জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি: প্রতিদিন বিপিসির লোকসান  ২০ কোটি টাকা

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন ২০ কোটি টাকা লোকসান গুনছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম উঠেছে ৮০ ডলার, যা গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে ব্যারেল প্রতি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ৪৯ ডলার। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তা বেড়ে হয়ে যায় ৬১ ডলার। চার মাস পর জুনের মাঝামাঝি আরও বেড়ে ৭১ ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি হয় ৭৫ ডলার। এরপর ধীরে ধীরে বেড়ে এখন ৮০ ডলারে পৌঁছেছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের ওপর। ইতোমধ্যে বিপিসি লোকসান গুনতে শুরু করেছে। সংস্থাটির ১১ অক্টোরের হিসাবে দেখা যায়, প্রতি লিটার ডিজেল বিক্রিতে ১৩ টাকা ৬০ পয়সার মতো লোকসান হচ্ছে। ফার্নেস অয়েল বিক্রিতে লোকসান যাচ্ছে ৮ টাকা ৫০ পয়সার মতো।

বিপিসি হিসাব অনুযায়ী, দৈনিক গড়ে ১২ হাজার ৮০০ টন ডিজেল বিক্রি করে তেল বিপণন প্রতিষ্ঠানগুলো। একইসঙ্গে দুই হাজার টন ফার্নেস অয়েল বিক্রি হয়। অর্থাৎ প্রতিদিন ডিজেল বিক্রিতেই ১৯ কোটি ৯ লাখ টাকা এবং ফার্নেস অয়েল বিক্রিতে ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে।

মাসে প্রায় ৬০০ কোটি আর মূল্যবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে বছরে ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকার মতো লোকসান হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জ্বালানি বিভাগ বলছে, তারা এখনও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তেলের দাম যদি আবারও কমতে শুরু করে তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আর বাড়তে থাকলে বিকল্প চিন্তা করা হবে। সেক্ষেত্রে সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে জ্বালানি তেল বিক্রি করতে হবে, নয়তো মূল্যবৃদ্ধির কোনও বিকল্প থাকবে না।

বিপিসি’র একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সবকিছুই সরকারকে জানিয়েছি। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে বিপিসি সেটাই করবে। আমরা ভর্তুকিও পেতে পারি অথবা দামও কিছুটা বাড়তে পারে।’

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিমের পরামর্শ, দাম বাড়িয়ে জনগণের ভোগান্তি তৈরি না করে লাভের টাকা থেকে ভর্তুকি দিলেই পারে সরকার। ‘আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লে বিপিসির লোকসান হতেই পারে। সেক্ষেত্রে দাম বাড়ানো যেতে পারে। কিন্ত বাজারে দাম কমে গেলে তো লাভ হয়। দাম কমলে তো আর কোনও জিনিসের দাম কমাই না আমরা।’

বাংলাদেশ বছরে মাত্র ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করে। বাকি চাহিদা মেটাতে পরিশোধিত তেল আমদানি করা হয়। অপরিশোধিত তেলের দামের ওপর ভিত্তি করেই সব ধরনের জ্বালানির দাম নির্ধারণ হয়। সঙ্গত কারণে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিশোধিত তেলের দামও আনুপাতিক হারে বাড়ছে।

এখন বিদ্যুতের চাহিদা বেশি থাকায় তেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালাতে হচ্ছে। ফলে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি পেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বাড়বে। সুতরাং এর প্রভাবে বাড়তে পারে বিদ্যুতের দাম।

খবর: বাংলা ট্রিবিউন