ইউনিয়ন ক্যাপিটালের বিরুদ্ধে টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ 

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেডের বিরুদ্ধে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঋণের অর্থ আদায় না করেই অবলোপন বা রাইট অফ করছে।

এছাড়া আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের শত কোটি টাকা আটকে রেখে ঋণ দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি নানা অনিয়মে সম্পদ খেয়ে দায় পরিশোধের সক্ষমতা হারাচ্ছে। এসব কারণে এক কোটি টাকা কিংবা এর চেয়ে বেশি অঙ্কের ঋণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জানা গেছে, একটি প্রতিষ্ঠানের আমানতের ১০৮ কোটি ৫২ লাখ টাকার বিপরীতে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ফেরত দিয়েছে মাত্র ৫০ লাখ টাকা, যা খুবই নগণ্য। এ নিয়ে ২ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীকে একটি চিঠি দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, আমানতের মেয়াদ পূর্ণ হলেও ইউনিয়ন ক্যাপিটাল আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ ফেরত দিয়ে অভিযোগ নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেওয়া হলেও প্রতিষ্ঠানটি তা পরিপালনে ব্যর্থ হয়েছে।

এছাড়া, স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বিতরণ করা ঋণের অর্থ কার্যত আদায় না হওয়ার পরও বিদ্যমান ঋণের স্থিতি ক্রমান্বয়ে অবলোপনের মাধ্যমে সম্পদ হ্রাসের মতো গুরুতর অনিয়ম করছে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল। এতে প্রতিষ্ঠানটির দায় পরিশোধের সক্ষমতা কমছে।

এ পরিস্থিতিতে বিদ্যমান অবস্থা থেকে উত্তরণে ইউনিয়ন ক্যাপিটালকে বেশকিছু শর্ত ও নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জানা গেছে, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি) লিমিটেডের বর্তমান প্রাপ্য স্থিতি ১০৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল পরিশোধ করেছে মাত্র ৫০ লাখ টাকা। এ অঙ্ক মোট পাওনার মাত্র শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ; যা খুবই নগণ্য। এ পরিস্থিতিতে বিএটিবিসির সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, আটকে পড়া ঋণ আদায়ের মাধ্যমে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার সক্ষমতা অর্জনে দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি ছাড়া এক কোটি টাকা কিংবা এর বেশি অঙ্কের নতুন কোনো ঋণ দেওয়া যাবে না। স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান, সাবসিডিয়ারি ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে নতুন কোনো ঋণ দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি বিতরণ করা ঋণের কোনো অংশ মওকুফ বা অবলোপনও করা যাবে না।

চলতি বছরের ৩০ জুনভিত্তিক সিএল (শ্রেণিকৃত ঋণ) বিবরণীতে সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের ঋণসহ সব ঋণ, লিজ ও বিনিয়োগ শ্রেণিমান যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়েছে কি না— সে বিষয়ে অডিট কমিটির তত্ত্বাবধানে একটি তদন্ত দল গঠন করে এক মাসের মধ্যে তথ্য দিতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এও বলেছে যে, এখন থেকে প্রতি তিন মাস (মার্চ, জুন, সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বর- বছরে চারবার) শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে খাতভিত্তিক নগদ আগমন ও নির্গমনের বিবরণ দিতে হবে ইউনিয়ন ক্যাপিটালকে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক পর্যন্ত ইউনিয়ন ক্যাপিটাল এক হাজার ১৮১ কোটি ৬৩ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে মন্দ বা খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১২৮ কোটি ২২ লাখ টাকা, যা মোট ঋণের ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এর মধ্যে আদায় অযোগ্য ঋণের পরিমাণ ১১২ কোটি টাকা।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) চৌধুরী মনজুর লিয়াকত বলেন, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছে। আমরা আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছি না— এ তথ্য পুরোপুরি সঠিক নয়। করোনার কারণে একটু সমস্যা হয়েছে; ঋণের ইনস্টলমেন্ট সঠিকভাবে পাওয়া যায়নি। তবে মহামারি কোভিডের মধ্যেও ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত গ্রাহকের ৪৩৪ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছি। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের লোন পরিশোধ করেছি ২২৬ কোটি টাকা।

তিনি আরও বলেন, বিএটিবিসির পাওনা অর্থ পরিশোধের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তার চেয়ে আমরা বেশি পরিশোধ করেছি। গত বছর মহামারির মধ্যে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোকে ছয় কোটি ৩৪ লাখ এবং চলতি বছরে এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন কোটিসহ মোট ১০ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে মাত্র ৫০ লাখ; এটি মিস ইনফরমেশনের কারণে হয়েছে।

পরবর্তী পদক্ষেপের কথা জানতে চাইলে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বোর্ডকে বসে একটি সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে। কিন্তু আমাদের বোর্ড চিঠি আসার আগেই অর্থ ফেরত দেওয়ার বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী দুই মাসে ইনস্টলমেন্ট আসা শুরু করবে, যা কোভিডের কারণে গত দুই বছর বন্ধ ছিল। ইনস্টলমেন্ট এলে বোঝা যাবে। জানুয়ারিতে এটি ফুল ওপেন (একেবারে খুলে) হবে। আমরা অর্থ ফেরত দিতে পারব। মহামারিতেও আমরা ৪৩৪ কোটি টাকা পরিশোধ করেছি। আগামীতে আরও বেশি পরিশোধ করতে পারব।

খবর: ঢাকা পোস্ট