করোনার মুখে খাওয়ার পিল বিশ্বে প্রথম অনুমোদন দিল যুক্তরাজ্য

মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে করোনাভাইরাসের মুখে খাওয়ার পিল অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাজ্য। বৃহস্পতিবার মার্কিন ওষুধপ্রস্তুতকারক কোম্পানি মের্ক অ্যান্ড রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিকসের তৈরি করোনা পিল মলনুপিরাভিরের অনুমোদন দিয়েছে দেশটি।

যুক্তরাজ্যের ওষুধ এবং স্বাস্থ্যসেবা পণ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এমএইচআরএ) করোনার ‘গেম চেঞ্জার’ ওষুধ মলনুপিরাভিরের ব্যবহার শুরুর সুপারিশ করেছে। সংস্থাটি বলেছে, করোনাভাইরাসের পরীক্ষায় পজিটিভ ফল এবং উপসর্গগুলো প্রকাশিত হওয়ার পাঁচদিনের মধ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ওষুধের ব্যবহার করতে হবে

বিশ্বের প্রথম করোনার মুখে খাওয়ার অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ মলনুপিরাভির; যা যুক্তরাজ্যে অনুমোদন পেয়েছে। মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থাও এই ওষুধটির অনুমোদনের সবুজ সংকেত দিয়েছে। মলনুপিরাভিরের অনুমোদন দেওয়া হবে কি-না তা নিয়ে চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য উপদেষ্টাদের ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে।

ব্রিটেনে ল্যাগেভরিও নামে এই ওষুধটি বাজারে আসতে পারে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রথম দিকে ওষুধটি দেওয়া হলে সেটি ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের মৃত্যু বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারে। মুখে খাওয়ার এই ওষুধ করোনাভাইরাসের বংশবিস্তার অকার্যকর করতে সক্ষম বলে দাবি করেছে মের্ক অ্যান্ড রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিকস।

করোনায় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর সক্ষমতা মলনুপিরাভিরের রয়েছে বলেও জানিয়েছেন কোম্পানির কর্মকর্তারা।

মের্কের কর্মকর্তারা বলেছেন, মলনুপিরাভির মানবদেহে প্রবেশকারী করোনাভাইরাসের জেনেটিক কোডে সমস্যা সৃষ্টি করে ভাইরাসটির বংশবৃদ্ধি প্রায় স্থবির করে দেয়। আর এর ফলেই করোনারোগীর গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি এবং মারা যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

তারা বলেন, বাজারে বর্তমানে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলোর মূল কাজ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করা; ভাইরাসকে অকার্যকর করা নয়। এক্ষেত্রে মলনুপিরাভিরই বিশ্বে প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র ওষুধ, যেটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার সঙ্গে ভাইরাসের প্রজনন ক্ষমতা অকার্যকর করতে সক্ষম।

এ পর্যন্ত তিনটি মেডিকেল ট্রায়াল পার করেছে মলনুপিরাভির। প্রতিটি ট্রায়ালেই রোগীদের শারীরিক অবস্থার লক্ষণীয় উন্নতি দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানির কর্মকর্তারা।

গত মাসে মের্কের কাছ থেকে মলনুপিরাভিরের চার লাখ ৮০ হাজার কোর্স কেনার এক চুক্তিতে পৌঁছেছে ব্রিটেন। এক বিবৃতিতে মের্ক বলছে, ২০২১ সাল শেষ হওয়ার আগেই ১ কোটি কোর্স পিল প্রস্তুত করা হবে। তার মধ্যে ১০ লাখ ৭০ হাজার কোর্স পিল যুক্তরাষ্ট্রে সরবরাহ করতে ইতোমধ্যে মার্কিন সরকারের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। প্রতি কোর্স পিলের দাম পড়বে ৭০০ ডলার।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফল

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ৭৭৫ জন রোগীকে মলনুপিরাভির দেওয়া হয়েছিল। এতে দেখা যায়:

• ওষুধটি সেবনের পর যারা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মাত্র ৭.৩ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি হন
• তবে যাদের প্ল্যাসেবো বা অন্য ওষুধ দেওয়া হয়েছিল, তাদের হাসপাতালে ভর্তির হার ১৪.১ শতাংশ
• মলনুপিরাভির যারা নিয়েছিলেন, তাদের কেউই মারা যাননি
• কিন্তু যাদের প্ল্যাসেবো দেওয়া হয়েছিল, তাদের ৮ জন করোনায় মারা গেছেন

মের্ক অ্যান্ড রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিকস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাদের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের এই ফলের বিষয়ে জানিয়েছে। তবে ট্রায়ালের এই ফল এখন পর্যন্ত কোনও বৈশ্বিক স্বাস্থ্যবিষয়ক পিয়ার-রিভিউড সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়নি।

সূত্র: রয়টার্স।