের মস্তিষ্কের জন্য কতটা প্রয়োজনীয়। নতুন স্মৃতি গড়তেও ঘুমের দরকার হয়। ঘুমের অভাবে মস্তিষ্কে যে স্মৃতির ইনবক্স থাকে তা বন্ধ হয়ে যায়। তখন আপনি এই প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন না যে কোনো বিষয়কে স্মৃতি ধরে রাখবেন। অর্থাৎ,নয়া কোনো অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করে রাখার কাজটি সত্যিই দুরূহ হয়ে পড়বে। যে তথ্যপূর্ণ ইমেইল বা মৌখিক বক্তব্য আসছে সেগুলো মস্তিষ্কে প্রবেশমাত্র বলের মতো বাউন্স করে ফিরে আসে। ক্রমেই আপনি স্মৃতিলুপ্ত ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভ করবেন। চেষ্টা করেও কোনো বিষয় মাথায় রাখতে পারবেন না এবং আপাতত রাখরেও মুহূর্তেই ভুলে যাবেন।

ঘুমের অভাবে কিন্তু দেহে আরো সমস্যা তৈরি হয়। মস্তিষ্কে বিষাক্ত প্রোটিনের আবির্ভাব ঘটে। এর নাম বেটা অ্যামাইলয়েড। বয়স্কালে আলঝেইমার্স রোগের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে এই প্রোটিনের। গভীর ঘুমের সময় বিষাক্ত উপাদান ধুয়ে-মুছে পরিষ্কারের কাজও করে মস্তিষ্ক। যদি প্রতিরাতে ঘুমান তবে আলঝেইমার্সের জন্যে দায়ী প্রোটিন কমতে থাকবে। কিন্তু না ঘুমালে উল্টোটাই ঘটবে। প্রোটিন জমতে থাকবে এবং আলঝেইমার্সের ঝুঁকি বাড়তেই থাকবে।

এসব ঘটনা আরো নানাভাবে প্রভাবিত করবে দেহকে। পুরুষের উৎপাদন ক্ষমতাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। যে পুরুষরা রাতে ৬ ঘণ্টা ঘুমান তাদের দেহে নির্দিষ্ট পরিমাণ টেসস্টোটেরনের মাত্রা বজায় থাকে। এই মাত্রা তাদের চেয়ে ১০ বছরের বড় মানুষের দেহে বিরাজ করে। প্রয়োজনীয় ঘুমের অভাবে এমনটা ঘটে।

রাতের ঘুম ৪-৫ ঘণ্টা হলে ক্যান্সার প্রতিরোধী কোষের সংখ্যা ৭০ শতাংশ হ্রাস পায়। এদের বলে ‘প্রাকৃতিক হত্যাকারী কোষ’। কাজেই কম ঘুমের কারণে দেহের ক্যান্সার বাসা বাঁধার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। বাওয়েল,প্রোস্টেট এবং স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাই রাতে কাজ করাদের মধ্যে ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেশি বলে সবাইকে সচেতন করতে চায়। অর্থাৎ যে কাজগুলো রাতের ঘুম নষ্ট করে সেগুলো স্বাস্থ্যের জন্যে ঝুঁকিপূর্ণ।  যারা ৬ ঘণ্টা বা তারও কম সময় ঘুমায়, তাদের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায় ২০০ শতাংশ।

জানলে অবাক হবেন, রাতে না ঘুমিয়ে পরবর্তিতে ১৬ ঘণ্টা জাগ্রত থাকলে আপনার মস্তিষ্ক স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারাবে। সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হবে। দৈহিক ভারসাম্য নষ্ট হতে থাকবে। এভাবে নির্ঘুম আরো ১৯ বা ২০ ঘণ্টা কাটালে আপনার সেই অবস্থাই হবে যা মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো ব্যক্তিটির হয়ে থাকে। এ ধরনের জটিল অবস্থা নিরাময়ে আমাদের তাই প্রতিদিন অন্তত ৮ ঘণ্টার ঘুম দরকার।