ওমিক্রন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে: রাষ্ট্রপতি

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:  করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন যাতে দেশে সংক্রমণ ছড়াতে না পারে সেজন্য, সরকারকে সতর্কতা অবলম্বনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রোববার একাদশ জাতীয় সংসদের ষোড়শ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা জানান।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংক্রমণের কারণে গত দুবছর জনসাধারণের জীবন-জীবিকা হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। এ সময়ে জীবন রক্ষার পাশাপাশি আর্থসামাজিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাই ছিল সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। আর্থসামাজিক এ সংকট মোকাবিলায় সরকার ‘হোল অফ দ্য গভর্নমেন্ট অ্যাপ্রোচ’ নেয়। করোনা সংক্রমণ রোধে বিভিন্ন প্রকার বিধিনিষেধ আরোপ ও প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি ১৫৬টি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। এছাড়া করোনা পরীক্ষার জন্য ১৫১টি আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়।

স্বাস্থ্যে বাজেট বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা খাতে গত অর্থবছরের তুলনায় বাজেট বাড়ানো হয়েছে ১৩ শতাংশ। ইতোমধ্যে প্রায় ৭ কোটির বেশি জনগণকে টিকা দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই দেশের অধিকাংশ জনগণকে টিকার আওতায় আনা হবে। সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে পৃথিবীর অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ এবং সংক্রমণজনিত মৃত্যুর হার অপেক্ষাকৃত কম। প্রধানমন্ত্রীর সাহসী, দূরদর্শী নেতৃত্ব ও অনুপ্রেরণায় আমরা এখন পর্যন্ত করোনা এবং এর অভিঘাত সফলভাবে মোকাবিলা করে যাচ্ছি। তবে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন যাতে ‍আমাদের দেশে সংক্রমণ ছড়াতে না পারে সেজন্য সরকারকে সতর্কতা অবলম্বনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, করোনার কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক ঝুঁকি বৃদ্ধির পাশাপাশি বেসরকারি খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সংকট মোকাবিলায় বৃহৎ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহে আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের মাধ্যমে সরকার দেশের আপামর জনসাধারণকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে রাখতে সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে। এ লক্ষ্যে সরকার প্রদত্ত ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে ছয় কোটি ৭৪ লাখ ৬৩ হাজারের অধিক জনগণ এবং ১ লাখ ১৭ হাজারের অধিক প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে।

সাফল্যের সঙ্গে করোনা মোকাবিলা করে ইতিবাচক অর্থনৈতিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, করোনা মহামারি শুরুর পূর্বে ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, যা করোনাকালে হ্রাস পায়। তবে সরকারের বিভিন্ন টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে নানামুখী আর্থসামাজিক ও বিনিয়োগধর্মী প্রকল্প, কর্মসূচি এবং কার্যক্রম নেওয়ার ফলে ইতোমধ্যে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের জিডিপির ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির তুলনায় সাময়িক হিসাব অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশে, যা আশাব্যঞ্জক।

মো. আবদুল হামিদ বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের রফতানি আয়ের ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হলেও ২০২০-২১ অর্থবছরেই রফতানি আয় ১৫ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। প্রবৃদ্ধির এ ধারা চলতি অর্থবছরেও অব্যাহত রয়েছে। রফতানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে রফতানি পণ্য বহুমুখীকরণ এবং নতুন নতুন বাজার সৃষ্টির জন্য সময়োপযোগী এবং কার্যকর নীতি ও কৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কোম্পানি নিবন্ধন প্রক্রিয়াসহ আমদানি ও রফতানি সংক্রান্ত সব সেবা অটোমেশনের মাধ্যমে সহজীকরণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, রেমিট্যান্স পাঠানোয় নগদ প্রণোদনা এবং পদ্ধতি সহজীকরণের সুফল হিসাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫ দশমিক ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ২০২১ সালের একনেক সভাসমূহে প্রায় দুই লাখ ৩৮ হাজার ৪৫৭ দশমিক পাঁচ-সাত কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ১৩৩টি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। করবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় করোনা পরিস্থিতিতেও ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ২৩ দশমিক ৫৭ বেড়ে প্রায় ৩ লাখ ২৮ হাজার ৫৮২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

বিগত পাঁচটি অর্থবছরে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কৌশল বাস্তবায়নে সরকার মোট ৬১ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক উৎস থেকে সংগ্রহের জন্য চুক্তি সই করেছে। এর মধ্যে ৩১ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক সহায়তা ছাড় করা হয়েছে। আর্থিক খাতে পর্যাপ্ত তারল্য নিশ্চিত করার জন্য সুদের হার একাধিকবার হ্রাস করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতির হারও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান রাষ্ট্রপতি।