রমজানে খাদ্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে মাঠে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: রমজান উপলক্ষে বিএসটিআইয়ের কার্যক্রম অবহিত করতে আয়োজিত সভায় বক্তব্য দেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হূমায়ুন
পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে খাদ্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ এবং নকল ও নিম্নমানের পণ্যের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযানের পদক্ষেপ নিয়েছে বিএসটিআই। এজন্য আগামীকাল রোববার থেকে অতিরিক্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত ও সার্ভিল্যান্স কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

শনিবার (২ এপ্রিল) রমজান উপলক্ষে বিএসটিআইয়ের কার্যক্রম অবহিত করতে আয়োজিত সভায় এসব কথা জানান শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হূমায়ুন।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা। এ সময় শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক ড. মো. নজরুল আনোয়ারসহ শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থার প্রধান এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় শিল্পমন্ত্রী জানান, রমজান উপলক্ষে ঢাকা মহানগরীতে বিএসটিআইর ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ছুটির দিনসহ স্বাভাবিক কার্যদিবসেও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। পণ্যের সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণ এবং কারচুপি রোধকল্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হবে। একই সঙ্গে ঢাকা মহানগরীর পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, সাভার, কেরানীগঞ্জ ও ভৈরব এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।

মন্ত্রী বলেন, এসব এলাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন জেলা/উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বিএসটিআইর সব বিভাগীয়/জেলা কার্যালয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত ও সার্ভিল্যান্স কার্যক্রম পরিচালনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসে জনগণকে মানসম্মত পণ্য ক্রয় এবং নকল ও নিম্নমানের পণ্য সম্পর্কে সচেতন করতে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, রমজান মাসে মানসম্মত খাদ্য ও পানীয় বিশেষ করে- মুড়ি, খেজুর, সফট ড্রিংকস পাউডার, কার্বোনেটেড বেভারেজ, ফ্রুট সিরাপ, ফ্রুট ড্রিংকস, ভোজ্যতেল, সরিষার তেল, ঘি, পাস্তুরিত দুধ, নুডলস, ইনস্ট্যান্ট নুডলস, লাচ্ছা সেমাই, সেমাই, পানি, ডেক্সট্রোজ মনোহাইড্রেট এবং ইফতার সামগ্রী বিক্রি/বিতরণের ওপর বিএসটিআই নজরদারি জোরদার করবে।

এদিকে আজকের সভায় আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে গত দুই মাসে (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) ভেজাল ও নকল পণ্য সরবরাহ প্রতিরোধে নেওয়া বিশেষ কর্মসূচি সম্পর্কে অবহিত করা হয়। রমজানে ইফতার ও সেহরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য বিএসটিআইর সার্ভিল্যান্স টিমের মাধ্যমে খোলাবাজার থেকে সংগ্রহ করে ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের তথ্য আজ জানানো হয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়- গত দুই মাসে পণ্যের মোট নমুনা সংগ্রহ করা হয় ৭৪৮টি। এর মধ্যে ৬৮৫টির পরীক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। তারমধ্যে মানসম্মত নমুনা- ৬৭০টি। নিম্নমানের নমুনা ১৫টি, প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ৬৩টি নমুনা এখনো পরীক্ষাধীন।

পণ্যের মাননিয়ন্ত্রণ, ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য এবং ওজন ও পরিমাপে কারচুপি রোধকল্পে ১০২১ সালের জুলাই হতে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে বিএসটিআইর কার্যক্রমও তুলে ধরা হয় এর সভায়।

তাতে দেখা যায়, পণ্যের (ড্রিংকিং ওয়াটার, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, ফর্টিফাইড ভোজ্য তেল, আয়োডিনযুক্ত লবণ, নকল ও নিম্নমানের প্রসাধনীসহ) মান নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা ৬২৬টি। এর মাধ্যমে মামলা হয়েছে এক হাজার ১৫৫টি। জরিমানা আদায় হয়েছে আট কোটি ৩২ লাখ টাকা। ২০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ১৭টি কারখানা সিলগালা করা হয়। এছাড়াও বিএসটিআই সার্ভিল্যান্সের সংখ্যা ৯৯০টি। এর মাধ্যমে দায়েরকৃত মামলা ৮০টি।

পণ্যের ওজন ও পরিমাপে কারচুপি রোধকল্পে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয় ৪১৮টি। এর মাধ্যমে মামলা দেওয়া হয় ৭৫২টি। এতে জরিমানা আদায় হয় এক কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এছাড়া তিনজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। অভিযানে ৩৮৩টি পেট্রল ডিসপেনসিং ইউনিট সিলগালা করা হয়। একই উদ্দেশ্যে বিএসটিআইয়ের সার্ভিল্যান্সের সংখ্যা ৩৮৯টি। এর মাধ্যমে দায়েরকৃত মামলা ৭১টি।