ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: আমদানিকৃত ফল দ্রুত খালাস করতে পোর্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে সুপারিশ করবেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
সোমবার সকালে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে পাইকারি এবং খুচরা ফল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সভায় ফল আমদানিকারক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি রমজানে ৩৫ থেকে ৪০ মেট্রিক টন ফল প্রয়োজন হয়। বিদেশি ফল সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বরে হারভেস্ট করা হয়। তবে সে সময় আমরা এলসি করতে পারিনি। ব্যাংকগুলো আমাদের এলসি দেয়নি। পরে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনায় বসে এলসি করার অনুমতি দেয়। কিন্তু আমরা এলসি করলেও বিদেশি ফল ব্যবসায়ীরা আমাদের এলসি নিতে অস্বীকৃতি জানায়। বলে যে আপনারা এলসি করার তিন মাস পর মাল দেব, টাকা পাব। এভাবে আমরা মাল দেব না। তবে সম্পর্কের খাতিরে কিছু কিছু মাল দিয়েছে। কতগুলো এলসি করা হয়েছে তার সঠিক তথ্য এখন আমার কাছে নেই। কারণ এখনও আমাদের শীপমেন্ট শেষ হয়নি। আরও ১৫-২০ দিনের মধ্যে যদি আমরা সব শীপমেন্ট করতে পারি তাহলে আমি আশা করছি রমজানে ফলের বাজারে কোন সমস্যা হবে না।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণ বিদেশী ফল আপেল, কমলা, আঙ্গুরের এলসি দিচ্ছেই না। সাধারণ ব্যবসায়ীরা এলসি পাচ্ছে না। কিছু কিছু ব্যাংকের পরিচালকরা নিজেদের লোকদের এলসি করতে দিচ্ছে। সাধারণ যারা ফল ব্যবসায়ী, যারা ৩০-৪০ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছে তারা এলসি করতে পারছে না। নতুন কিছু ব্যবসায়ী যারা ব্যাংকের পরিচালকের আত্মীয়-স্বজন বা পরিচালক নিজে ব্যবসায়ী তারা এলসি করার সুযোগ পাচ্ছে। এখন ফল ব্যবসা প্রকৃত ব্যবসায়ীদের হাতে নেই। অন্যদের হাতে চলে গেছে।’
এলসি করা ফল পোর্টে আসার পর দ্রুত খালাস হলে রমজানে ফলের চাহিদা পূরণ হবে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে জানান এই ব্যবসায়ী।
সভায় কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পক্ষ থেকে ভোক্তাকণ্ঠের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, ‘রমজানে ফলের যে চাহিদা সে অনুসারে ফল পাওয়া যাবে কি না? এই সন্দেহের জায়গা থেকে যদি ফলের দাম বেড়ে যায় তাহলে পর্যাপ্ত ফল না পাওয়াকে একটি বড় অজুহাত হিসেবে নেবেন ব্যবসায়ীরা। তাই আমদানিকৃত ফল পোর্ট থেকে দ্রুত খালাসের ব্যবস্থা করতে হবে। পণ্য খালাসে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকলেও তা দ্রুত নিরসন করায় গুরুত্ব দিতে হবে। পণ্য খালাসে দেরি হলে ফলের দাম বেড়ে যাবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ভোক্তারা।’
ফল আমদানিকারকদের উদ্দেশ্যে করে ভোক্তা অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, ‘আপনাদের যে কন্টিনারগুলো আসছে বা কোন জাহাজে আছে বা পার্কিং এর আগেও যদি কোন জাহাজে থাকে, সেগুলোর তথ্য আমাকে দিলে আমি পোর্টে সরাসরি কথা বলবো। যাতে আপনাদের পণ্য দ্রুত এবং প্রথমেই খালাস হয়। আমরা এর আগেও পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে পোর্টের কাছে সুপারিশ করেছি। এবং পোর্টও আমাদের সহযোগীতা করেছে।’
ফলের দাম নিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশি ফল এবং বিদেশি ফলের দামের মধ্যে একটা সেতু বন্ধন রয়েছে। বিদেশি ফলের দাম বাড়লে সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশি ফলের দামও বাড়তে থাকবে। তখন বাজার পরিস্থিতি অস্থির হয়ে যাবে। গত বছর তরমুজ নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছিল, এ বছর যেন কোন ভাবেই এমন ঘটনা না ঘটে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফলের দাম গত বছরের তুলনায় এ বছর এমনিতেই বাড়বে। ডলার ইস্যূতেই এ বছর ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ দাম বাড়বে। এছাড়া জ্বালানি তেলেরও দাম বেড়েছে। সবই কিন্তু ফলের দামের উপর যুক্ত হবে। তবে এই মূল্যটা যাতে অযৌক্তিক না হয় সে বিষয়ে আমরা লক্ষ্য রাখবো।’
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘গত বছর আমরা আপেল, কমলা, আঙ্গুর, খেজুর আমদানি করতে সুপারিশ করেছিলাম। এ বছর এসব বিদেশি ফল আমদানি করতে হয়তো সুপারিশ করবো। তবে বেশি দামে থাইল্যান্ডের আমসহ এ ধরনের বেশি দামের ফল আমদানি না করার জন্য সুপারিশ করা হবে।’
মতবিনিময় সভায় এফবিসিসিআইসহ রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের ফল ব্যবসায়ীরা বক্তব্য রাখেন। .
এ সময় সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।